মুন্সিগঞ্জ, ২৬ জুলাই, ২০২১, সদর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
স্মৃতি আক্তার (১৫)। মুখের কথা, চুলের স্টাইল, পোষাক-চলন সবই ছেলেদের মত। নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন রায়হান। প্রেম করেছেন মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার মাকহাটি মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রী ঋতুর (১৬) সঙ্গে। কথিত প্রেমিক ফুসলিয়ে বিয়ের প্রলোভোন দেখিয়ে সহযোগীদের নিয়ে ঋতুকে অপহরণ করে নিয়ে তুলে দেন স্মৃতির মা মুক্তা বেগমের হাতে।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মাকহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী ঋতু নিখোঁজের ঘটনায় তার পিতা টংগিবাড়ী উপজেলার কাঠাঁদিয়া গ্রামের বিল্লাল মুন্সী থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ জেলার সদর উপজেলার জোরপুকুরপাড় পূর্ব পাড়া কাজলের বাড়ি থেকে ঋতুকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে।
উদ্ধারকৃত ঋতু জানান, আমার সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেয় মুক্তা বেগমের মেয়ে স্মৃতি (১৫) ছেলে সেজে প্রেম করে আসছিল। তার মা মুক্তা, বাবা রবিউল তাকে সহযোগীতা করতো। ২১ জুলাই বুধবার ঈদের দিন সকাল সাড়ে ১১ টায় আমাকে স্মৃতি নিজেকে রায়হান পরিচয়ে তার মা, বাবা ও সৎ মা কে সঙ্গে নিয়ে অটো রিক্সায় করে গোপনে তাদের আস্তানায় নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারি আমার প্রেমিক রায়হান আসলে ছেলে নয় মেয়ে। তারা আমাকে ৩ দিন আটকিয়ে রেখে নির্যাতন করে খারাপ কাজ করার কথা বলে। আমি রাজি না হওয়াতে তারা আমাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
ঋতুর পিতা বিল্লাল মুন্সী জানান, আমার প্রতিবেশী চাচাত বোন মুক্তা আর তার মেয়ে স্মৃতি যোগসাজসে স্মৃতিকে ছেলে সাজিয়ে আমার মেয়েকে কৌশলে ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। যৌন শোষন, নিপিড়নের উদ্দেশ্যে অন্যত্র স্থানান্তরের প্রস্তুতির সময় ঋতুকে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করে মামলা দায়ের করেছি।
মামলার তদন্ত কর্মকতা এসআই আল মামুন জানান, স্মুতি, মুক্তা, রবিউল, হিজরা শাকিলা সংঘবদ্ধ নারী ও শিশু পাচারকারী চক্র। তারা কৌশলে উঠতি বয়সি মেয়েদের অপহরণ করে অশ্লিল কাজ করানো সহ বিভিন্ন স্থানে পাচারের সাথে জড়িত মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
টংগিবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় জড়িতরা একটি মানবপাচার চক্র। মোট ৪ জনকে আটক করে মুন্সিগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার (২৫ জুলাই) রবিউল ও শাকিলাকে ৭ দিন করে পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠালে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। পরে রিমান্ড শুনানি হবে। এর আগে ২৪ জুলাই শনিবার স্মৃতি ও মুক্তাকে আদালতে পাঠানো হলে তারা দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবান বন্দি প্রদান করেছেন।
তিনি জানান, স্মৃতি মেয়েটি খুবই স্মার্টলি ছেলেদের মত কথা বলে। পোষাক, চুলের স্টাইল ছেলেদের মত। কৌশলে স্কুল পড়ুয়া ঋতুর সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে তুলে নিয়ে তার মা মুক্তার হাতে তুলে দেয়। ঋতুকে স্মৃতির মা মুক্তার স্বামী রবিউলের হাতে তুলে দেয় আর রবিউল তার আরেক স্ত্রী শাকিলার মাধ্যমে পাচারের সময় স্মৃতি ও মুক্তাকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপহরণ ও পাচারের ঘটনা স্বীকার করলে তাদের দু’জনের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে পরবর্তীতে অপর দুজনকে আটক করা হয়।