২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | বিকাল ৫:৫১
মুন্সিগঞ্জে কাজ ধরে সেতুর ঠিকাদার উধাও, ৭ মাসে বসেছে শুধু পাইলিং
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৮ মার্চ, ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জ সদরের মুন্সিরহাট সংলগ্ন হামিদপুর-গুহেরকান্দি সংযোগ এলাকায় পুরোনো সেতু ভেঙে ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করার পরে ২৪টি পাইলিং করেই গেল ৭ মাস ধরে খবর নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।

প্রকল্প মেয়াদ শেষ হতে আর ৩ মাস বাকি থাকলেও কাজের অগ্রগতি ৫ শতাংশেরও কম। ফলে নির্ধারিত সময়ে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

ভিডিও প্রতিবেদন:

অন্যদিকে, পুরোনো সেতুটি ভেঙে ফেলায় পাশেই নির্মিত অস্থায়ী বাঁশের সাকো থেকে পরে গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে ঘরবন্দি কর্মক্ষম দুইজন। স্থানীয় কৃষক, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। এ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের শেষ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অধীনে ২০২৩ সালের আগস্টে ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের হামিদপুর-গুহেরকান্দি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জান্নাত জিনাত ট্রেডার্স। যা শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুনে। প্রকল্প মেয়াদের আর মাত্র ৩ মাস মেয়াদ থাকলেও খোঁজ নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।

সম্প্রতি সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো সেতুটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলে প্রকল্প এলাকার দুই প্রান্তে ২৪টি পাইলিং করা হয়েছে। এরপর আর কাজ এগোয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোন শ্রমিক/লোকজনও সেখানে নেই।

স্থানীয়রা জানান, মুন্সিগঞ্জ সদরের মুন্সিরহাট সংলগ্ন বাইদ্দাবাড়ি ব্রিজের ঢালে ডান দিকে চরকেওয়ার ইউনিয়নের হামিদুপর, চেঙাবুনিয়া কান্দি ও গুহেরকান্দি এলাকার ৫ হাজার মানুষের বসবাস। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় যাতায়াত, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এই এলাকার মানুষ মুন্সিরহাট বাজার ও আশপাশের এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি। এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধায় পূর্বের থাকা পুরাতন অকেজো সেতু ভেঙে নতুন করে সেতু নির্মাণের প্রকল্প নেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতি টের পেয়ে জড়ো হন স্থানীয় অর্ধশত বাসিন্দা।

তারা এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করে পুরোনো সেতুটি ভেঙে ফেলায় পাশেই নির্মিত অস্থায়ী বাঁশের সাকো থেকে পরে গিয়ে গুরুতর আহত দুইজনের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে ভুক্তভোগী গুহেরকান্দি এলাকার স্বপন সরকার (৬০) ও রাজকুমার মল্লিকের (৭০) সাথে কথা হয়। দুজনেই পৃথক সময়ে বাঁশের সাকো থেকে খালে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।

স্বপন সরকার বলেন, আমাদের এখানে বহুবছরের পুরোনো একটি সেতু ছিলো। সেটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় নতুন সেতুর কাজ শুরু হয়। এলাকার সবাই মিলে পাশে একটি বাঁশের সাকো বানাই আমরা। একদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে সাকো থেকে পরে একদম পানিতে তলিয়ে যাই। স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে জানতে পারি আমার কোমর ও পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। চোখেও দেখি না আগেরমত। ৬ মাস ধরে আমি ঘরবন্দি। কোন কাজকর্মও করতে পারি না।

রাজকুমার মল্লিক বলেন, মুন্সিরহাট থেকে বাঁশের সাকোতে উঠে বাড়ি আসার সময় হঠাৎ পা পিছলে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। স্থানীয় বাসিন্দা অঞ্জলী সরকার বলেন, সাত-আট মাস হয়ে যায় ছোট ছোট শিশু নিয়ে বাঁশের সাকোতে চলতে হচ্ছে। কখন পরে গিয়ে কি দুর্ঘটনা হয় সেই ভয়ে থাকি সবসময়। সেতুর কাজ ধরলো ভালো কথা কিন্তু ধরার পর উধাও হয়ে গেল কোথায়? এর চেয়ে তো আগের ভাঙা সেতুই ভালো ছিলো। আমি বলবো- উপরের মহলের যারা আছেন তারা ঠিকাদারকে ধরেন। চাপ দেন। তাহলেই তো তারা কাজ শেষ করে দেয়।

কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জান্নাত জিনাত ট্রেডার্সের পরিচালক আব্দুল আল মামুন কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেছেন, যথাসময়ে কাজ শেষ করতে চেষ্টা করছি।

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহম্মেদ রেজা আল মামুন বলেন, জনদুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তারা কাজ শেষ করতে পারবে বলে মনে হয়না। ইতিমধ্যে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদনও করেছে।

error: দুঃখিত!