মুন্সিগঞ্জ, ৬ মে ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
গতকাল রোববার দিনগত রাতে মুন্সিগঞ্জে ৩০ মিনিটের ঝড়-শিলা বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ব্যাপক ফসলি জমি। বিশেষ করে, মেঘনা নদী তীরবর্তী পৌরসভার অন্তত ৩ এলাকায় ৫ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত ক্ষেতের বাঙ্গি পুরোপুরি বিনষ্ট হয়ে ক্ষতি কয়েক লাখ টাকা বলে দাবি কৃষকের।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, রোববার রাত ১২ টার দিকে শুরু হওয়া মাত্র ৩০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জেলা সদর ও গজারিয়া উপজেলার বাঙ্গি-সবজিসহ অন্তত ৩৩০ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেতের বাঙ্গি শিলাবৃষ্টিতে পুরোপুরি বিনষ্ট হয়ে গেছে।
মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার খাসকান্দি, রমজানবেগ ও চরকেওয়ার ইউনিয়নের চরমশুরা এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এছাড়াও সদর উপজেলার পঞ্চসার, রামপাল ইউনিয়নে ঝিঙ্গা, তীল, বোরো ধান, ভুট্টা করলা, চিচিঙ্গাসহ শাকসবজির ক্ষেত শীলাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে।
সোমবার সকালে সরেজমিনে পৌরসভার খাসকান্দি এলাকায় গেলে ক্ষেতের পাশে বিমর্ষ অবস্থায় বসে থাকা বাঙ্গি চাষী জয়নাল হাসানের সাথে দেখা হয়। তিনি জানান, ‘এবার ৮৬ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি আবাদ করেছি। মাত্র বাঙ্গিগুলো পরিপক্ক হতে শুরু করেছিলো। আর কিছুদিন পরে সেগুলো ক্ষেত থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করার কথা। কিন্তু রোববার রাতে সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার মাথায় হাত পড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতির শিকার আগে হইনি।’
প্রায় ৭৪ শতাংশ জমি লগ্নি করে এবছর মিষ্টিকুমড়া চাষ করেন চর রমজানবেগ এলাকার কৃষক আল আমিন বেপারী। গতকালের শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কুমড়া পাকা হলেও কেটে বিক্রি করে দিতে পারতাম। কিন্তু ক্ষেতের কুমড়া এখনো কাঁচা। এই অবস্থায় কেটে বিক্রি করাও সম্ভব নয়। শিলাবৃষ্টিতে যেসকল কুমড়া আক্রান্ত হয়েছে সেগুলো এখন ফেলে দিতে হবে। নাহলে পঁচে যাবে। এতে আমার ২ লাখ টাকার উপরে ক্ষতি হবে।’
বাঙ্গি চাষী সিরাজউদ্দিন জানান, ‘এবার ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ৩ বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছিলাম। শিলাবৃষ্টি পড়ে প্রায় সকল বাঙ্গির উপরের অংশ উঠে গেছে।’ তিনি বলেন,‘২০০৮ সালে সর্বশেষ এরকম শিলাবৃষ্টি হয়েছিলো। সেবারও কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৬ বছর পর আবারও ভয়াবহ শীলাবৃষ্টি হলো এই এলাকায়’।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘আমাদের মাঠ কর্মীদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পেয়েছি তাতে জেলা সদর ও গজারিয়া উপজেলার ৩৩০ হেক্টর জমির ফসল শীলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু বেঁচে যাবে আবার কিছু ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি জানান, ৬৫ হেক্টর জমির সবজি, ১৪০ হেক্টর জমির ভুট্টা, ১২০ হেক্টর জমির তীল, ৪২ হেক্টর জমির পাট, ৫ হেক্টর জমির বাঙ্গি, দেড় হেক্টর জমির মরিচ ও ২৭৪ হেক্টর জমির বোরো ধান আক্রান্ত হয়েছে।’ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাঙ্গির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকের বেগ পেতে হবে। এছাড়া অন্যান্য ফসলের ক্ষতিও ব্যাপক। তবে আর্থিক পরিমাণ নিরুপণ করা এখনি সম্ভব নয়।’