মুন্সিগঞ্জ, ৩০ আগস্ট ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
গেল ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া শহরের উত্তর ইসলামপুরের বাসিন্দা রিয়াজুল ফরাজী ও নুর মোহাম্মদ ওরফে ডিপজলকে গুলি করে হত্যার দায়ে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঘটনার দিন সহিংসতা-হামলায় জড়িত ছিলেন অথচ এমন অনেক ব্যক্তির নাম এজাহারে আসেনি। আবার ঘটনাস্থলেই ছিলেন না এমন অনেকের নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়েছে এজাহার দুইটিতে। বিষয়টি নিয়ে বরাবরের মত ক্ষোভ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন অরাজনৈতিক হলেও আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের মামলা ‘রাজনৈতিকভাবে’ হচ্ছে বলে অভিমত তাদের।
গত ২০ আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেয়া রিয়াজুল ফরাজীকে (৩৮) গুলি করে হত্যার দায়ে মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লবকে প্রধান আসামি করে ২০৮ জনের নামোল্লেখসহ ৫০৮ জনের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। ওই মামলার বাদী হন আন্দোলনে নিহত রিয়াজুল ফরাজীর স্ত্রী রুমা বেগম।
বিস্তারিত পড়তে পারেন: মুন্সিগঞ্জে হ.ত্যা মামলা: বিপ্লব, ৭ চেয়ারম্যান, আ. লীগ-ছাত্রলীগ নেতাসহ ৫০০ আসামি
আজ ৩০ আগস্ট একই এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ ওরফে ডিপজলকে (২২) গুলি করে হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান ও মুন্সিগঞ্জের সাবেক ৩ জন এমপিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
বিস্তারিত পড়তে পারেন: মুন্সিগঞ্জে আরও এক হত্যা মামলা: শেখ হাসিনা-কাদের, মহিউদ্দিনসহ ৬১৪ আসামি
এই মামলায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩১৪ জনের নাম রয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০/৩০০ জনকে।
গুলি করে হত্যার অভিযোগে আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সদর থানায় মামলাটি দায়ের হয়। এতে বাদী হয়েছেন নিহত নুর মোহাম্মদ ওরফে ডিপজলের নানী শেফালি বেগম।
প্রথম মামলা হওয়ার পর জড়িতদের নাম বাদ যাওয়া প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা ‘গণস্বাক্ষর’ কর্মসূচি করে প্রতিবাদ জানান। তখন তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন- ৪ তারিখ সুপারমার্কেট এলাকায় হত্যাকাণ্ডের হুকুমদাতা ও জড়িতরা কেউ যেন মামলা থেকে রেহাই না পায়। জড়িত কেউ বাদ গেলে শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলন গড়ে তুলবে। সেদিন তারা বলেন, ‘ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন মামলায় না জড়ানো হয় সেটিও খেয়াল রাখতে হবে।’
কিন্তু দ্বিতীয় মামলা হওয়ার পরও দেখা গেছে- জড়িত অনেকের নাম আসেনি পাশাপাশি জড়ানো হয়েছে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকে।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে কথা হয় বেশ কয়েকজনের সাথে। তারা বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের আন্দোলন ছিলো সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। সেই আন্দোলনে অংশ নিয়ে মুন্সিগঞ্জে ৩ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু এখন যে মামলা হচ্ছে সেগুলো ওই পরিবারগুলোকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য করা হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মামলায় নিরপরাধ কেউ থাকলে তাদের নাম বাদ দেয়া হবে। আর জড়িত যাদের নাম বাদ গেছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার আগে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
ওসি বলেন, ‘প্রথম মামলায় এখন পর্যন্ত দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া কোন অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি৷’