১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার | ভোর ৫:১২
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মুন্সিগঞ্জে যাত্রী সেজে অটোচালক খুন, খুনী সহ আটক ৮
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১ অক্টোবর, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় অটোচালক মো. আশরাফুল ইসলামকে (৩০) গলা কেটে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় খুনী সহ এই চক্রের সাথে জড়িত আরও ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

এদের বিরুদ্ধে লৌহজং থানায় বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকালে নিহতের বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

আটক ৪ জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ও বাকি ৪ জন ছিনতাই করা অটো কেনা-বেচায় জড়িত থাকায় পৃথক ধারায় মামলা হয়েছে।

লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন এ খবর নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, বুধবার বিকালে নিহতের বাবা মামলা দায়ের করেছেন। জড়িত সবাই এই ঘটনায় আটক হয়েছে। নিহতের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। শাহবাগ থানা পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে। পুলিশের কাছে তারা প্রাথমিকভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে আটক ব্যক্তিরা। ব্যবহৃত ছুরি ও অটোরিকশা উদ্ধার হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) আসাদুজ্জামান বলেন, অটোরিকশা চুরি করে দালাল আমির হোসেনের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ীর তোফাজ্জলের কাছে তা ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তোফাজ্জল লৌহজংয়ের মসদগায়ের সবুজের কাছে সেটি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সে রাতেই সবুজ আবার কাজলের কাছে ৭০ হাজার টাকায় অটোরিকশাটি হস্তান্তর করে। পুলিশ লৌহজংয়ের কলমা গ্রামের কাজলের বাড়ি থেকে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধার করে। লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, মৃত্যুর আগে মাটিতে আশরাফুলের লিখে যাওয়া নাম ধরেই হাসান ও রাজেনকে পুলিশ তাত্ক্ষণিক গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে আসে পুরো ঘটনা। বুধবার সকালে কলমা থেকে ছিনতাই করা অটোরিকশা ও গোয়ালীমান্দ্রা খাল থেকে হত্যায় ব্যবহূত ছুরি উদ্ধার করা হয়।

আশরাফুলের মামা দেলোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। বুধবার বিকালে আশরাফুলের লাশ শ্রীনগরের বাঘড়ার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরের বাঘড়ার থেকে রুবেল আর আকরাম লৌহজংয়ে যাওয়ার জন্য আশরাফুলের অটোরিকশা ভাড়া করে। পরে শ্রীনগরের বেজগাঁও পুরোনো ফেরিঘাট এলাকা থেকে অটোতে ওঠে হাসান ও রাজেন। পরে অটোটি লৌহজংয়ের কারপাশার নির্জন স্থানে এনে ঘাতকরা তাকে জবাই করে অটো নিয়ে পালিয়ে যায়।

তাকে গলা কাটা অবস্থায় স্থানীয়রা নিয়ে যায় লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে আবার জ্ঞান ফেরে। এই সময় কাগজে কলম দিয়ে লিখেন শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল নম্বর। এর পরই মোবাইলে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। এ সময় আশরাফুল আবারও কলম দিয়ে কাগজে ঘাতকদের নাম লিখেন। পরে ঢাকায় চিকিত্সার জন্য নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

আটককৃতরা হলো, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত মো. রুবেল (২৯), মো. আকরাম মোল্লা (২১), হাসান (২২) ও মো. রাজেন (২৪)। ছিনতাই অটোরিকশাটি কেনাবেচায় জড়িত থাকার দায়ে আটককৃতরা হলো, আমির বেপারি (৪০), ইমরান ওরফে তোফায়েল (৪০), সবুজ শেখ (৩০) ও কাজল শেখ (৩১)।

এদিকে, বুধবার দুপুর ১টায় মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। চালকের গলায় গামছা পেঁচিয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে এবং গলায় চাকু দিয়ে সরাসরি জখম করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় রুবেল, আকরাম, হাসান ও রাজেন। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৯টায় সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে পুলিশ হাসানকে শ্রীনগরের বাঘড়া গ্রাম থেকে আটক করে। এরপর বাকিদের আটক করা হয়। মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত অভিযুক্তদের আটকে অভিযান চালায় পুলিশ। অটোরিকশা ও ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, আহত অবস্থায় অটোচালক আশরাফুল দুই জন ঘাতকের নাম মাটিতে লিখে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে, শুধু সে ক্লু থেকেই আসামি আটক করা হয়েছে এমনটি নয়। পুলিশের কয়েকটি টিম এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু যোগ করে অভিযান চালায়।

error: দুঃখিত!