মুন্সিগঞ্জ, ২৩ জুলাই, ২০২০, সদর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে জাল আয়রনের ফ্যাক্টরির মালামাল লুটপাট ও জোর করে দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার (২২ জুলাই) রাতে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগের সূত্র ধরে মালিরপাথর এলাকার মৃত হাজ্বী মোঃ জিন্নত আলী মেম্বার এর পুত্র রবিউল আউয়াল সোহেল (৩৯) জানান, গতকাল বুধবার (২২ জুলাই) সকাল ১১ টায় দেশী-বিদেশী অস্ত্র ও প্রায় অর্ধশত ক্যাডার বাহিনী সহ গোলাম মোস্তফা আমার ভাড়া দেয়া কারেন্ট জালের স্ত্রী মেশিন ও ফ্যাক্টরি দখলের চেষ্টা ও লুটপাট করে।
এসময় মেশিনারিজ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র খুলে নিয়ে মেশিন অকেজো করে দিয়ে যায় এবং আমার ফ্যাক্টরির স্টাফদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দিয়ে যায় তারা।
ব্যবসায়ী রবিউল আউয়াল সোহেল আরও জানান, তার পিতা মৃত হাজ্বী মোঃ জিন্নত আলী মেম্বার ২৮ বৎসর আগে একটি ইকো ক্যালেন্ডার মেশিন মুক্তারপুর এলাকার ব্যবসায়ী সাবির হাজ্বীর কাছ থেকে কিনে নেন। এরপর ২৫ বৎসর তিনি নিজেই ব্যবসা করেন। ২০১৮ সালে তিনি মেশিন সহ পুরো ফ্যাক্টরিটি তিনি স্থানীয় হাজ্বী মোকলেস এর কাছে ২ বৎসরের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা চুক্তিতে ভাড়া দেন।
চলতি বছরের জুন মাসের ১২ তারিখে ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর মৃত হাজ্বী মোঃ জিন্নত আলী মেম্বার এর সম্পত্তির ওয়ারিশ রবিউল আউয়াল সোহেল তার নামের ইস্তারি মিল বুঝে নেয়ার জন্য হাজ্বী মোকলেস এর কাছে যান। যাওয়ার পর তিনি পরের দিন ফ্যাক্টরিটি বুঝিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি চলে আসেন।
পরদিন ১৩ জুন সকালে ফ্যাক্টরি বুঝে নিতে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাননি। ঐদিন বিকালে হাজ্বী মোকলেস পঞ্চসারের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কে নিয়ে সরকারপাড়া তার বসতবাড়িতে আসেন।
এরপর তারা দুজনে আলাপ করে তার মতের বিরুদ্ধে আরও কয়েকদিন চুক্তি বাড়ানোর জন্য জোরদবরদস্তি করেন। এরপর তারা বাসা থেকে চলে যান।
চেয়ারম্যান ৩০ জুনের মধ্যে ফ্যাক্টরি বুঝিয়ে দিতে সময় নিলেও ফ্যাক্টরি বুঝিয়ে না দিলে রবিউল আউয়াল সোহেল চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার বাসায় যান। এরপর তিনি সকালে থেকে বিকেল পর্যন্ত বসিয়ে রাখেন। বিকালে তিনি পরদিন সকালে আসতে বলেন। পরদিন আবার সময় নেন। এরকম করে সময় পার করেন।
এরপর চেয়ারম্যান তার লোক মারফত মালামাল না বুঝিয়ে দিয়ে চাবি দিয়ে ৩ জুলাই তার কাছে পাঠান। পরদিন ৪ জুলাই রাতে মোস্তফার ব্যক্তিগত কর্মচারী মাসুদ ও মুসা ফ্যাক্টরিতে গিয়ে নাইট গার্ড সহ মেশিন চালানোর স্টাফদের বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর ১৯ জুলাই ফ্যাক্টরির দায়িত্ব নেন ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমরান হোসেন। দায়িত্ব নেয়ার ২ দিন পর ২২ জুলাই পঞ্চসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা তার শশুড়ের ফ্যাক্টরি দাবি করে প্রায় অর্ধশত লোকজন নিয়ে এসে বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রাংশ লুটপাট ও করে নিয়ে যায়। এবং যাওয়ার সময় তারা আবার আসবেন এবং ফ্যাক্টরি দখল করবেন বলে হুমকি দিয়ে যায়।
এদিন রাতে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ব্যবসায়ী রবিউল আউয়াল সোহেল।
ফ্যাক্টরির নিরাপত্তারক্ষী শাহজাহান জানান, ‘যেহেতু ফ্যাক্টরি বন্ধ আমি ফ্যাক্টরিতে ছিলাম না। দূরে ছিলাম। বাসায় আসার পর শুনলাম চেয়ারম্যান সবকিছু ভাইঙা নিয়া যাইতাছে।এটা শোনার পর ফ্যাক্টরির সামনে গিয়ে দেখি চেয়ারম্যান বসা আর তার লোকজন সবকিছু গাড়িতে ভরে নিয়ে যাচ্ছে।’
ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, ২৮ বৎসর যাবৎ ব্যবসা করছি, গোলাম মোস্তফা কোনদিনওতো বললোনা ফ্যাক্টরি তার শশুড়ের। এখন হঠাৎ করেই তিনি সম্পত্তি দখলের পায়তারা করছেন। তার শশুড়ের সাথে আমার বাবার ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ছিলো এটা সত্যি। তবে তাদের সাথে ২০০৭ সালে অংশিদারী ব্যবসা পৃথক হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমাদের কি অপরাধ ছিলো। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি এত ক্ষমতা কই পান? প্রশাসনের কাছেও অনুরোধ তারা যাতে প্রভাবিত না হয়ে যাচাই-বাছাই করেই ব্যবস্থা নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা লুটপাট ও দখলের চেষ্টার অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘মেশিন আমার শশুড়ের। তারা স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মেশিনটি নিজেদের দাবি করছে। এটা প্রমাণিত হয়েছে। স্বাক্ষী-প্রমান আছে। থানায় সন্ধ্যার সময় আসবেন, আরও জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বলেন, ‘গতকাল রাতে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্তের স্বার্থে আজ দুই পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।