মুন্সিগঞ্জ, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রামে গ্রাম্য সালিশ শেষে কিল-ঘুষি ও লাঠিপেটায় এক নারীর প্রাণ গেছে।
নিহতের নাম রোকেয়া বেগম (৬২)। সে ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রামের মৃত এবায়দুল্লাহ সরকারের স্ত্রী বলে জানা গেছে।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের ছেলে সোহেল সরকার জানান, আমার চাচাতো ভাই সজীব, মঞ্জু ও রাজিব মূলত আমাকে মারধর করছিল। আমার মা আমাকে বাঁচাতে আসলে তাকে কিল ঘুষি ও লাঠিপেটা করে তারা। আমার মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সকলের আমি ফাঁসি চাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রামের মৃত এবায়দুল্লাহ সরকারের ছেলেদের সাথে চাচাতো ভাই মৃত শহিদুল্লাহ সরকারের ছেলেদের বিরোধ চলছিলো।
বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ হলেও তা সমাধান করা সম্ভব হয়নি পরবর্তীতে তা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে সমাধান করার কথা ছিল। তবে উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে বাড়িতেই গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটা থেকে সালিশ বৈঠক শুরু হয়। সালিশের রায়ে বিরোধপূর্ণ জায়গাটি মৃত এবায়দুল্লাহর ছেলেরা পাবে বলে রায় দেওয়া হয়। তবে জায়গাটি মেপে খড়ের গাদা সরিয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় কথা কাটাকাটির জেরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে মারা যান মৃত এবায়দুল্লাহর স্ত্রী রোকেয়া বেগম।
গ্রাম্য সালিশের বিচারক হান্নান সরকার বলেন, সালিশে আমি-সহ সাবেক ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন, নান্নু মিয়া,মোশারফ হোসেন মিন্টুসহ অনেকেই উপস্থিত ছিল। বিষয়টি আমরা সমাধান করে দিয়েছিলাম। সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে সালিশ শেষ হবার পর। তখন আমরা কেউ উপস্থিত ছিলাম না।
ভবেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদ মোহাম্মদ লিটন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিচার হওয়ার কথা ছিল তবে উভয়পক্ষ তাদের বাড়িতে সালিশ করার ব্যাপারে দাবি জানালে আমি সেখানে সম্মতি প্রদান করি। শনিবার বিকাল চারটার পরে খবর পেলাম গ্রাম্য সালিশের পরে জায়গা মেপে ভাগ ভাটোয়ারা করার সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এক মহিলা মারা গেছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিকাল পৌনে চারটার দিকে আমাদের হাসপাতালে একজন মহিলাকে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করি। তার গায়ে আঘাতের তেমন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
সদর-গজারিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান বলেন, গ্রাম্য সালিশে সংঘর্ষের ঘটনায় এক মহিলা মারা গেছে বলে খবর পেয়েছি। ঘটনার পরপর পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে বিস্তারিত বলা যাবে।