মুন্সিগঞ্জ, ২৮ এপ্রিল, ২০২২, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
দাম বাড়বে, এমন ধারণা থেকে মুন্সিগঞ্জে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শহর বাজারে বেশকিছু দোকানে গতকাল বুধবার বোতলজাত ৫ লিটারের সয়াবিন তেল ৮৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বোতলের গায়ে লিখা ৭৬৫ টাকা। এ বাজারে প্রতি লিটার তেল ১৭৫-১৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের মজুতে নেই সয়াবিন তেল। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, তেল সরিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহর বাজার, মুন্সিরহাট বাজার, মিরকাদিম বাজারসহ সড়কের মোড়ে দোকানগুলোতে গিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল না থাকার বিষয়টি জানা যায়। তবে কয়েকটি দোকানে মাত্র তিন থেকে চার বোতল করে সয়াবিন তেল দেখা গেছে। সয়াবিন তেল অর্ডার করলেও দোকানিরা তা সরবরাহ করতে পারছেন না। অনেক দোকানি বোতলজাত তেল বিক্রি করছেন না।
শহরের দোকানদার জালাল উদ্দিন জানান, প্রতিদিন আমার দোকানে কমপক্ষে ২০-২৫ লিটার বোতলজাত তেল বিক্রি হয়। অথচ ৩-৪ দিন ধরে পাইকারি দোকানদারদের কাছে তেলের অর্ডার দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় গত দুইদিন যাবত ক্রেতা এলেও তেল বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতারা তেল কিনতে এসে নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু মুন্সিগঞ্জ শহরে নয়, জেলার অন্যান্য উপজেলায় একই পরিস্থিতি। জেলার সব বাজারে বোতলজাত তেল সহজে মিলছে না।
মুন্সিরহাট বাজারের দোকানদার হাফেজ উদ্দিন জানান, আমার এখানে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ লিটার তেল বিক্রি হয়। অথচ আজ মাত্র আট লিটার তেল দোকানে তুলতে পেরেছি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কোম্পানিগুলো এখন অর্ধেক তেল সরবরাহ করছে। অথচ ঈদের আগে চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ধরনা দিয়েও চাহিদামতো বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
শহরের মাঠপাড়া এলাকার বাদল ইসলাম জানান, ঈদ এবং আগামী এক মাসের জন্য ৮ লিটার সয়াবিন তেল প্রয়োজন। বিভিন্ন দোকানে ঘুরেও এক বোতল তেল কিনতে পারিনি। অবশেষে এক পরিচিত দোকানীকে অনুরোধ করে ৫ লিটারের এক বোতল তেল ৮২০ টাকায় কিনেছি। তেল কিনতে এসে তেল না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন মালপাড়া এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, এটা আজব দেশ। হঠাৎ করে বাজার থেকে তেল উধাও হয়ে গেল, এটা কোনো কথা। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছে সয়াবিন তেল আছে। কিন্তু কেউ বিক্রি করছেন না। তেল মজুত রেখে মানুষকে জিম্মি করে তেলের দাম বাড়ানোর কৌশল শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের উচিত এসব অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
শ্রীপল্লী এলাকার দীন ইসলাম জানান, গতকাল সকালে বাজার থেকে ৫ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল কিনতে যাই। দোকানদার ৮৮০ টাকা দাম রাখে। তারপর বাসায় এনে দেখি বোতলের গায়ে ৭৬৫ টাকা দাম লিখা।
রেস্টুরেন্টের মালিক রাজিব হোসেন বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম যাই হোক রেস্টুরেন্ট চালাতে গেলে তেল তো লাগবেই। অথচ দোকানে দোকানে ঘুরে দু-তিন দিন ধরেও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আমার এক পরিচিত দোকানির কাছ থেকে প্রতি লিটার ১৮০ টাকা দরে পাঁচ লিটার খোলা তেল কিনেছি।’
ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, ঈদের আগে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির আশায় ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রি না করে যার কাছে যত বোতলজাত তেল আছে, তা দোকান থেকে সরিয়ে রেখেছেন। আবার বোতলের গায়ে দাম লেখা থাকায় অনেকে সেই তেল বিক্রি না করে বোতল খুলে লিটারপ্রতি ১৮০-২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তারা এই সুযোগে লিটার প্রতি ৪০-৫০ টাকা বাড়তি লাভ করছেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ জনগণ।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মুন্সিগঞ্জের সহকারি পরিচালক আসিফ আল আজাদ জানান, মিল থেকে ডিলাররা তেল পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। দোকানদাররা বোতলের গায়ে মুল্য যা লিখা সে দামেই বিক্রি করবে। কেউ যদি গায়ে লিখা দামের থেকে বেশি রাখে তবে এটি অপরাধ। এ ব্যাপারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা চলছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শিলু রায় জানান, এ ব্যাপারে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।