১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ৭:৩৯
মুন্সিগঞ্জে শহীদ মিনার নেই ৫৯ শতাংশ বিদ্যালয়ে
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, রিয়াদ হোসাইন (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জ জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলে মোট ৭৮৯টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৩২৪টি বিদ্যালয়ে। বিপরীতে শহীদ মিনার নেই ৪৬৫টি বিদ্যালয়ে।

এতে বই-পুস্তকে ভাষা দিবস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করলেও সশরীরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার প্রায় পৌনে এক লাখ শিক্ষার্থী।

বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা, আরিফিন, সামিয়া, মুহিদুল, ঝর্ণা, অভি, বাধনসহ ১০ থেকে ১২ জনের সাথে কথা বললে তারা জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে তারা বইয়ে পড়েছেন। কিন্তু কখনো শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফুল দেওয়া হয়নি। তাদের মধ্যে কয়েকজনের কলাগাছ, বাঁশ, কাপড় ও কাগজ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, জেলায় ৬১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ২১৪টি বিদ্যালয়ে। সবচেয়ে বেশি সিরাজদিখান উপজেলার ১২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৮টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এছাড়া লৌহজং উপজেলায় ৭৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টি বিদ্যালয়ে, শ্রীনগর উপজেলায় ১১২টির মধ্যে ৩৪টি, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় ১১৫টির মধ্যে ৩৪টি, টংগিবাড়ী উপজেলায় ৯২টির মধ্যে ৩১টি এবং সবচেয়ে কম গজারিয়া উপজেলার ৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে মাত্র ১১টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে।

অন্যদিকে জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, জেলায় ১৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। সবচেয়ে বেশি সিরাজদিখান উপজেলার ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে ২৭টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। মুন্সিগঞ্জ সদরে ৪০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৪টি, শ্রীনগরে ৩০টির মধ্যে ১৮টি, টংগিবাড়ীতে ২৭টির মধ্যে ১৬টি, গজারিয়ায় ২৩টির মধ্যে ১৩টি, লৌহজং উপজেলায় ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেওয়ার জন্য মুন্সিগঞ্জে শতকরা মাত্র ৪১ শতাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এদিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, যেই সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে অধিকাংশ অবহেলা অযত্নের কারণে বেদীতে নোংরা-আর্বজনা পড়ে আছে। পাশের নির্মীয়মান স্থাপনার বালু স্তুপ করে রাখা হয়েছে শহীদ মিনারের বেদীতে।

শহীদ মিনারে বালু স্তুপের বিষয়ে জানতে চাইলে দিঘীরপাড় ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পাশে পানির ট্যাংক নির্মাণ কাজ চলছে। তাদের বহুবার শহীদ মিনারের কাছে বালু রাখতে নিষেধ করা হলেও স্থানীয় চেয়ারম্যানের থেকে অনুমতি নিয়ে এখানে বালু রেখেছেন।’

শহীদ মিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে পূর্বরাখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিদার হোসেন বলেন, ‘বাঙালি জাতির চেতনার প্রথম উন্মেষ ঘটে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে ও এর তাৎপর্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার স্থাপন অতি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.মাসুদ ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায় শিশুদের দেশপ্রেম তৈরি হয়। এসময় দেশের গৌরবময় স্মৃতিগুলোর সাথে শিশুদের পরিচিত করার প্রয়োজন। বই-পুস্তকে সীমাবদ্ধ না রেখে, সশরীরে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে এলজিডি, এলজিএসপি, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। যদি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে শহীদ মিনারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় তাহলে হয়তো প্রতিটি বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হবে।’

জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল হক ভূঞা বলেন, ‘শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোনো বরাদ্দ নেই। অধিকাংশ বিদ্যালয় নিজস্ব অর্থায়নে আবার কেউ কেউ উপজেলা ও জেলা পরিষদের অর্থায়নে শহীদ মিনার নির্মাণ করে। ফলে অর্থ সংকটের কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয় অনেক বিদ্যালয়। এমতাবস্থায় ভবিষৎ প্রজন্মের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করার প্রয়োজনে হলেও প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাঞ্ছনীয়।’

error: দুঃখিত!