মুন্সিগঞ্জ, ২৬ জুন ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
পদ্মা তীরের মুন্সিগঞ্জ সদর ও লৌহজং উপজেলা এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার একদিনে তিনটি বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মিলেছে। এর আগে লৌহজংয়ে টানা ৫ দিনে ৬টি রাসেল ভাইপার সাপ ধরা পড়ে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে ওই এলাকাগুলোতে।
মঙ্গলবার সকালে দুটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায় জেলের জালে। পরে আরও একটি সাপ পেলে সেটিকে কুপিয়ে মারেন এক কৃষক। পুরস্কারের আশায় একটি মৃত ও একটি জীবিত রাসেল ভাইপার নিয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে যান এক ব্যক্তি। পুরস্কার না পেয়ে মৃত রাসেল ভাইপারটি নিয়ে ফিরে যান তিনি। আর জীবিত সাপটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জমা রাখেন তারু নামে এক সাপুড়ের কাছে।
জানা গেছে, সোমবার রাতে লৌহজং উপজেলার চরে মজিবর মাদবর নামের জেলে মাছ ধরার জন্য নদীতে চাই পাতেন । তার চাইয়ে আটকা পড়ে একটি রাসেল ভাইপার। পড়ে তিনি সকালে চাইসহ জীবন্ত সাপটি নিয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাপটি লৌহজং উপজেলার সাপুড়ে তারুকে ডেকে তার কাছে জমা দেন।
এ ব্যাপারে মজিবুর মাদবর বলেন, আমি মাছ ধরার জন্য চাই পাতলে চাই এর মধ্যে এই রাসেল ভাইপার সাপটি পাই। পরে আমি সকালে সাপটি পুরস্কার পাওয়ার আশায় ইউএনও স্যারের কাছে নিয়ে যাই।
একইদিন সকাল ১০টার দিকে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে উপজেলার নওপাড়া গ্রামের কৃষক নূরে আলম আকন তার বাড়ির পাশের ঝোপের ভেতরে রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পান। সাপটি শব্দ করলে তিনি সাপটিকে কুপিয়ে মেরে ফেলেন। পরে সাপটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে যান। এ সময় রাসেল ভাইপার দেখতে ভিড় জমায় মানুষ।
এ ব্যাপারে নূরে আলম আকন বলেন, আমি গরুর ঘাস কাটতে গেলে রাসেল ভাইপারটি ঝোপের মধ্যে দেখতে পাই। সাপটি আমাকে দেখে শব্দ করলে আমি এটাকে কুপিয়ে মেরে ফেলি।
পরে আমার এলাকার লোকজন বলল রাসেল ভাইপার সাপ মারলে নাকি পুরস্কার পাওয়া যায় তাই আমি এটাকে ইউএনও অফিসে নিয়ে আসি।
এদিকে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের সরদারকান্দি এলাকায় জেলের জালে মঙ্গলবার সকালে ধরা পড়ে অপর একটি রাসেল ভাইপার সাপ। ওই এলাকার লোকজন মিলে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
লৌহজং উপজেলার কলমা এলাকার বাসিন্দা সবুজ শিকদার বলেন, আমাদের এলাকায় একের পর এক রাসেল ভাইপার সাপ ধরা পড়ছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। ভয়ে আমরা জমিতে যাই না, বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার করছি।
লৌহজং উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, বিগত কয়েকদিনে লৌহজং উপজেলায় বেশ কয়েকটি রাসেল ভাইপার সাপ পাওয়া গেছে। তবে এ বছর এ উপজেলায় রাসেল ভাইপার সাপ কাউকে কামড়ায়নি। গতবছর একজনকে কামড়ে ছিল। প্রশাসনের পক্ষ হতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া কৃষকদের লাঠি নিয়ে এবং বুট জুতা পায়ে দিয়ে কৃষি কাজে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রাসেল ভাইপার সাপ মারা হলে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হবে এরকম কোন ঘোষণা প্রশাসন দেয়নি।
প্রসঙ্গত, এর আগে পদ্মা নদী তীরবর্তী মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় ১৮ জুন কুমারভোগ ইউনিয়নের একটি চরে ১ টি, ১৯ জুন লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া এলাকায় ১টি, ২০ জুন গাওদিয়া ইউনিয়নের শামুর বাড়ি এলাকায় ১ টি, ২১ জুন মেদেনীমন্ডল ও শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় দুইটি ও সর্বশেষ আজ ২২ জুন হলদিয়া ইউনিয়নে ১টি রাসেল ভাইপার ধরা পড়ে।