মুন্সিগঞ্জ, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংগঠনকে গতিশীল করতে চলতি মাসেই মুন্সিগঞ্জ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে। এমন জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের মাঝে। এরইমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা ও কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তৎপর সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রোফাইল তৈরিতে।
বর্তমান কমিটির নেতারাও জানিয়েছেন, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দিতে অনুরোধ জানিয়ে তারা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে চিঠি দিয়েছেন।
এদিকে, সম্ভাব্য সকল প্রার্থীরা নিজেদের রাজনৈতিক গ্রুপিং ও অন্তকোন্দলের কারণে এখনই মুখ না খুললেও ভেতরে ভেতরে প্রার্থী হতে সবরকম প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে।
গোপন প্রার্থীদের মধ্যে এক শীর্ষ নেতার ভাতিজা, বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতার এক আত্মীয়, এক কলেজ শাখার শীর্ষ পদস্থ নেতা ও এক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের আত্মীয়র নাম শোনা যাচ্ছে।
সাংগঠনিক সূত্রে জানা গেছে, ফয়সাল মৃধাকে সভাপতি ও ফয়েজ আহম্মেদ পাভেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৬ সালের ৪ঠা নভেম্বর ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয়। এরপর আট বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন করে সম্মেলন বা কমিটি হয়নি জেলায়। এর ফলে ঝিমিয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। তৈরি হয়েছে নিজেদের মধ্যে একাধিক গ্রুপ-দিন দিন বেড়েই চলেছে কোন্দল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সভাপতি ফয়সাল মৃধা জেলায় বিবদমান আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যকার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন ও তার পুত্র মেয়র ফয়সাল বিপ্লব অনুসারী। অন্যদিকে ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসের অনুসারী।
ফয়সাল মৃধা স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে সমানতালে সক্রিয় থাকলেও ফয়েজ আহম্মেদ পাভেলকে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে মৃণাল কান্তি দাসের বড় কোন কর্মসূচিতে শক্তভাবে দেখা যাচ্ছেনা।
জানা গেছে, নিজ বলয়ে গ্রুপিং-দ্বন্দ্বে এমপি মৃণালের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে পাভেলের। তাই তিনি এমপির কোন কর্মসূচিতে আগের মত অংশ নেননা। মাঝেমধ্যে নিজ উদ্যোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলেও তাতে এমপি অনুসারী কোন নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ দেখা যায় না। এর ফলে পদে থেকেও অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন পাভেল। তার অনুসারী একটি বড় অংশের ছাত্রলীগ কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে রাজনীতি বিমুখ হয়ে গেছেন। যার প্রভাব পড়ছে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের উপর। এই অবস্থা বিরাজমান থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর বিরুপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন একাধিক ছাত্রনেতা। তাই দ্রুত এই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি করেছেন তারা।
অন্যদিকে বর্তমান নেতৃত্ব বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন কমিটি দিলে তাদের মাঠ গোছাতেই ২-৩ মাস সময় লেগে যাবে। যেহেতু বর্তমান কমিটির মাঠ গোছানো আছে তাই সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে তারা ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী মহিউদ্দিন-বিপ্লব অনুসারী সাজ্জাত হোসাইন সাগর বলেন, জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। জাতীয় নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে দাপিয়ে বেড়ানোর কাজ করে ছাত্রলীগ। কিন্তু বর্তমান কমিটি দিয়ে তা সম্ভব নয়। দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি চায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী মৃণাল কান্তি দাস অনুসারী হাসিব মোহাম্মদ রাফিউ বলেন, আট বছর ধরে একই কমিটি নেতৃত্বে থাকলে সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। এরই মধ্যে অনেক নেতা বিদেশে চলে গিয়েছেন, কেউ কেউ বিয়ে করে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এমন অবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি আসা দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করতে সম্প্রতি আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে চিঠি দিয়ে আবেদন জানিয়েছি। তারা সম্মেলন ঘোষণা করলে আমরা তা আয়োজন করে নতুন নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবো। তবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে এই মুহুর্তে নতুন নেতৃত্ব আসলে মাঠ গোছাতেই তাদের ২-৩ মাস সময় লেগে যাবে। যেহেতু আমাদের মাঠ গোছানোই রয়েছে সেক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমরা শক্ত ভূমিকা রাখতে পারবো।
সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসের সাথে দূরত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সংসদ সদস্যের সাথেই আছি। তার পাশে থেকেই আগামীদিনে কাজ করতে চাই। রাজনৈতিক কারণে মনমালিন্য থাকতেই পারে কিন্তু খুব শীঘ্রই আমি তার সাথে সক্রিয় হবো।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত। তারপরও কেন্দ্রীয় কমিটি যদি নতুন নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব দিতে চায় সেটা তাদের ব্যাপার। তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদক যেহেতু একটা গ্রুপ মেইন্টেইন করেন তার উচিৎ ঝামেলা থাকলে মিটিয়ে ফেলা নাহলে এর প্রভাব অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনে পড়বে।
নেতৃত্বে আসতে পারেন যারা
মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের পরবর্তী নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ পর্যায়ে আলোচনা রয়েছে। একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী ও বিভিন্ন সূত্রে বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতার নাম উঠে এসেছে। তবে বেশিরভাগ প্রার্থী এখনই তাদের নাম প্রকাশ্যে আনতে চাননি। শুধুমাত্র দুই বলয়ের দুইজন বর্তমান ছাতনেতা তাদের নিজেদের প্রার্থী হওয়ার কথা এই প্রতিবেদকের কাছে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।
এরা হলেন-জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তার পুত্র মেয়র ফয়সাল বিপ্লব অনুসারী সাজ্জাত হোসাইন সাগর ও সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস অনুসারী হাসিব মোহাম্মদ রাফিউ। এই দুইজন ছাড়াও দুই বলয়ের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
এর মধ্যে এক শীর্ষ নেতার ভাতিজা, বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতার এক আত্মীয়, এক কলেজ শাখার শীর্ষ পদস্থ নেতা, এক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের আত্মীয় ও জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের একাধিক অনুসারীও রয়েছেন।
সাজ্জাত হোসাইন সাগর
মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের পরবর্তী কমিটিতে সভাপতি প্রার্থী হবেন বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি, মুন্সিগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র সাজ্জাত হোসাইন সাগর। মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের অনুসারী হেভিওয়েট ও জনপ্রিয় প্রার্থী সাগর। জানতে চাইলে সভ্যতার আলোকে তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে আমি পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তাছাড়া ২০১৬ সাল থেকে জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রয়েছি। বিগত দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আমার নেতৃত্বে শ্রীনগর থেকে গজারিয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে সক্রিয় ছিলো। অসংখ্য তৃণমূল কর্মীদের অনুরোধে আমি প্রার্থী হয়েছি। সম্মেলনের মাধ্যমে সকলের ভোটে আমি সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হবো বলে বিশ্বাস রাখি। সে লক্ষ্যেই এখন সকলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।
হাসিব মোহাম্মদ রাফিউ
মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের পরবর্তী কমিটিতে সভাপতি প্রার্থী হবেন বলে সভ্যতার আলোকে নিশ্চিত করেছেন বর্তমান কমিটির ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক হাসিব মোহাম্মদ রাফিউ। তিনি সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসের অনুসারী। ২০১৬ সাল থেকে জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে রয়েছেন রাফিউ। বেশ কয়েকদিন ধরেই রাফিউর নাম প্রার্থী হিসেবে নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনায় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাসিব মোহাম্মদ রাফিউ গতকাল বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় নতুন কমিটি কাছে নেতৃত্ব তুলে দেয়ার মাধ্যমে ঝিমিয়ে পড়া মুন্সিগঞ্জ ছাত্রলীগকে গতিশীল করার প্রয়োজন। আমার প্রত্যাশা, খুব দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে জেলায় নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে।