মুন্সিগঞ্জ, ৭ আগস্ট ২০২৩, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মার শাখা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ৪৬ যাত্রী নিয়ে পিকনিকের ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ তুরান আহম্মেদের পর তার বোন নাভার (৭) মরদেহ উদ্ধারের তথ্য দিয়েছিলো ফায়ার সার্ভিস। তবে সন্ধ্যার পর বক্তব্য পাল্টে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে মরদেহটি নিখোঁজ মাহিরের (৭)। ফলে এ ঘটনায় তুরানের বোন নাভা (৭) এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
সিরাজদিখান উপজেলার কয়রাখোলা গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী আরিফ খানের ছেলে তুরান। আর মাহির খিদিরপুর গ্রামের রুবেল হোসেনের ছেলে।
সোমবার বিকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটার দূরে নদীতে ভাসমান অবস্থায় মাহিরের মরদেহটি পাওয়া যায়। এর আগে সকাল আটটার দিকে টংগিবাড়ী উপজেলার সুবচনী বাজার সংলগ্ন নদী তীর থেকে তুরান আহম্মেদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ৯।
লৌহজং ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার কয়েস আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্ট থেকে ছেড়ে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের তালতলা অভিমুখে আসার পথে গেল শনিবার (৫ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে লৌহজংয়ের রসকাটি এলাকায় পাশাপাশি চলতে থাকা একটি খালি বাল্কহেডের সাথে ধাক্কা লাগে পিকনিকের যাত্রীবাহী ট্রলারটির। মুহুর্তেই সেটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসময় চিল্লাচিল্লির শব্দ শুনে পাশ্ববর্তী রসকাটি জামে মসজিদের মাইকে ট্রলারডুবির ঘোষণা দেয়া হলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে অন্তত ৩৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। এসময় ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন তারা। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল পৌঁছে আরও ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। রোববার দ্বিতীয় দিনের মত উদ্ধার অভিযান চললেও নিখোঁজ কারও মরদেহ পাওয়া যায়নি। তৃতীয় দিন সোমবার সকালে নিখোঁজ ৩ শিশুর মধ্যে একজন ও বিকালে আরও একজনের মরদেহ পাওয়া যায়। এখনো নিখোঁজ রয়েছে একজন। তাকে উদ্ধারে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে ডুবে যাওয়ার ১৫ ঘন্টা পর ট্রলারটি নদীর তলদেশ থেকে ক্রেন দিয়ে টেনে উদ্ধার করে বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের সদস্যরা। বিকালে বাল্কহেডটি জব্দ করে নৌ পুলিশ। এসময় অজ্ঞাত মালিক-চালকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে লৌহজং থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন ভাই-ভাগ্নে হারানো ভুক্তভোগী স্বজন রুবেল শেখ।
ট্রলারডুুবিতে নিহতরা হলেন- সিরাজদিখানের লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর এলাকার জাহাঙ্গীরের স্ত্রী এপি বেগম (২৮) ও তার দুই ছেলে সাকিবুল (১০) এবং সাজিবুল (৭)। একই এলাকার ফিরোজ সরকারের পুত্র ফারিয়ান (৮), শাহাদাত হোসেনের ৫ মাসের পুত্র হুমায়রা, শাহজাহানের স্ত্রী মোকসেদা বেগম (৩৮), আব্দুল হাকিমের মেয়ে পপি বেগম (৩০), আরিফ আহম্মেদের ছেলে তুরান আহম্মেদ (৮) ও রুবেলের ছেলে মাহির (৭)।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত গঠন করেছে। গতকাল তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক আবুজাফর রিপন জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট শারমিন আরাকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, লৌহজংয়ের ইউএনও, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিকে সদস্য করা হয়েছে।