মৃুুন্সিগঞ্জ, ০৭ জুন, ২০২২, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
সড়কটির প্রথম ২০০ মিটারের প্রশস্ত ২৪ ফিট হলেও বাকি পুরো অংশটাই ১৮ ফিট প্রশস্তের। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে প্রায়শই।
সড়কটি নির্মাণের সময়ই ড্রেনেজ ব্যবস্থার কথা সংশ্লিষ্টদের বলেছি। রাস্তার দুই পাশের পুকুর-ডোবা, নালা নির্বিচারে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। আমিও দাবি করি সড়কটি প্রশস্ত করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করার।
-মৃণাল কান্তি দাস, স্থানীয় সংসদ সদস্য।সড়কটি নির্মাণের সময় জমির মালিকরা জমি ছাড়তে রাজি হয়নি। তাই প্রশস্ততা বাড়ানো যায়নি, ড্রেনেজ নির্মাণও সম্ভব হয় নি। চাহিদা অনুযায়ী রাস্তা প্রশস্ত করা দরকার।
-মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, উপ সহকারী প্রকৌশলী, সদর উপজেলা এলজিইডি।
মুন্সিগঞ্জ হেডকোয়ার্টার থেকে মুক্তারপুর (পেট্রোলপাম্প) পর্যন্ত আরসিসি সড়ক। ২০১৭ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে সড়কটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মানিকপুর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সামনে থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে পেট্রোলপাম্প এলাকায় মুক্তারপুর-মাওয়া সড়কে গিয়ে।
সড়কটির প্রথম ২০০ মিটারের প্রশস্ত ২৪ ফিট হলেও বাকি পুরো অংশের পুরোটাই ১৮ ফিট প্রশস্তের। সরু এই সড়কটি নির্মাণের সময় সড়কের দুই সাইডে কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই যখন তখন সড়কটির অন্তত ৬ টি জায়গায় নিয়মিত পানি জমে থাকে।
অন্যদিকে সরু সড়কের কারনে সামান্য অটো-মিশুক চলাচলেই প্রায়শই যানজটের সৃষ্টি হয় সড়কটিতে।
আবার যত্রতত্র বাসা-বাড়ির বিভিন্ন সরাঞ্জামাদি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল সহ ইট-বালু ইত্যাদি সড়কের পাশে দেদারছে রেখে দিচ্ছেন স্থানীয়রা। সবমিলিয়ে দুর্ভোগের অন্ত নেই এই সড়কে চলাচলকারী নাগরিকদের।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, সামান্য বৃষ্টির ফলে পানি জমে রয়েছে সড়কটির বিভিন্ন জায়গায়। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত এসব পানি মাড়িয়েই চলতে হচ্ছে নাগরিকদের। এতে ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।
অন্যদিকে অটো-মিশুকের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল ও যত্রতত্র যাত্রী উঠানামার ফলে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যানজট লেগেই থাকছে সড়কটিতে। ফলে চলাচলকারীদের সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে এর মানসিক প্রভাবও পড়ছে।
সম্প্রতি সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মানিকপুর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সামনে যেখানে সড়কটি শুরু হয়েছে সেখানে বৃষ্টির পানি ও মানুষের ফেলা বাসাবাড়ির বর্জ্য মিশে নোংরা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর কয়েক মিটার দূরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও একই দৃশ্য দেখা যায়। প্রায় একই চিত্র নতুনগাও নুসরাত মটর, আচল বিউটি পার্লার ও এবিসি টাইলস সংলগ্ন সড়ক, পঞ্চসার চৌরাস্তা সংলগ্ন এ আর ক্লিনিক থেকে খানিক সামনে মেসার্স এস বি ট্রেডার্সের সামনের সড়ক, জোড় পুকুর পার বাইতুন নুর জামে মসজিদের সামনের সড়ক ও জোড়পুকুর পাড় ইলিয়াস মিয়ার বাড়ির সামনের সড়ক।
মানিকপুর এলাকায় পথচারী শরিফ মিয়া বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কটির দুপাশে পানি জমে থাকে। পানির কারনে সড়কটি দিয়ে চলাচল করা অসম্ভব হয় পরে। সড়কের পাশে ড্রেনেজ না থাকায় পানি রোদে না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এতে অনেক সময় ময়লা আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
দুর্গাবাড়ি এলাকার আসাদ পাইক বলেন, বৃষ্টির পানি জমে থাকায় নামাজ পড়তে যেতে খুব কষ্ট হয়। বাসা থেকে পরিষ্কার জামাকাপড় পরে বের হলে ও পরিষ্কার জামা নিয়ে নামাজ পড়া যায় না।
সরকারি হরগঙ্কা কলেজের শিক্ষার্থী শাওন রহমান বলেন, আমার বাড়ি টংগিবাড়ী উপজেলায়। প্রায় প্রতিদিনই এই সড়কটি দিয়ে আমাকে চলাচল করতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে পানি জমে। আর সরু হওয়ার কারনে প্রায়ই যানজটে সময় নষ্ট হয়। সড়কটি সংস্কারের মাধ্যমে প্রশস্ত করে রাস্তার পাশে ড্রেন করা প্রয়োজন। প্রায়ই রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় গাড়ির চাক্কার পানিতে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়।
জোড়পুকুরপাড় এলাকার দোকানদার মারুফ হোসেন জানান, দোকানের সামনে পানি জমে থাকায় কাস্টমার আসে না। যেদিন বৃষ্টি আসে সে দিন ৫শত টাকাও বিকি করতে কষ্ট হয়ে যায়। একটি ড্রেন থাকলে আমাদের অনেক ভালো হতো। মিশুক চালক মুন্না জানান, বৃষ্টি আসলেই এই রাস্তাটিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাস্তার পানিতে গাড়ির অনেক অংশে জং ধরে যায়। এতে কিছু দিন পর পর গাড়ির সমস্যা দেখা দেয়। রাস্তার পাশে একটি ড্রেন থাকলে এত সমস্যায় আমাদের পড়তে হতো না।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা এলজিইডি উপ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, সড়কটি নির্মাণের সময়ই জমির মালিকরা জমি ছাড়তে রাজি হয়নি। তাই প্রশস্ততা বাড়ানো যায়নি, ড্রেনেজ নির্মাণও সম্ভব হয় নি। আপাতত রাস্তার পাশে ড্রেনেজ করার পরিকল্পনা আমাদের নেই। তবে চাহিদা অনুযায়ী ভবিষৎয়ে রাস্তাটি প্রশস্ত করা দরকার।
মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেন, সড়কটি নির্মাণের সময়ই ড্রেনেজ ব্যবস্থার কথা সংশ্লিষ্টদের বলেছি। তখন তারা ড্রেনেজ নির্মাণ করতে চায়নি। রাস্তার দুই পাশের পুকুর-ডোবা, নালা নির্বিচারে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে সড়কে জমে থাকা পানি নামতে পারে না। বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আমিও দাবি করি সড়কটি প্রশস্ত করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করার এবং বর্তমান প্রয়োজনে মুন্সিগঞ্জ জেলা শহরের সাথে বাকি উপজেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে সড়কটি প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীত করার।