মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে ধান রোপণ শুরু হয়েছে। সরকার সার, ডিজেল ও কীটনাশকে দাম কমালে ধানে লাভের মুখ দেখতে পারবেন এমনটাই দাবি কৃষকের।
মুন্সিগঞ্জ জেলার মোট ৬টি উপজেলায় কৃষকরা এখন ব্যাস্ত ধান রোপণে। তবে গতবারের তুলনায় এবার ধান চাষাবাদ হচ্ছে এ জেলায় কিছুটা কম। কারণ হিসেবে জানা যায় ধান চাষে প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম কিছুটা বেশি, কৃষকরা লাভের চেয়ে প্রতি বছর লোকসানই গুনছেন বেশি।
মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর (২০১৬-১৭ সালে) আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৪৪৬ হেক্টর জমি।
এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৯২৭ টন যা গতবার (২০১৪-১৫ সাল) আবাদ ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার ২৭৪ হেক্টর জমি। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লক্ষ ১১ হাজার ৬৩৪ টন। এবার উফশী ধান ২৪ হাজার ৮৭ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৩১২ হেক্টর ও হাইব্রিড ৪৭ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে উফশী ১৬ হাজার ২৫৫ হেক্টর, স্থানীয় ৩২৮ হে. ও হাইব্রিড ৫০ হেক্টর। তুলনামূলক স্থানীয় ও হাউব্রিড কিছুটা বেশি। তবে উফশী জাতের ধান লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আলু চাষে অন্যতম জেলা মুন্সিগঞ্জ। এখনো আলু উঠানো শেষ হয়নি। আলু উঠানো হলে জমিতে ধান চাষাবাদ আরো ব্যাপকভাবে শুরু হবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মনে করছেন।
কৃষকরা জানান, প্রতি বছর আমরা ধান আবাদ করি, খাই ও বিক্রি করি। সার, ডিজেলের দাম বর্তমান সরকার যদি কমায় দেন তাইলে আমাগ ভালো হতো। আমাগ কোনো বছর লাভ হয় কোনো বছর লোকশান হয়। বর্তমানে তেলের ও সারের দাম বেশি থাকার কারণে আমাদের পত্তা হচ্ছে না। সরকার যদি এর দাম একটু কমাইতো আমাগ সুবিধা হইতো। পেটের জন্য চাষাবাদ করছি। গৃহস্থালি করতে হয় তাই করতাছি। ৭০ টাকা লিটার তেল (ডিজেল) ১ হাজার টাকা বস্তা সার, অন্যান্য খরচাপাতি মিলাইয়া আমাগো পরতা কম পড়ে। সুবিধা না হইলেও নিজেরটা নিজের খাইতে হয় তাই ধানের চাষ করি। শুনছি তেলের (ডিজেল) দাম কম কিন্তু কম তো পাইলাম না। পেটের দায়ে নিজের জমি তো ফালাইয়া থোয়া যায় না, চাষাবাদ করাই লাগে।
মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, চলতি বোরো মৌসুমে আমাদের মুন্সিগঞ্জ জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৪৪৬ হেক্টর জমি। উফশী ধান ২৪ হাজার ৮৭ হেক্টর, হাইব্রিড ধান ৪৭ হেক্টর ও স্থানীয় ৩১২ হেক্টর ধরা হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমাদের এবার আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৬৩৩ হেক্টর জমি। উফশী জাত ১৬ হাজার ২৫৫ হেক্টর, স্থানীয়ভাবে ৩২৮ হেক্টর ও হাইব্রিড ৫০ হেক্টর। গতবার উৎপাদন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৪.৫ টন এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩.৮২ হেক্টর জমি উফশী জাত। আমরা আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন এর চেয়ে বেশি হবে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার সারের দাম কমিয়ে এখন কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে টিএসপি প্রতিকেজি ২২ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা ও ড্যাপ ২৫ টাকা কেজি হিসেবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় টিএসপি ৮৫ টাকা, ড্যাপ ছিল ৯৫ টাকা ও এমওপি ৭০ টাকা কেজি। সে তুলনায় সারের মূল্য এখন কৃষকের নাগালের মধ্যে আছে। তবে কীটনাশকের দাম মার্কেটে কিছুটা বেশি। কীটনাশক বেসরকারিভাবে বাজারজাত করছে। এটার মনিটরিং আমাদের শুধু হলো ভেজাল, নকল বা মেয়াদ উত্তীর্ণ বিক্রয় হচ্ছে কিনা সেটা আমরা দেখছি। আমদানিকারকরা বা বিভিন্ন কোম্পানি এর মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। আমি বলবো ডিজেলের দাম নাগালের মধ্যেই আছে। সেচের বিদ্যুৎ বিলে বর্তমান সরকার ২০% রিবেট দিয়ে থাকে। কৃষকরা বিদ্যুতের মোট বিলের ২০ শতাংশ মাফ পাচ্ছেন। কৃষিবান্ধব সরকার আমাদের উৎপাদনের যাবতীয় উপকরণ যতটা সম্ভব সহজলভ্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।