মুন্সিগঞ্জ, ১২ এপ্রিল ২০২৩, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
পারিবারিক কলহের জেরে মাকে প্রায়ই মারধর করতেন বাবা। মায়ের উপর বাবার এমন অত্যাচার সইতে না পেরে ৩ ছেলে মিলে ঘুমন্ত বাবাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন।
নৃশংস এই ঘটনার দায় স্বীকার করে দুই ছেলে মো. সুমন হালদার (৩০) ও মোহাম্মাদ আলী হালদার (২৩) গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টা’র দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে মুন্সিগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জামাল হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
গেল সোমবার দিবাগত ভোর রাত ৩-৪টা’র মধ্যে সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের মিঝিকান্দি এলাকায় নিজ বসত ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কুপিয়ে ও পিটিয়ে বাবা নুর ইসলাম হালদার (৪৭) কে খুন করেন ৩ ছেলে। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুদের হামলায় বাবা মারা গেছেন বলে নাটক সাজান তারা।
মঙ্গলবার দুপুর ২ টা’র দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন জানান, এ ঘটনায় জড়িত অপর আসামি রাসেল হালদার (২১) পলাতক রয়েছেন। সদর থানায় নিহতের বোন হামিদা বেগম বাদী হয়ে ৩ ভাইপুত্রসহ অজ্ঞাত ২-৩ জনকে আসামি করেছেন।
আসামিদের বরাতে পুলিশ সুপার জানান, ছেলেরা মনে করেন, বাবা যদি পৃথিবীতে না থাকেন তাহলে মা ভালো থাকবেন। সংসারে অভাব অনটন থাকায় বাবাও চাইতেন ছেলেরা কাজ করুক।
পুলিশ সুপার জানান, সম্প্রতি নিহত নুর ইসলাম তার স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে (৪০) জমির ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে বেধড়ক মারপিট করেন। এতে অসুস্থ হয়ে তাছলিমা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে মুক্তারপুর এলাকায় তার মেয়ে পিয়ারা বেগমের ভাড়া বাসায় চলে যান। নুর ইসলাম চলে যান তার বোন হামিদা বেগমের বাড়ীতে। মারধরের ঘটনাটি নুর ইসলাম-তাসলিমা দম্পতির ছেলে সুমন হালদার, মোহাম্মদ আলী হালদার ও রাসেল হালদার জানতে পারলে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাদের বাবা নুর ইসলাম হালদারকে আশপাশের বাড়ী সহ গ্রামের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। গেল সোমবার বিকালে নুর ইসলাম বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। ঐদিন দিনগত ৩টা’র দিকে নুর ইসলাম হালদারের পশ্চিম ভিটির দো-চালা টিনের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ছেলে মোহাম্মদ আলী ও রাসেল হালদার তাদের অপর বড় ভাই সুমন হালদার কে ফোনে ডেকে এনে তিন ভাই সহ অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন পরস্পর মিলে রামদা ও লাঠি দিয়ে তাদের পিতা নুর ইসলাম হালদারের মাথা, কোমর, পিঠ ও কাঁধ সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে উপর্যুপরী কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। হত্যার পর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গেলে ডাকাতরা তাদের পিতাকে কুপিয়েছে বলে প্রচার করে। পরে সুমন ও মোহাম্মদ আলী হালদার তাদের পিতাকে চিকিৎসার জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং তাদের সাথে থাকা অপর ভাই রাসেল হালদার পালিয়ে যায়।
তিনি জানান, ঘটনার পর নিহতকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে সেখানে তার ছেলে মোহাম্মদ আলীর কথা সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ তাকেসহ তার অপর ভাই সুমন হাওলাদারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে। দুজনেই পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে হত্যার কথা পুলিশকে জানায়। অভিযুক্ত অপর ভাই রাসেল হালদারকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। নিহতের মরদেহ সোমবার সন্ধ্যায় সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।