মুন্সিগঞ্জ, ১ আগস্ট, ২০২২, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের একটি মাত্র সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের একজন সরকারি চালকের বিরুদ্ধে বেসরকারি চালক দিয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা মাত্র একটি। আরেকটি পড়ে আছে অকেজো হয়ে। ফলে ব্যবসা করছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো।
সরকারি বেতনভুক্ত দুইজন চালক এই অ্যাম্বুলেন্সটি চালিয়ে থাকেন, তারা হলেন মো. মনির ও মো. জসিম। বিগত কয়েক মাস যাবত মো. জসিম তার কর্তব্যকালীন সময়ে নিজে অ্যাম্বুলেন্সটি না চালিয়ে বহিরাগত দুইজন চালক দিয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠান বলে অভিযোগ করেছেন সেবাগ্রহীতা সহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একজন কর্মচারি জানান, সরকারি বেতনভুক্ত অ্যাম্বুলেন্স চালক মোহাম্মদ জসিম বিভিন্ন সময়ে বহিরাগত ড্রাইভার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠিয়ে থাকেন। এবং রোগিদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন।
এমন অভিযোগ ওঠার পর আমার বিক্রমপুর সরেজমিনে গিয়ে ঘটনাটি অনুসন্ধান করলে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলে।
গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) আনুমানিক রাত ৮ টার দিকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. জসিম তার কর্তব্যকালীন সময়ে সে নিজে হাসপাতালে অবস্থান করলেও বহিরাগত চালক মো. মাসুদ নামের একজন চালক দিয়ে রোগীদের ঢাকা পাঠাচ্ছেন। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থান ত্যাগ করেন তিনি।
সরকারিভাবে বহিরাগত চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর এমন কোনো নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও নিয়ম বহির্ভূত এমন কর্মকান্ড মো. জসিম উর্ধ্বতন কর্মকতাদের চোখ ফাকি দীর্ঘদিন যাবৎ চালিয়ে আসছেন।
জানা যায়, মো. জসিম যাদের চালক হিসাবে রেখেছেন তাদের মধ্যে একজন এক চিকিৎসকের ড্রাইভার মো. মাসুদ ও অপরজন মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার ড্রাইভার মো. মনির।
এ বিষয়ে বহিরাগত চালক মো. মাসুদ এর কাছে মুঠোফোনের মাধ্যমে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন, মাঝে মাঝে তিনি মো. জসিমের ডিউটির সময় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের ঢাকা নিয়ে যান, তবে সব সময় তিনি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালান না।
এ বিষয়ে মো. জসিম বলেন, মাঝে মাঝে ছোট ছোট ট্রিপ হলে তিনি বহিরাগত ড্রাইভার দিয়ে রোগী পাঠান, কিন্তু সবসময় পাঠান না।
বহিরাগত চালক দিয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা জেলার সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের অনুমতি আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।
বহিরাগত চালকদের দিয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালানোতে দূর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে অনেক বেশী। তারা কি সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চালক কিনা তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। অনেক রোগী বা স্বজনরা জানেনই না, তারা কি সঠিক চালকের সাথে যাচ্ছেন কি না। আবার জানলেও বাধ্য হয়ে বহিরাগত চালকদের সাথেই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডা: আক্তার হোসেন বাপ্পি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে যদি তিনি এমনটি করে থাকেন তবে সেটি নিশ্চই অপরাধ করেছেন, এবং অপরাধকে প্রশ্রয় না দেয়াই উচিত।
মুন্সিগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, এই অভিযোগটি আমি কেবলমাত্র শুনেছি, এর যথাযথ প্রমাণ পেলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।