মুন্সিগঞ্জ, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি সহ অভিভাবকদের মারধরের অভিযোগে ক্লাস বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কলমা লক্ষ্মীকান্ত হাইস্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. তাজুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে এই বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক আচরণ, বোরকা পরে আসা ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও অভিভাবকদের ব্যাত্রাঘাত করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবি জানান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা।
এসময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া (১৬) বলেন, বোরকা পরে কোন ছাত্রী বিদ্যালয়ে এলে অধ্যক্ষ তাকে হেনস্তা করেন। কোনো নারী শিক্ষককে না ডেকে অধ্যক্ষ নিজেই হাতে থাকা বেত দিয়ে বোরকা উঁচু করে ধরে ভেতরে স্কুল ড্রেস আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখেন।
দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রী আইভী আজীম অভিযোগ করেন, কোন সময় কোন এনজিও বিদ্যালয়ে এসে মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক নিজেই ছাত্রীদের ন্যাপকিনের ব্যবহারবিধি শেখান এবাং সেই সুযোগে বিভিন্ন অশ্লীল কথা বলেন। অথচ বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ আরও পাঁচজন নারী শিক্ষক রয়েছেন।
প্রধান শিক্ষকের হাতে বেত্রাঘাতের শিকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সবুজ বেপারী বলেন, প্রধান শিক্ষক অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। প্রভাবশালী ব্যক্তি ছাড়া কাউকে পাত্তা দেন না তিনি।
আরেক অভিভাবক আজিম হাওলাদার বলেন, গেল বছরের ২৪ আগস্ট তাঁর নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সাদা সালোয়ারের পরিবর্তে সাদা চুড়িদার পরে বিদ্যালয়ে আসার অপরাধে দ্বিতীয় ক্লাসের পরে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এ খবর পেয়ে অভিভাবক আজিম অধ্যক্ষের কাছে ছুটে যান এবং তাঁর পক্ষে মেয়েকে দুই সেট স্কুল ড্রেস কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই বলে জানান। এরপর অধ্যক্ষকে তিনি তাঁর মেয়েকে ওই দিনের মত বাকি ক্লাসগুলো করার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করেন। এতে অধ্যক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে আজিমকে জোড়া বেত দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করেন। স্বামীকে রক্ষা করতে এসে আজিমের স্ত্রীও অধ্যক্ষের বেতের আঘাতের শিকার হন।
আরেক শিক্ষার্থী সামসুদ্দোহা বলেন, এ বছর দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষায় এক থেকে ছয়টি বিষয়ে অকৃতকার্যদের এসএসসি পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয় এবং ফরম পূরণ করার সুযোগ দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেন। ইউএনও মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সব বিষয়ে কৃতকার্য ৩৭ জন ও এক বিষয়ে অকৃতকার্যদের বাদ দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ না করার নির্দেশ দেন।
এর পরে প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্যদের কাছ থেকে নেওয়া কোচিং ফিস ফিরিয়ে দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণের টাকাও ফেরত চেয়েছে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি ঢাকায় গেছেন বলে জানান সহকারি প্রধান শিক্ষক সাহানা আক্তার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরে ব্যস্ততার অযুহাত দেখিয়ে কথা বলেননি।