২০শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার | দুপুর ২:৪৫
মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটে চালু হতে যাচ্ছে বড় লঞ্চ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৫ এপ্রিল, ২০২২, তানজিল হাসান  (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধ থাকা ছোট লঞ্চগুলো বন্ধই থাকছে। শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলকারী ছোট লঞ্চগুলোকে দুর্ঘটনার দিন থেকে বন্ধ রেখেছিলো বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

এ রুটে ছোট লঞ্চ (সানকেন ডেক লঞ্চ) ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো লঞ্চ চলাচল। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) রোববার লঞ্চ মালিকপক্ষের সাথে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ে এক সভা করে লঞ্চগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ‘আমার বিক্রমপুর’ কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, ‘এ রুটে ছোট লঞ্চগুলো নিরাপদ নয়, ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সেগুলো চলাচল বন্ধ করে দেয়। রোববারের সভাতেও বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। আপাতত এ রুটে একটি সী-ট্রাক চলছে।’

লঞ্চ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে বলে আরও নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের সভাপতি মো. বদিউজ্জামান বাদল।

তিনি জানান, ‘সভায় আমাদেরকে বলা হয়েছে নারায়ণগঞ্জে সানকেন ডেকের লঞ্চ চলাচল করতে পারবে না। আমাদেরকে নতুন বড় লঞ্চ বানিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে, সেটা সম্ভব নয়। কারণ, নতুন বড় লঞ্চ বানানোর আর্থিক সামর্থ্য মালিকদের নেই। তাছাড়া, মাত্র ৪০ মিনিটের পথে যদি বড় লঞ্চ চালানো হয় তাহলে তা লাভজনকতো হবেই না, খরচও উঠবে না। নারায়গঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটে মোট ৭০ টি ছোট লঞ্চ চলে। এখানে প্রায় পাঁচশ’র মত কর্মচারী রয়েছে। সকলের পরিবারের চুলা বন্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের (মালিকপক্ষের) পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিগগির ঢাকাতে একটি সভা ডাকা হবে। সেখানে সারাদেশের সাতশ’ সানকেন ডেক লঞ্চের মালিকদের প্রতিনিধি থাকবে।’

বন্ধ করে দেওয়া লঞ্চগুলো পরবর্তী সময়ে চলাচলের কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘আমিতো আর কোনও সম্ভাবনা দেখছি না।’

এর আগে, ২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯ এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম.এল আফসার উদ্দিন ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহাণি এড়াতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ।

এই ঘটনার চার দিন পরে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ নৌপথে এসটি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত নামে সি-ট্রাক চালু করা হয়। এর একদিন পরে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথে ঢাকা থেকে আগত ‘এমভি নিউ আরিফ’ নামে দোতলা লঞ্চ চালু করা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জের ছোট লঞ্চগুলো অনিরাপদ বলে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এর আগে ২৯ মার্চ, নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নারায়ণগঞ্জের বন্দরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘প্রতি বছরই নৌ-যান চালকদের সঙ্গে আমরা আলোচনা ও বৈঠক করি। বারবার পরামর্শ দেওয়ার পরেও তারা আমাদের নির্দেশনা অমান্য করায় দুর্ঘটনা ঘটছে।’

ছোট লঞ্চ বন্ধের সুপারিশের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছিলাম ছোট ছোট লঞ্চগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে দেবো। কারণ এগুলো (লঞ্চ) এখন এই জায়গায় নিরাপদ নয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটা আমরা যথাসময়ে করতে পারিনি। এর জন্য আমাদের খেসারত দিতে হলো। ভবিষ্যতে এই বিধিনিষেধগুলো যেন সঠিককভাবে মানা হয় সেজন্য অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়েছি। নৌ-পথে দুর্ঘটনা হচ্ছে বা ভবিষ্যতে আরও হতে পারে। কিন্তু আমরা চাই না, অবহেলার কারণে আর কোনও প্রাণহানি হোক।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সাতটি রুটে প্রতিদিন ৭০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। সাতটি নৌপথ হলো নারায়ণগঞ্জ-হোমনা উত্তর থানা, নারায়ণগঞ্জ-মতলব থানা, নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ-শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-তালতলা ও নারায়ণগঞ্জ-বাঞ্ছারামপুর। তবে তালতলা ও বাঞ্ছারামপুর নৌপথে নাব্যতার কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। এসব নৌপথে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।

‘দুই একদিনের মধ্যে চালু হচ্ছে বড় লঞ্চ’

মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌ রুটে শিগগির চালু হচ্ছে বড় লঞ্চ। শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী কার্গো জাহাজের ধাক্কায় মুন্সিগঞ্জগামী এম এল আফসারউদ্দিন লঞ্চডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলকারী ছোট লঞ্চগুলোকে দুর্ঘটনার দিন থেকে বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ রুটে ছোট লঞ্চ ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তবে, সাধারণ যাত্রীদের চলাচলের জন্য একটি সী-ট্রাক চালু করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষ জানিয়েছে, শিগগির চালু করা হবে বড় লঞ্চ।

বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার ‘আমার বিক্রমপুর’ কে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এই রুটে যারা লঞ্চ চালাতে আগ্রহী তাদেরকে আমরা সার্চ করছি। আমরা সার্চ করে দুইজন পেয়েছি। দুই একদিনের মধ্যে এ রুটে বড় লঞ্চ চালু করা হবে। এগুলো আপার ডেক লঞ্চ। তবে, বিআইডব্লিউটিসির বর্তমানে সক্ষমতা নেই এ রুটে নতুন করে কোনো লঞ্চ বা সী-ট্রাক চালু করার। তাই প্রাইভেট লঞ্চই চালু করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি লঞ্চ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

তবে, কোন কোম্পানির লঞ্চ এবং লঞ্চের ধারণক্ষমতা কত তা বলতে পারেননি তিনি। ২০ মার্চ দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকায় এমভি রূপসী-৯ নামে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন ডুবে যায়। এ সময় লঞ্চের ১৫ থেকে ২০ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় চর সৈয়দপুর এলাকায় মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্জ এম এল আফসারউদ্দিন ডুবির ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় গঠিত তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা বলছেন, সামনের সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার চেষ্টা করা হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার রাত ৯ টা’র দিকে ‘আমার বিক্রমপুর’ কে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘এ ধরণের দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া সহজ কাজ নয়। অনেক জটিল বিষয়। অনেকের সাক্ষাৎকার নিতে হয়, জবানবন্দী নিতে হয়। তাছাড়া, আমাদের ওই একটি কাজই নয়, অন্যান্য আরও কাজের ফাঁকে এই কাজ করতে হয়। আমরা তদন্তের কাজটি আন্তরিকতার সাথে গুছিয়ে করছি। তাই একটু সময় লাগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সপ্তাহে সম্ভব নয়। আশা করি, সামনের সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাবে।’ প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রথমে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিলো। এছাড়াও লঞ্চডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মঞ্জুরুল হাফিজ এই কমিটি গঠন করেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ২০ মার্চ দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকায় এমভি রূপসী-৯ নামে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন ডুবে যায়। এ সময় লঞ্চের ১৫ থেকে ২০ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন। দুর্ঘটনায় মোট দশ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

 

error: দুঃখিত!