১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ৭:১০
মুন্সিগঞ্জে তীব্র গ্যাস সংকট, চরম বিরক্ত মানুষ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৮ নভেম্বর ২০২৩, কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু

মুন্সিগঞ্জে গ্যাসের সংকট চলছে বছরের পর বছর। গেল দুই মাস ধরে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ মিলছে না। এ ছাড়া অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বৈধ গ্রাহকের সংযোগে চাপ পড়ছে। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জের প্রধান সংযোগটি ব্যবহৃত হচ্ছে পাশের নারায়ণগঞ্জেও। এসব কারণে জেলাজুড়ে চলছে গ্যাসের সংকট।

গ্রাহকরা জানিয়েছেন, গ্যাসের চুলা ছেড়ে তাদের পরিবারের নারীদের খড়ি বা কেরোসিনের চুলা ব্যবহার করে রান্না করতে হচ্ছে। এতে একদিকে তাদের খরচ বেড়েছে; অন্যদিকে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন গৃহিণীরা। দিনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় কোনো কোনো বাড়িতে রান্না হচ্ছে মধ্যরাতে।

অন্যান্যবারের মতো এবারও দুর্ভোগে পড়েছে মুন্সিগঞ্জ শহর ও আশপাশের হাজারো পরিবার। এ অবস্থায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মুন্সিগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তাদের আওতায় আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার। এর সঙ্গে রয়েছে শতাধিক শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ। প্রতি মাসে তাদের গ্যাসের চাহিদা ৭১ লাখ ঘনমিটার, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০ লাখ ঘনমিটার। সে হিসাবে ৪১ লাখ ঘনমিটার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
দুই মাস ধরে রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মোটামুটি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে দিনের বেলায় গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বালাতে পারছে না গৃহিণী। বাধ্য হয়ে আগের রাতে রান্নাবাড়া সারতে হচ্ছে। অনেক গৃহিণী বাধ্য হয়ে খড়ি ও কেরোসিনের চুলায় রান্না করছেন।

শহরের মধ্য কোটগাঁও এলাকায় বাসা স্কুলশিক্ষিকা জিনিয়া ফেরদৌসের। তিনি শুক্রবার বলেন, গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বালানোই সম্ভব হয় না। চুলা চালু করার কিছু সময় পর বিন্দু পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যায়। এতে নিভু নিভু আগুনে রান্নাবান্না করতে হয়, তাতে অনেক সময় লাগে। প্রায়ই খাবার নষ্ট হয়ে যায়। তাঁর মতো শহরের সব গৃহিণীর একই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বাগমামুদালীপাড়ার গৃহিণী আফরোজা আক্তার বলেন, ‘গ্যাস সংকটের কারণে দিন বা রাত; সব সময় খাবার তৈরিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা থাকলেও তা নিরসনে কারও উদ্যোগ নেই।’ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তিতাস গ্যাসের মুন্সিগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মেছবাহ উদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে জানা যায়, মাসে তাদের গ্যাসের চাহিদা ৭১ লাখ ঘনমিটার। বরাদ্দ পাচ্ছেন মাত্র ৩০ লাখ ঘনমিটার। চাহিদার বিপরীতে ঘাটতিই রয়েছে ৪১ লাখ ঘনমিটার।

এক প্রশ্নের জবাবে মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এক লাইনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ হয়। নারায়ণগঞ্জের চাহিদা মেটাতেই লাইনে গ্যাস শেষ হয়ে যায়। এতে মুন্সিগঞ্জে গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছেন না। এক পাইপলাইনে দুই জেলায় গ্যাস সরবরাহ করাকে গ্যাস সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

চাহিদার বিপরীতে সরবরাহে ঘাটতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুন্সিগঞ্জে সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এর সমাধানে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ লাইন আলাদা করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

error: দুঃখিত!