মুন্সিগঞ্জ, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তবে ঐ যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন বলে পরিবার ও পুলিশ জানিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা’র দিকে উপজেলার মধ্য বাঘড়া এলাকায় বাঘড়া দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার আশপাশ থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক যুবকের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দেড় বছর ধরে পরিবারের সাথে তার তেমন যোগাযোগ ছিলোনা। সে মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে। ২০২০ সালের আগে তিনি কাকরাইল মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। পরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে পরিবার থেকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়।
আটক মো. আবু জর বিন আলী (৩৫) মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ছিটিখান এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকার কাফরুলের ইব্রাহিমপুরে পরিবারের সাথে থাকতেন। আবু জরের পিতা আলী আকবর বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ২০০৫ সালে অবসরে যাওয়ার আগে তিনি মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিন মোড়ল জানান, গতকাল ভোরে লোকটি বাঘড়া বড় মাদ্রাসার মসজিদে ফজরের নামায পড়ে। নামাযের পর সে মাদ্রাসায় বসে খুব সুন্দর করে শুদ্ধস্বরে কোরআন শরীফ পড়েন। এরপর জুমার নামাযের সময় মাদ্রাসার গেটের সামনে বসে সে কাগজে-কলমে কিছু একটা লিখছিলো। সেসময় তাকে দেখে সবাই গোয়েন্দা সংস্থার লোক ভাবেন। সন্ধ্যার পরে ঐ ব্যক্তি বইসদৃশ একটি বস্তু নিয়ে মাদরাসার একটি টয়লেটে ঢোকেন। বাইরে থেকে মাদরাসার ছাত্ররা ডাকাডাকি করলেও তিনি সাড়া না দেয়ায় মাগরিবের আযান দিলে সবাই নামায পড়তে চলে যান। নামায শেষে ঐ টয়লেটে মাদরাসার ছাত্ররা গিয়ে দেখতে পান ভেতরে কেউ নেই, নিচে কোরআন শরীফের ছেড়া পাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। একইসময় মাদরাসার আরেক ছাত্র (কমবয়স্ক) দেখতে পায় পুকুরপাড়ে ঐ ব্যক্তি কোরআন শরীফের পাতা ছিড়ে ফেলছেন। পরে ঐ ছাত্র সেগুলো কুড়িয়ে মাদরাসার প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দেন। গতকালকে মাদরাসায় ওয়াজ-মাহফিল হচ্ছিলো। এরপর বিষয়টি আমি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানাই। তিনি থানায় জানালে পুলিশ এসে তাকে মাদরাসার অদূরে কামালের দোকানের সামনে থেকে আটক করে নিয়ে যায়৷
শাহিন মোড়ল জানান, লোকটি খুব সুন্দর করে শুদ্ধভাবে কোরআন শরীফ পড়েছে। তাকে দেখে মনে হয়েছে সে মানসিক ভারসাম্যহীন।
শ্রীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল হোসেন সরকার জানান, গতকাল ঐ যুবককে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশকে জানালে পুলিশ তাকে থানা হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। থানায় জিজ্ঞাসাবাদ ও ঐ যুবকের পরিবারের সাথে কথা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, সে মানসিক ভারসাম্যহীন।
তিনি বলেন, তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় এ নিয়ে অধিকতর খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত বলা যাবে।