মুন্সিগঞ্জ, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে মুন্সিগঞ্জ পৌর এলাকার বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জাতীয় মুক্তিযােদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এ তাদের আবেদন শুনানী ও নিষ্পত্তি করে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করেন।
এর আগে তারা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে তাদের দাবি তুলে ধরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন জমা দেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা নিজেদের ‘ক’ তালিকাভুক্ত গেজেট বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে চলতি ডিসেম্বর মাসেই সকল আপিল শুনানীর অপেক্ষমানদের চিঠি প্রদান করে বা তথ্য সরবরাহ করে আপিল আবেদন শুনানীর ব্যবস্থা করে গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
তারা জানান, জেলায় সর্বমোট ৩০৫ জন ব্যক্তি ‘ক’ তালিকাভুক্ত হলেও গেজেট থেকে বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে, সদর উপজেলার ৩২ জন, গজারিয়ার ৩৯ জন, টংগিবাড়ীর ৩ জন, লৌহজং উপজেলার ৫০ জন, সিরাজদিখানের ৮০ জন ও শ্রীনগরের ৩৬জন।
এসময় শ্রীনগরের বাড়ৈখালি এলাকার মুক্তিযুদ্ধে অংশগহণকারী সিরাজুল ইসলাম মিলন বলেন, আমি বাড়ৈখালি ইউনিয়নের ১৪জন মুক্তিযোদ্ধার সাথে ৩জন স্বাক্ষীসহ যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে অংশ নেই। সামান্য ভূল বা ছোটখাটো কথার অযুহাতে হয়রানির উদ্দেশ্যে তারা আমাকে বাদ দেয়। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তে যোগাযোগ করেও এর কোন সমাধান পাইনি। সেখানে গেলে তারা বলছেন, অপেক্ষা করেন হয়ে যাবে। আর কতদিন অপেক্ষা করবো। শরীরে রোগ-ব্যাধি দানা বেঁধেছে। কবে যেন হঠাৎ করে মরেই যাবো। মরার আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারছিনা। এর চেয়ে বড় লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।
সিরাজুল ইসলাম মিলনের মত কর্মসূচিতে অংশ নেন লৌহজং উপজেলার গাওদিয়া ইউনিয়নের বনসেমন্ত গ্রামের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ইদ্রিস সিকদার (৬৬), শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালি এলাকার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শের আলীর স্ত্রী জমিলা খাতুন (৫৯), বাড়ৈখালী এলাকার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নাসিরউদ্দিন এর ছেলে সজীব আহম্মেদ (৪০), শ্রীনগরের বাড়ৈখালি ইউনিয়নের শ্রীধরপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন (৭২)
শ্রীনগরের বাড়ৈখালি এলাকার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শের আলীর স্ত্রী জমিলা খাতুন (৫৯) বলেন, আমার স্বামীর নাম ‘ক’ তালিকাভুক্ত হলেও তার নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। ২০১৪ সালের মে মাসে তিনি কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। সেসময় আমরা সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের কারও কাছ থেকে সহায়তা পাইনি। তিনি মারা যাওয়ার পরে আমরা অর্থসংকটে দিনাতিপাত করছি।
শ্রীনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য ইকবাল মাষ্টার বলেন, ‘আমরা কমিটিতে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তে পাঠালে তারা অনেককে বাদ দিয়েছে। পরবর্তীতে বাদ পড়া ব্যক্তিরা আবার আপিল করেছে। জামুকার উচিত দ্রুত এই আপিলগুলো নিষ্পত্তি করা।