মুন্সিগঞ্জ, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ীতে ৩ বছর আগে ব্যাংকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে খু.ন হন উপজেলার হাসাইল ইউনিয়ন পরিষদের সহকারী উদ্যোক্তা আব্দুল বারেক শেখ (৪৪)। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে ৩জনকে আটক করে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। ওই ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম শেষে ৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কাজী আবদুল হান্নান এই রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় তারা আদালতেই উপস্থিত ছিলেন।
যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা হলেন, লৌহজং উপজেলার উত্তর মসদগাঁও গ্রামের মৃত নাজির আহমেদ শিকদারের ছেলে মিলন শিকদার (৩৪), একই এলাকার মিলন খানের ছেলে জুয়েল শেখ (২৮) ও মৃত বাদশা মোড়লের ছেলে মো. নাজির হোসেন (৩৬)।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি সকালে বারেক শেখ বাসা থেকে হাসাইল ইউনিয়ন পরিষদের উদ্দেশ্যে বের হন। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে টংগিবাড়ী থানার পুলিশ সদস্যরা নিহত বারেক শেখের বাবা মোস্তফা শেখকে জানায় বারেক শেখের মরদেহ বলই থেকে তৌলকাইগামী ব্রিজের মাঝামাঝি রাস্তায় থাকা বিদ্যুতের খুটির পাশে পড়ে আছে।
পরে পুলিশ এ ঘটনা উদঘাটনে নেমে জানতে পারে, সাজাপ্রাপ্ত ৩ আসামি লৌহজং উপজেলা হতে পাশের টংগিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও বাজারে মোটরসাইকেল যোগে এসে ব্যাংক এশিয়ার সামনে অবস্থান নেয়। তাদের একজন ব্যাংকে ঢুকে বেশী টাকা উত্তোলনকারী হিসেবে বারেক শেখকে সনাক্ত করে। অপর দুই জন ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেয়।
ব্যাংকের ভেতরের কাজ শেষে নিহত আবদুল বারেক শেখ কাঁধে একটি স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে দ্রুত বের হয়ে অটো রিকশা নিয়ে টংগিবাড়ী বাজারের দিকে রওনা হন। আসামীরাও মোটরসাইকেল নিয়ে তাকে অনুসরণ করে এগোতে থাকেন। বারেক শেখ বলই থেকে তোলকাইগামী ব্রীজের মাঝামাঝি নিরিবিলি জায়গায় পৌঁছালে আসামীরা অটো রিক্সা থামিয়ে তাকে নামতে বলেন।
বারেক শেখ এতে অস্বীকৃতি জানালে আসামি ফয়সাল তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে নিহতের কাঁধের বাম পাশে আঘাত করেন। বারেক শেখ অটোরিক্সা থেকে পড়ে গেলে আসামী মিলন তার পিঠের বাম পাশে আঘাত করে সাথে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বারেক শেখের।
পরে ওই ঘটনায় বারেক শেখের বাবা মোস্তফা বাদী হয়ে টংগিবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করলে ওই মামলায় আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও মোট ১৯জনের সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে ৩বছর পর মঙ্গলবার মামলার রায় প্রদান করে আদালত।
রায়ে ৩ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড। পাশাপাশি আরও দশ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক কে.এম রিয়াজুল জানান, সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে মামলার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। প্রথমে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামীদের বিভিন্ন কৌশলে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদেরই দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি এবং খেলনা পিস্তলসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আসামিরা ৩ জনই আদালতে বিচারকের কাছে ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।