মুন্সিগঞ্জ, ৮ এপ্রিল, ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পূর্ব বিরোধ ও পাওনা টাকা নিয়ে দ্বন্দের জেরে হামলা করে কুপিয়ে এক বৃদ্ধকে খুন করা হয়েছে। এসময় পুলিশের উপর হামলা ও ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে দিঘিরপাড় বাজারের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
নিহত সোহরাব খান (৬০) দিঘিরপাড় এলাকার নুর মোহাম্মদের পুত্র। ঘটনার সময় তার ছেলে জনি খান (৩৫) গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ ও পরিবার জানায়, নিহত সোহরাবের সাথে তার বেয়াই ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ভুলু খান ওরফে ভোলা মেম্বারের মালয়েশিয়ায় ব্যবসা সংক্রান্ত দেনাপাওনা ছিলো। এছাড়া দিঘীরপাড় গরুর হাট ইজারাকে কেন্দ্র করেও দ্বন্দ্ব ছিলো। সোমবার দুপুরে উভয়পক্ষের লোকজন গরুর হাট সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। এসময় ভোলা মেম্বারের দুই ছেলে রিজভী ও রিহানসহ ৭-৮ জন সোহরাব ও জনির উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালালে দুজনেই গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক সোহরাব খানকে মৃত ঘোষণা করেন। জনির অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
নিহত সোহরাবের ভাই আব্দুল মান্নান জানান, ‘দিঘীরপাড় বাজার -সংলগ্ন গরুর হাটের ইজারা নিয়ে খান বংশ ও হাওলাদার বংশের পূর্ব বিরোধ রয়েছে। এছাড়া ভোলা মেম্বারের কাছে আমার ভাই ১ লাখ টাকা পেত। এসব নিয়ে সোমবার দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে বিরোধ সংঘাতে রুপ নেয়।’ তিনি বলেন, ‘সকলের চোখের সামনে আমার ভাইকে কোপানো হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উপস্থিত থেকে উসকানি দেয়। পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসময় সামনে দাড়িয়ে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো আমাদের লাঠিচার্জ করে। পরে এলাকা থেকে শত শত মহিলা উত্তেজিত হয়ে বের হয়ে এসে পুলিশের উপর হামলা করে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে দিঘীরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম হালদার বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলাম। নিহত সোহরাব খান আওয়ামী লীগ করতেন। তাকে হত্যার খবরে স্থানীয়রা পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
টংগিবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, নিহত সোহরাব খানের মাথায় ও বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিলো। এছাড়া আহত জনি খানের মাথা বুক ও পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক।
মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার আসলাম খান জানান, নিহত বৃদ্ধের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।