মুন্সিগঞ্জ, ৫ জুলাই, ২০২১, গজারিয়া প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে পানির তোরে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বড় রায়পাড়া গ্রামে মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের মাঝে বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘরের কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে।
ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েকটি ঘর। এমতাবস্থায় কাজের মান এবং ঘর নির্মাণের স্থান নির্বাচন নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
গজারিয়া উপজেলা প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, গৃহহীন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১৫০টি ঘর নির্মাণ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। এর মধ্যে বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বড় রায়পাড়া গ্রামে ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় ২৮টি ঘর নির্মাণ হয় মার্চ মাসের শেষ দিকে। নির্মাণ শেষে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়। এখনো সবগুলো ঘরে বসবাস শুরু করেননি উপকারভোগীরা।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে গত শুক্রবার সকালের দিকে ২৭ নাম্বার ঘরের বারান্দার কিছু অংশ এবং একটি কলম ভেঙে পড়ে। ঘরের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। পাশের ২৮নম্বর ঘরটিরও একই অবস্থা। ঘরের তলায় মাটি সরে যাওয়ার কারণে যে কোন মুহূর্তে সেটা ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে একই সারির অন্তত ৬টি ঘর।
ভেঙে যাওয়া ঘরটির মালিক ওমর আলী। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও স্থান নির্বাচন এবং কাজের মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। অধিকাংশ ভবনের দেয়াল থেকে উঠে আসছে প্লাস্টার, কয়েকটি ভবনের মেঝে থেকে উঠে আসছে কংক্রিট। সরকারি অনেক খাস জমি থাকা সত্ত্বেও গজারিয়া উপজেলার অধিকাংশ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে নদীর ধারে। যেকোনো সময় বন্যা এবং বৃষ্টিপাতে যেগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। বড় বায়পাড়ায় ২৮টি গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় তার মধ্যে পাঁচটি পরিবার সেখানে থাকছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, তারাও এখানে নিয়মিত থাকবেন না শুধুমাত্র প্রশাসনের ভয়ে দিনের বেলায় এসে ঘোরাফেরা করেন। এখানে না থাকলে ঘর বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে এই ভয়ে থেকে অনেকে সকালে রান্না করে নিয়ে আসেন দুপুরে তাকে বিকালে অন্যত্র চলে যান। বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং রান্না করার ব্যবস্থা না থাকায় আপাতত এখানে থাকা সম্ভব নয় বলে জানান তারা।
গজারিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির ফলে একটি ঘরের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় তার কিছু অংশ ও একটি কলম ভেঙে পড়েছে। ইতিমধ্যে তার দপ্তর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে একটি ঘরের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা মেরামতের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এসব ঘরের ভিত্তি বেশি গভীর নয় বিধায় এ সমস্যাটি হয়েছে। এসব ঘর নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি গাইডলাইন মেনে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েকটি পরিবার সেখানে থাকা শুরু করেছে শীঘ্রই সেখানে বিশুদ্ধ পানিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে যাতে সবগুলো পরিবার সেখানে থাকা শুরু করতে পারে।