মুন্সিগঞ্জ, ২ ডিসেম্বর ২০২৩, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মিয়াজী টিএইচ মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় সিজারিয়ান
অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও রোগীর স্বজনরা হাসপাতালটিতে অবস্থান নিয়ে কর্মরত স্টাফদের অবরুদ্ধ করে রাখে। মারা যাওয়া ঐ প্রসূতির নাম নিপা আক্তার (২৬)। তিনি ভবেরচর ইউনিয়নের চরপাথালিয়া গ্রামের খাজ আলমের কন্যা ও মো.শামীমের স্ত্রী বলে।
নিহত প্রসূতির বড় বোন রত্না আক্তার জানান, এটা নিপার দ্বিতীয় সন্তান, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালটির চিকিৎসক রাজিয়া বেগমের তত্ত্বাবধানে প্রসূতি নিপা আক্তারকে ভর্তি করা হয়। সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বিকাল সাড়ে ৫ টায় সিজারিয়ান অপারেশন শুরু হয়।
অপারেশন শুরুর ১০-১৫ মিনিট পরে জানানো হয় নিপার মেয়ে বাচ্চা হয়েছে এবং বাচ্চার অবস্থাও ভালো। কিন্তু এরপর দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও নিপাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের না করায় পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়। তারা ডিউটিরত নার্সদের একাধিকবার জিজ্ঞাসা করলে কর্তব্যরত সেবিকা ও স্টাফ তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে।
পরবর্তীতে সাড়ে ৭টার পরে তাদের জানানো হয় বাচ্চার মায়ের অবস্থা খারাপ তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে হবে। তারা তড়িঘড়ি করে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-একটিভ মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিপাকে মৃত ঘোষণা করে জানান অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে অনেক আগেই নিপার মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে মিয়াজী টিএইচ মেমোরিয়াল হাসপাতালের অভিযুক্ত চিকিৎসক রাজিয়া বেগম বলেন, ‘রোগীর আগ থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ছিলো। আমি অপারেশন করার পরে বিষয়টি ধরতে পারি। আমি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠিয়ে দিতে বলেছিলাম। এখানে আমার কোন অবহেলা ছিল না।’
সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গিয়ে ডিউটি ডাক্তার, ম্যানেজার ও অন্য কোন স্টাফদের পাওয়া যায় নি। শুধু একজন নার্সকে অভ্যর্থনা টেবিলে বসে থাকতে দেখা যায়। তার দাবি, তিনি আসার আগেই রোগীকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
এ সময় মৃত্যু নিপা আক্তারের স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসকের কক্ষ ভাংচুর করার চেষ্টা করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গজারিয়া থানার ওসি (তদন্ত) আক্তারুজ্জামান জানান, নিহতের স্বজনরা থানায় এসেছেন। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, হাসপাতাল পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, ডাক্তারের বদলে নার্স দিয়ে অপারেশন করা, রোগীদের সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এর আগেও ২০২০ সালের ১৯ জুলাই এই হাসপাতালে ডাক্তারের বদলে নার্স দিয়ে অপারেশন করার কারণে পুরান বাউশিয়া গ্রামের ইউসুফ আলীর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী খাদিজা আক্তারের (৩০) মৃত্যু হয়।