মুন্সিগঞ্জ, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার-মোল্লাকান্দি এলাকায় রজতরেখা নদী লোহার খুঁটি দিয়ে আটকিয়ে সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। এতে ওই নদীতে গত ১৫ দিন ধরে নৌ-যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে নৌপথ ব্যবহারকারী স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে, আসছে আগামী আলু উত্তোলন মৌসুমে এই নদী পথ ব্যবহার করে হিমাগারে আলু রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মুন্সিগঞ্জ সদর ও টংগিবাড়ী উপজেলার হাজারো কৃষক। তারা বলছেন, শীঘ্রই নদী পথটি সচল না করলে এবারের মৌসুমে আলু পরিবহনে কৃষকের অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যায় হবে।
সেতুটির অবস্থান সদর উপজেলার চরকেওয়ার ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের সংযোগস্থল চরডুমুরিয়া এলাকায়।
মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চরডুমুরিয়া বাজার সংলগ্ন রজত রেখা নদীতে ১০৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ মিটার প্রস্থ্যের এ সেতুটির নির্মাণ শুরু হয়। চলতি বছরের আগষ্ট মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেতুটির নির্মানের দায়িত্বে রয়েছে সাগর বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চরডুমুরিয়া বাজার সংলগ্ন বেইলি সেতুর পাশেই দুই লেন বিশিষ্ট নতুন কংক্রিটের সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মানাধীন সেতুর দুই পিলারের মধ্যখানে শতশত লোহার খুঁটি বসানো হয়েছে। এতে করে এ নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ সময় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সেতুটি সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে নৌপথটি সদর ও টংগিবাড়ী উপজেলার কৃষক, ব্যবসায়ীদের জন্য আরো বেশি গুরুত্ব রাখে।
এ নৌপথ ব্যবহার করে সদর উপজেলার চরকেওয়ার, মোল্লাকান্দি, আধারা,শিলই ইউনিয়ন এবং টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়, যশলং, কামারখাড়া ইউনিয়নসহ শরিয়তপুর জেলার চরাঞ্চলে উৎপাদিত হাজারো টন আলুসহ শাক-সবজি পরিবহন করে হিমাগার,স্থানীয় বাজার, ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ এবং দেশের বিভিন্নস্থানে আনা-নেওয়া করা হয়। গত বছর সেতুটি নির্মাণ করতে গিয়ে নদীর দুপাশে অন্তত ৫০ ফুট করে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল। তখনই নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিল। নদীর যতটুকু অংশ বাকিছিল সেটাও এবার বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে সম্পূর্ণভাবে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। যে কারনে এ নৌপথ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বিপাকে আছেন। উৎপাদিত আলু হিমাগারে রাখা নিয়ে সঙ্কায় আছেন কৃষকরা।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর ও টংগিবাড়ী এলাকায় অধিকাংশ হিমাগারের অবস্থান হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা আলু সংরক্ষণ করতেও এ নদী পথটি ব্যবহার করে থাকেন। নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ করে সেতু নির্মাণের কাজ করায় কৃষকরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও দুশ্চিন্তার রয়েছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইড ব্যবস্থাপক মো.মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সেতুর মধ্যভাগে ৫ টি গার্ডার বসানো হবে।নিয়মিত কাজ করলেও কাজ শেষ করতে অন্তত চার মাসের মত সময় লাগবে। এদিকে ১৫-২০ দিন পরেই নদীর দুই তীরের আলু উত্তলোন শুরু হবে।
স্থানীয় কৃষক ফুঁলচান হাওলাদার বলেন, এ নদীটি ব্যবহার করে অল্প সময় ও কম খরচে সারা বছর উৎপাদিত শাক-সবজি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় আনা নেওয়া করি। আলু রোপন ও উত্তোলন মৌসুমে এ কাজ আরো বহুগুণ বেশি। ১৫-২০ দিন পরে নতুন আলু উঠতে শুরু হবে। নৌযান চলাচল করতে না পারলে জমির আলু জমিতে নষ্ট হবে। হিমাগারে নিতে বিকল্প পথ ব্যবহার করা হলে ২০ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা, দুঘন্টার রাস্তা ৮-১০ ঘন্টা লাগবে। তাই দ্রুত নৌপথ খুলে দেওয়ার দাবি সকল কৃষকদের।
সদরের মাকাহাটি এলাকার বাঁশ ব্যবসায়ি আয়নাল হক। তিনি এ নৌপথ ব্যবহার করে নিয়মিত বাঁশ আনা নেওয়া করেন। নদী বন্ধ থাকায় বাঁশ নিয়ে যেতে পারছিলেন না আয়নাল হক। এ নৌপথ ছাড়া বাঁশ আনার বিকল্প কোন পথ নেই তাঁর। সোমবার চরডুমুরিয়া বাজারের পাশে ট্রলার থেকে বাঁশ নিয়ে সেগুলো কয়েকজন নিয়ে স্তুপ করছিলেন তিনি। আয়নাল হক বলেন, ময়মনসিংহ থেকে ২৪ হাজার টাকা ট্রলার ভারা করে বাঁশ গুলো এনেছি। চরডুমুরিয়া থেকে মাকাহাটি ৫ কিলোমিটারের পথ। এ সামান্য পথ যেতে অতিরিক্ত আরো ২০ হাজার টাকা খরচঁ হবে।ভোগান্তির কথা বাদই দিলাম।
এমন ভোগান্তি আয়নাল হক, ফুলচানদের মত শতশত কৃষক ও ব্যবসায়ীর। তাদের দাবি নৌপথ উন্মুক্ত করার।
এ বিষয়ে জেলা আলু চাষী ও ব্যাবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখের পরে নৌপথ বন্ধ করুক। নদী এখন আটকালে আলু চাষী-কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগারের মালিকদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাগর বিল্ডার্সের কাছ থেকে সাব ঠিকাদারির দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন আমিনুল ইসলাম। নৌপথ বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের অনুমতি নিয়ে নদীতে খুঁটি দিয়ে আটকিয়ে কাজ করছেন তারা। গার্ডারের কাজ করতে হলে খুঁটি বসিয়েই করতে হবে।
মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুস হোসেন সাকিব বলেন, নদীতে খুঁটি বসিয়ে কাজের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। খুঁটি না বসালে গার্ডারের কাজ করা যাবে না। খুঁটি অপসারণের বিষয়ে আমাদের জানানো হয়েছে। এ মুর্হুতে খুঁটি সরানোও যাবে না। নৌপথ ব্যবহারকারীদের সাময়িক কিছু ভোগান্তি হবে। কাজ শেষ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।