মুন্সিগঞ্জ, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রম থাকলেও উনিশ শতকের পর জেলায় আশানুুরুপ ভোটব্যাংক তৈরি করতে পারেনি দলটি। নির্বাচনের আগে জেলা কমিটি নিয়ে মারামারি-ভাঙচুর, আন্দোলন সবশেষে আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। কিন্তু ভোটার বাড়াতে দৃশ্যত কোন কার্যক্রম নেই সংগঠনটির। সবশেষ দ্বাদশ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জের দুইটি আসন থেকে জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৫হাজার ভোটও পাননি। জামানত গেছে দুজনেরই।
এমন অবস্থাকে রাজনৈতিক সচেতনরা বলছেন- মুন্সিগঞ্জে জাতীয় পার্টির অবস্থা অনেকটা ‘খালি কলসি বাজে বেশি’ প্রবাদের মত।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৮৬ ও ৮৮সালের নির্বাচন ছাড়া সকল জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই জেলায় জামানত হারিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। মাঝে দুই একটি নির্বাচনে কোন কোন প্রার্থী ভালো ভোট পেলেও তাও হতাশাব্যঞ্জক। কিন্তু সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখা গেছে, প্রায় সব আমলেই। সবশেষ চলতি বছরের আগস্টে জেলা জাতীয় পার্টির নতুন কমিটির পরিচিতি ও আলোচনা সভায় পদ বঞ্চিতদের হট্টগোল ও ধস্তাধস্তিতে ৩ জন আহত হয়। পরে পদবঞ্চিত অংশটি জেলা কমিটি দেয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। যেটি এখনো আদালতে চলমান।
এবারের নির্বাচনে জেলার ৩টি আসনে প্রার্থী দিলেও সর্বশেষ দুইটি আসন থেকে লাঙল প্রতীকে লড়ে দুই প্রার্থী মোট ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৪০৬টি। ফলে, জামানত গেছে এই দুজনেরই। মুন্সিগঞ্জ ২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জেলা শাখার সভাপতি মো. জয়নাল আবেদিন মনোনয়ন ফরম জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে তিনি আর নির্বাচনেই অংশ নিতে পারেননি।
দেখা গেছে, ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ ১ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কে.এম. আমিনুল ইসলাম ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ জামাল হোসেন। এছাড়া বিলুপ্ত ঘোষিত মুন্সিগঞ্জ ৪ আসন থেকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নুর মোহাম্মদ। এছাড়া আর কোন সংসদ নির্বাচনে কাঙ্খিত ফলাফল পায়নি জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ ১ আসনে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩৬৩টি ভোট পড়লেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম পেয়েছেন মাত্র ৪৭০ ভোট। অন্যদিকে, মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭২৩টি ভোট পড়লেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ.এফ.এম. রফিকউল্লাহ সেলিম পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৯৩৬টি ভোট। ভোটের মাঠে প্রচার-প্রচারণায়ও দেখা যায়নি এই দুইজনকে।
প্রার্থীদের এমন ব্যর্থতার জন্য দলই দায়ী বলে মনে করেন মুন্সিগঞ্জ পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি আরিফুজ্জামান দিদার। তিনি বলেন, প্রার্থী মনোনয়নে ভুল ছিলো। বাড়িবাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া দুরের কথা মাঠের প্রচার-প্রচারণায়ও ছিলেন না তারা।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় রাজনীতির ধারাবাহিক দুর্বলতার কারনেই উনিশ শতকের পর আর মুন্সিগঞ্জে ভোট বাড়েনি জাতীয় পার্টির। বর্তমান জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় ব্যর্থ।
মুন্সিগঞ্জ পৌর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ বলেন, নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীদের কাছ থেকে কাঙ্খিত উৎসাহ-আমেজ না পাওয়ায় কেন্দ্রে যাননি তারা ভোটাররা। আবার যারা গেছেন পাশ করার সম্ভাবনা বেশি সেরকম প্রার্থীকে ভোট দিয়ে চলে এসেছেন। ফলে, ভোট কম পেয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
তিনি মনে করেন, আনাচেকানাচে দলের লোকজন আছে। তবে নেতারাই সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে নেই। উনিশ শতকের পর থেকে বিভিন্ন দলকে ‘প্রক্সি’ দেয়াই কাজ হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টির। এতে ধীরে ধীরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছেন ভোটাররা। আওয়ামী লীগের সাথে গেল ৪টি নির্বাচনে জোটে রয়েছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু এরপরও এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় না দেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন প্রার্থীরা। যার সার্বিক প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলাফলে।