মুন্সিগঞ্জ, ১১ জুন, ২০২১, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ সদরের রামপালের কাজীকসবায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে ছাত্রলীগ নেতা প্রান্ত শেখ ও কিশোর গ্যাং ‘মাস্টারমাইন্ড’ গ্রুপের লিডার শোভন তালুকদারের হাতে খুন হওয়া নয়ন মিজি হত্যা মামলার মূল অভিযুক্তদের ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও আটক করতে পারেনি পুলিশ।
আরও পড়তে পারেন: মুন্সিগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা ও কিশোর গ্যাং লিডার কুপিয়ে মারলেন যুবককে
আরও পড়তে পারেন: রামপালে যুবক খুন: প্রান্ত-শোভনের গ্রেপ্তারের দাবিতে সড়ক অবর
আরও পড়তে পারেন: রামপালে যুবক খুন: ঘটনাস্থলে আগে যায় শোভন, ফোন পেয়ে যোগ দেয় প্রান্ত
পুলিশ বলছে, তাদের আটকের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় নিহত নয়ন মিজির মা রাশিদা বেগম বাদি হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলার ১ নং আসামি ছাত্রলীগ নেতা প্রান্ত শেখ ও ৩ নং আসামি কিশোর গ্যাং লিডার শোভন তালুকদার।
আরও পড়তে পারেন: রামপালে যুবক খুন: ছাত্রলীগের বড় নেতা হওয়ার স্বপ্ন ছিলো শোভনের
এ ঘটনায় পুলিশ আজ আরও দুইজনকে আটক করেছে। এরা দুজনই সম্পর্কে কিশোর গ্যাং লিডার শোভনের চাচা। আটকরা হলেন, রামপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ তালুকদার (৪৫) ও খোকন তালুকদার (৫৭)। সন্দেহভাজন হিসেবে এদের আটক করেছে পুলিশ।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক ‘আমার বিক্রমপুর’ কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
ওসি জানান, এর আগে গতকাল এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দুই এজাহারভুক্ত আসামিকে আটক করে পুলিশ। এরা হচ্ছেন, ৬ নং আসামি সিপাহীপাড়ার রহমান তালুকদারের ছেলে তৌকির তাদুকদার (২৫) ও ৭ নং আসামি শাখারি বাজার এলাকার নাসির ভূইয়ার ছেলে নাহিদ (১৯)।
গত বুধবার (৯ জুন) বিকালে সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের কাজী কসবা এলাকায় এ মারধরের ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নয়নের মৃত্যু হয়।
আরও পড়তে পারেন: রামপালে যুবক খুন: ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে, ছাত্রত্ব নেই, তবুও ছাত্রলীগের পদ পায় প্রান্ত
নিহত নয়ন স্থানীয় রামপাল ইউনিয়নের উত্তর কাজী কসবা এলাকার মৃত বাতেন মিজির ছেলে।
মামলার এজাহার ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত নয়ন মিজির পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন (বুধবার, ৯ জুন) রামপালের সিপাহীপাড়া ভূইয়া বাড়ি রাস্তার উপর থেকে নয়নকে তুলে নিয়ে যায় আসামিরা। এরপর উত্তর কাজীকসবা এলাকার পেপার মিল সংলগ্ন শাকিলের মুদি দোকানের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে ১নং আসামি খলিল শেখ এর ছেলে প্রান্ত শেখ (২৮), ২ নং আসামি প্রান্ত শেখের বড় ভাই চঞ্চল (৩২) ও ৫ নং আসামি গোয়ালগুন্নি এলাকার মতি দেওয়ানের ছেলে কাঞ্চন (২৬) নয়নকে ছুরি ও চাপাতি দিয়ে হাত পা ও পিঠে জখম করে। নয়নকে লোহার পাইপ দিয়ে পেটায় প্রান্ত। একপর্যায়ে নয়ন হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলে হাতের ২ আঙুল ভেঙে যায়। ৫ নং আসামি গোয়ালগুন্নি এলাকার মতি দেওয়ানের ছেলে কাঞ্চন (২৬) ছুরি দিয়ে খুচিঁয়ে নয়নের চোখ তুলে ফেলার চেষ্টা করে।
এসময় ৩ নং আসামি সিপাহীপাড়ার মৃত আনোয়ার তালুকদার এর ছেলে শোভন তালুকদার (২৪) ও ৪ নং আসামি বাদশার ছেলে রনি (২৪) লোহার রড ও হকিষ্টিক দিয়ে দুই পা পিটিয়ে ভেঙে দেয়। ৫ নং আসামি গোয়ালগুন্নি এলাকার মতি দেওয়ানের ছেলে কাঞ্চন (২৬) নয়নের বাম পায়ের হাটুর নিচে সুইচ গিয়ার দিয়ে গুরুতর জখম করে। ৬ নং আসামি সিপাহীপাড়ার মৃত রহমান তালুকদারের ছেলে তৌকির তালুকদার (২৫) সুইচ গিয়ার দিয়ে নয়নের মুখ সহ বিভিন্ন অংশে জখম করে। এ মামলার ৭ নং আসামি সিপাহীপাড়ার নাসির ভূইয়ার ছেলে নাহিদ ভূইয়া (২০), ৮নং আসামি শাখারি বাজার এলাকার আল আমিন (২১) ও ৯ নং আসামি হাতিমাড়া এলাকার মৃত মজিবরের ছেলে অমিম (২৭) নয়নকে বাঁশের লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে শারা শরীরে পিটায়।
মামলার বাদি নিহত নয়নের মা রাশিদা বেগম জানান, ঘটনা শুনে আমার ছেলে আমি ও নয়নের বউ মর্জিনা বেগম (২৮) ছুটে গিয়ে ঘাতকদের হাত থেকে নয়নকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। এসময় ১ নং আসামি প্রান্ত শেখ ও ৩ নং আসামি শোভন তালুকদার আমাকে ও আমার ছেলের বউকে বেধম মারধর করে। ৪ নং আসামি রনি (২৪) ও ৫ নং আসামি গোয়ালগুন্নি এলাকার মতি দেওয়ানের ছেলে কাঞ্চন (২৬) আমার ছেলে বউর চুল ধরে টানাহেচড়া করে শরীরের জামাকাপড় খুলে ফেলে।
নিহত নয়নের মা রাশিদা বেগম বলেন, এই চক্রের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ থাকলেও পুলিশ কখনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আজ আমার ছেলের প্রাণ গেলো ওদের হাতে। এই দেশে ন্যায়বিচার পাওয়া এখন দুরহ হয়ে গেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্টমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির কাছে সুষ্ঠ বিচারের দাবি করি। আর কোন মায়ের বুক যাতে এভাবে খালি না হয়।