১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ২:৩৭
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মুন্সিগঞ্জে ঘর নির্মাণে অবহেলা ও অনিয়মের অভিযোগ ইউএনও ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১২ জুলাই, ২০২১, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া ইউনিয়নের নশংকর এলাকায় নির্মিত মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ৮টি ঘর নির্মাণে অবহেলা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভীন ও ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হালদারের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ ‍উঠেছে, নিয়ম ভেঙে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ঠিকাদারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কামারখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হালদারকে।

জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলায় ২০ টি ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে কামারখাড়া ইউনিয়নের নশংকর এলাকায় ৮টি ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে কামারখাড়া ইউনিয়নের নশংকর এলাকায় ৮টি ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলেও অনিয়ম ধরা পড়ায় সেখানে বর্তমানে সংস্কার কাজ চলছে।

ঠিকাদার ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হালদার কাজে অনিয়ম করার কয়েক মাস পরে সেটি ধরা পড়লে লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘরের মেঝে ও বারান্দা ভেঙে তড়িঘড়ি করে পুনরায় নির্মাণ করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। তাদের দাবি, সমস্যা ছিলো দেয়ালেও।

তারা আরও জানান, নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া ৮টি ঘরের মেঝেতে ৩ ইঞ্চি সলিং থাকার কথা থাকলেও অল্প কয়েকদিন আগে জানা গেছে সেখানে সলিং রয়েছে ১ ইঞ্চি। ব্যবহার করা হয়নি কোন ইট। এ অনিয়ম ধরা পড়ার পরে এখন তড়িঘড়ি করে প্রতিটি ঘরের (বারান্দাসহ) মেঝে ভেঙে ইট বিছিয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে।

ঘরের মেঝেতে ৩ ইঞ্চি সলিং থাকার কথা থাকলেও অল্প কয়েকিদন আগে জানা গেছে সেখানে সলিং রয়েছে ১ ইঞ্চি। ব্যবহার করা হয়নি কোন ইট। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

গতকাল রোববার (১১ জুলাই) প্রকল্প এলাকায় গেলে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন উপকারভোগী কয়েকজন ঘরের মালিক।

পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে মুহুর্তেই হাজির হন ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের অঘোষিত ঠিকাদার মহিউদ্দিন হালদার। এরপর তিনি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান।

একপর্যায়ে মহিউদ্দিন হালদার নিজেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে তার নিয়োগের কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। তিনি জানান, টংগিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভীন তাকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি এখনো কাজ শেষ করেননি। তাই বিলও পাননি।

তাকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি ও ইউএনও নাহিদা পারভীন বলছেন, ‘তিনি ঠিকাদার নন। তিনি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। উনি হয়তো বিষয়টি আপনাকে বুঝাইতে ভুল করেছেন। কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি কাজ করতেছেন। উনার কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজ শেষ হলে কমিটির প্রত্যয়ন নিয়ে সব ঠিকঠাক থাকলে উনি বিল পাবেন।’

ইউএনও বলছেন, ‘ঘরের মেঝেতে যেখানে ৩ ইঞ্চি ঢালাই থাকার কথা ছিলো কোথাও দুই ইঞ্চি বা দেড় ইঞ্চি একটু কম ছিলো। যেহেতু কমতি ছিলো তাই আমরা পুরোপুরি একদম সংশোধন করে একদম ভালোভাবে কোনটায় যাতে কম না থাকে সেভাবে করছি। এটা হচ্ছে চলমান কাজ, আমরা কিন্তু বুঝিয়ে দেইনি। যখনই নজড়ে এসেছে তখনি কাজ করা শুরু করেছি।’

প্রতি মাসে একটি করে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা করা, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে পরিদর্শন ও কাজ তদারকি করে প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে অনিয়মের বিষয়টি আগেই কেন গোচরে এলো না এমনটা জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘এই কমিটির ৫ জন সদস্য একসাথে বসেই সভা করেছি। ডকুমেন্টস কথা বলবে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা আশ্রয়ণ মনিটরিং কমিটির সভাপতি কাজী নাহিদ রসুল ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ তদারকি করতে পারেন। তবে ঠিকাদারি করতে পারেন না। বিষয়গুলো নিয়ে জেলা আশ্রয়ণ কমিটির সভায় আলোচনা করা হবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫ নং ঘরের মালিক মিনতী রাণী অভিযোগ করে জানান, ৪-৫ মাস আগে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দিলেও ঘর বুঝে পাইনি। তাছাড়া এখানে আশপাশে কোথাও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ঘরটির চারিদিকে জলাশয় হওয়ায় আশপাশ থেকে পানির ব্যবস্থা করাও কঠিন।

৮ নং ঘরের মালিক রিনা আক্তারের অভিযোগ, ঘরে যে উঠে থাকবো, শঙ্কায় আছি। চারিদিকে পানি। রাস্তার ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন এসে বাড়ি দেখে ঘুড়ে যাই। কাজ ঠিকঠাক হয়নি, তাই নিচের ফ্লোর ভেঙে আবার কাজ করছে। আশা করি, সব কাজ শেষ করে তারা আমাদের ঘর বুঝিয়ে দিবে।

চারিদিকে পানি। রাস্তার ব্যবস্থা নেই। পানি মাড়িয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি নাহিদা পারভীন বলছেন, ‘এখানে প্রস্তাবিত রাস্তা আছে। সেখানে যাওয়ার যে রাস্তা সেখানে আমরা একটি কাঠেরপুল ও করে দিচ্ছি। ওখানে টিউবওয়েল আছে, পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগও আছে।’

উপজেলা প্রকৌশলী ও আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য শাহ মোয়াজ্জেম বলছেন, ‘আমি এই উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্প কমিটির দূর্ভাগা সদস্য। সভা হয়তো হয়েছে। আমি কোন সভা বা কোন সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। এই ঘরের কাজ কবে শুরু হয়েছে তাও বলতে পারি না। পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা চলমান কাজ, ঠিকাদার কাজ ফিনিশিং দিয়ে হ্যান্ডওভার করবে।’

চেয়ারম্যান ঠিকাদারের দায়িত্ব কিভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এটা সঠিক বলতে পারবো না।’

তার অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও নাহিদা পারভীন বলছেন, ‘উনি আর আমি একসাথেই ঐ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে আসছি। কেউ যদি নিজে নিজে নিজেকে দুর্ভাগা বলেন তাহলে তো এগুলা হবেই।’

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য পারভীন খানমের কাছে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভা বা পরিদর্শনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া তিনি এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে তিনি মনে করেন, কোন অনিয়ম হয়নি। সবকিছুই নিয়মমাফিক হয়েছে। তিনি জানান, তিনি দুই মাস আগে এই উপজেলায় যোগ দিয়েছেন।’

error: দুঃখিত!