১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মঙ্গলবার | রাত ৮:৪০
মুন্সিগঞ্জে বাবাকে হ*ত্যা-র অভিযোগ ছেলেদের বিরুদ্ধে!
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১০ এপ্রিল ২০২৩, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জ সদরে পারিবারিক কলহের জের ধরে নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ওই ২ জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এছাড়াও এ ঘটনায় নিহতের দুই পুত্রবধূ ও বোনসহ সর্বমোট ৫ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার ভোরে খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের মাথায় ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে নিহতের তিন ছেলেকে পাওয়া যায়। এর মধ্যে একজন দাবি করেন, সে তার বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে মেঘনা নদীতে গেলে সেখানে কয়েকজন জলদস্যু এসে তাদের কাছ থেকে মাছ এবং মাছ ধরার জাল ছিনিয়ে নিতে চায়। তার বাবা বাঁধা দিলে তাকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে নিহতের বোনের দাবি, ছেলেরা মিলে তাদের বাবাকে হত্যা করেছে। ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় নিহতের বড় ছেলে মো. সুমন হাওলাদার ও আরেক ছেলে মোহাম্মাদ আলীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি জানান, এ বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

মৃত নুরুল ইসলাম হাওলাদার সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের ভাষানচর মিজিকান্দি এলাকার মৃত সুবেদ আলীর ছেলে। পেশায় কাঠমিস্ত্রী নুরুল ইসলামের স্ত্রীসহ পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এম এ কালাম প্রধান জানান, সোমবার ভোর সোয়া চারটার দিকে মৃত অবস্থায় নুরুল ইসলাম নামের ঐ ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিলো।

নিহত নুরুল ইসলামের ছোট বোন হামিদা বেগমের অভিযোগ, কয়েকদিন ধরে আমার ভাবি ও ভাতিজারা আমার ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিলো। কয়েকদিন আগে আমার ভাই জমিতে ধান লাগায়। কিন্তু তার ছেলেরা কেউ কোন কাজ করতো না। কয়েকদিন ধরে তিনি একাই জমির ধান কাটছিলেন। এ নিয়ে নুরুল ইসলাম তার ছেলেদের গালিগালাজ করেন। ভাবিও ভাতিজাদের পক্ষ নিয়ে ভাইকে গালিগালাজ করেন। পরে ভাই-ভাবীর মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন ভাই, ভাবিকে মারধর করেন। এ ঘটনা শুনে তার ছেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ভাইকে মারধর করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। বিষয়টি আমার ভাই আমাকে জানিয়েছিল। শুনেছিলাম এ নিয়ে ভাই থানায়ও গিয়েছিল। আমার ভাই রাতে আমাকে মোবাইল ফোনে বলেছিলো, বাড়িতে গেলে তার ছেলেরা তাকে মেরে ফেলবেন। স্থানীয় মাতব্বরদের ভরসায় তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। ভোরবেলা ছোট ভাতিজা সুজন ফোন করে জানালো তার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

এদিকে, নিহতের ছেলে সুমন হাওলাদার পুলিশের কাছে আটকের আগে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তার বাবা রোববার গভীর রাতে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যায়। ভোরে মাছ ধরে ফিরে আসার সময় জলদস্যুরা তার নৌকায় হামলা চালিয়ে নগদ টাকা, মাছ ও জাল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় বাঁধা দিলে জলদস্যুরা লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি নুরুল ইসলামকে আঘাত করলে সে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে নদীতে পড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে, নিহতের বোন হামিদা বেগম বলেন, আমার ভাই একজন কাঠমিস্ত্রি। সে কখনো মাছ ধরতেন না। তাকে হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য মাছ ধরার কথা বলা হচ্ছে। আমার ভাইকে আমার ভাতিজারা তাদের মামাদের সহযোগিতা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

error: দুঃখিত!