২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | বিকাল ৩:৫৩
মুন্সিগঞ্জে উদ্ধার হওয়া দুই বেওয়ারিশ লাশ ঘিরে রহস্য
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৭ মার্চ, ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জ সদর ও শ্রীনগরে দশ দিন আগে দুইদিনের ব্যবধানে নদীর পাড় থেকে মধ্যবয়সী দুই পুরুষের অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হলেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট না পাওয়ায় এখনো মরদেহ ‍দুইটির পরিচয় শনাক্ত হওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্ত ছাড়াই লাশ দুইটি আঞ্জুমান মুফিদুলের কাছে হস্তান্তর করা হলে বেওয়ারিশ হিসেবে তারা লাশ দাফন করেছে। অন্যদিকে, দুটি ঘটনায়ই হত্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। লাশগুলো নদীর পার থেকে উদ্ধার হওয়ায় এবং হত্যার আলামত থাকায় কোন দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলেও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

পরিচয় শনাক্ত ছাড়া বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন হয়ে যাওয়ায় নানা প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে জনমনে। লাশগুলো কার? আশপাশে কোথাও হত্যা করে নদীতে ফেলা হয়েছে না ভেসে এসেছে? কারা হত্যা করলো তাদের? তারা কি ধরা পড়বে? আর এই হত্যা মামলার ভবিষ্যৎ কি?

সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গেল ৪ মার্চ মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ইছামতির শাখা নদীতে তিন খালের মোড় থেকে ত্রিপল-কম্বল-ছালা দিয়ে পেঁচানো এবং বুকে ইট ও ভারি ওজনের বাটখারা বাঁধা অবস্থায় আনুমানিক ৪০-৪৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দিনই পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআইসহ একাধিক সংস্থা পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল না হওয়ায় ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয় আঞ্জুমান মুফিদুলের কাছে। এরপর শ্রীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

শ্রীনগর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, লাশ উদ্ধারের পর থেকেই পুলিশ পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করেছে। এখন পর্যন্ত পরিচয় জানা যায়নি। তবে লাশের শরীরে হত্যার আলামত পাওয়ায় শ্রীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

এই ঘটনার একদিন পর ৫মার্চ মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের টরকি এলাকায় আফিজউদ্দিন মৃধার বাড়ির পেছনে কালিদাস সাগর নদীর পারে কচুরিপানা ও কাঁদার মধ্য থেকে আনুমানিক ৩০-৩৫বছর বয়সী অজ্ঞাত পুরুষের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর লাশের পরিচয় শনাক্তে কাজ শুরু করে একাধিক সংস্থা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই লাশের পরিচয় না পাওয়ায় ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য ‍তুলে দেয়া হয় আঞ্জুমান মুফিদুলের কাছে।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. তারিকুজ্জামান বুধবার সন্ধ্যায় জানান, উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত মরদেহের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আদিবুল ইসলাম বলেন, লাশগুলোর পরিচয় শনাক্তের জন্য পুলিশসহ একাধিক সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু মরদেহগুলো অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়ায় আঙুলের দাগ উঠে গেছে। যার ফলে লাশের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি। তারপরও পুলিশ আরও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছে। দেশের বিভিন্ন থানায় নিখোঁজদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যেহেতু পরিচয়ই শনাক্ত হওয়া যায়নি সেক্ষেত্রে এই মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ কি হতে পারে বা যারা তাদের হত্যা করেছে তাদের কখনো ধরা সম্ভব হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে বেশিদিন হয়নি, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি, খুনিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং আমরা তাদের জনসম্মুখে নিয়ে আসতে পারবো।

error: দুঃখিত!