মুন্সিগঞ্জ, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলায় রহস্যজনকভাবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় প্রথমে শিশু নিখোঁজ হচ্ছে এবং পরে পাওয়া যাচ্ছে তাদের আঘাতপ্রাপ্ত লাশ।
গত কয়েকমাসের ব্যবধানে উপজেলায় ঘটে যাওয়া দুইটি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দুইটি ঘটনা প্রায়ই কাছাকাছি ধরনের। এই দুই ঘটনায় নিহত দুই শিশুই তাদের মা-বাবার একমাত্র সন্তান। আদরের সন্তানকে হারিয়ে পরিবারগুলো এখন দিশেহারা। পুলিশ প্রশাসনের কাছে এসব ঘটনা উদঘাটনের আকুতি পরিবারগুলোর।
গেল বছরের ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার বেতকা ইউনিয়নের কুন্ডেরবাজার এলাকায় নানাবাড়ি থেকে হারিয়ে যায় ছেলে শিশু ওয়ালিদ হাওলাদার (৩)। একদিন পর তার লাশ পাওয়া যায় ধানক্ষেতে। শরীরে পাওয়া যায় একাধিক জখমের চিহ্ন। সর্বশেষ গত ২৮ জানুয়ারি উপজেলার ধীপুর ইউনিয়নের রাউৎভোগ এলাকায় নিজ বসতবাড়ি থেকে মেয়ে শিশু তাকওয়া আক্তার ফাতেমা (২) নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ১৪দিন পর শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বাড়ির পাশের পুকুরপাড়ের ঝোপে ডান হাত ও বাম পা কাটা অবস্থায় ফাতেমার মরদেহ পাওয়া যায়।
এই ঘটনার পর এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব ঘটনার কোন কুল-কিনারা করতে না পারায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল বছরের ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার বেতকা ইউনিয়নের কুন্ডেরবাজার এলাকায় নানাবাড়ি থেকে হারিয়ে যায় আউটশাহী ইউনিয়নের কাইচাইল গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী সালাউদ্দিন- সাকিবা দম্পতির একমাত্র ছেলে সন্তান ওয়ালিদ হাওলাদার (৩)। পরদিন সন্ধ্যায় উপজেলার কুন্ডেরবাজারের পাশে জনৈক জয়নালের বাড়ির পাশের ধানক্ষেতে তার লাশ পাওয়া যায়। এসময় তার শরীরে ছিলো একাধিক আঘাতের চিহ্ন। ময়নাতদন্তেও প্রমাণ মিলে আঘাতের। এ ঘটনায় নিহত ওয়ালিদের পরিবার টংগিবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। তবে ওয়ালিদ কিভাবে খুন হলেন, কারা তাকে খুন করলো সে বিষয়ে এখনো কোনকিছু জানা যায়নি। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে বলে টংগিবাড়ী থানার ওসি জানান।
গেল শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা’র দিকে উপজেলার ধীপুর ইউনিয়নের রাউৎভোগ এলাকায় নিখোঁজের ১৪ দিন পর বাড়ির পাশের পুকুরপাড়ের ঝোপ থেকে নূরে আলম মোড়ল-পিয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে সন্তান তাকওয়া আক্তার ফাতেমা (২) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি নিজ বসতবাড়ি থেকে ফাতেমা নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের কয়েক দিন পর ফাতেমাকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেশী দুই ব্যক্তি পৃথক ফোন নাম্বার থেকে ফাতেমার বাবা নূরে আলম মোড়লকে ফোন করে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। বিষয়টি পুলিশকে জানালে মোবাইল ফোন নাম্বার অনুসরণ করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি টংগিবাড়ী বাজার থেকে মুক্তিপণ দাবী কারী আলী নুর স্বপ্না (৩৫) এবং এর আরও ২দিন পর মোক্তার হোসেন (৫২) নামে আরেকজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের শেষে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। আটক দুইজনকে দুইদিনের রিমান্ডে এনে নিহত ফাতেমার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তারা শিশুটির বিষয়ে কোন তথ্য দেয়নি পুলিশকে। পুলিশও ঘটনার কোন কুল-কিনারা করতে পারেনি।
লাশ উদ্ধারের পর নিহত ফাতেমার মা পিয়ারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে মুক্তিপণ দাবী কারী ওই দুই ব্যক্তিই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছে। এরা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। এদের সাথে আরও অনেকে জড়িত। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে দাবি তারা যেন আমার মেয়েকে হত্যকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে।
এদিকে রোববার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহত ফাতেমার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হলে আছর নামাযের পর জানাজা শেষে স্থানীয় ঝিনাইসার কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন নিশ্চিত করেন, ময়নাতদন্তে শিশুটির ডান হাত ও বাম পা কাটা পাওয়া গেছে।
টংগিবাড়ী থানার ওসি রাজিব খান জানান, পূর্বের অপহরণ মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তর করা হবে। জেলহাজতে থাকা গ্রেপ্তার দুইজনকে পুনরায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দ্রুতসময়ের মধ্যে ঘটনা উদঘাটন ও এ ঘটনার সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না সে বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ।