১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | দুপুর ১২:৫৬
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মুন্সিগঞ্জে আ.লীগের মনোনয়ন প্রার্থীর সভা থেকে ‘অভিযুক্ত রাজাকারের’ নারীবিদ্বেষী বক্তব্য (ভিডিওসহ)
খবরটি শেয়ার করুন:

শিহাব আহমেদঃ মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ীতে নারী ও হিন্দু নেতৃত্ব বিরোধী বক্তব্য দিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জগলুল হালদার ভুতু। যার বিরুদ্ধে জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ও দেশ বিরোধী ভূমিকার অভিযোগ তুলেছেন বিভিন্ন সময়ে।

ভুতু বলেন, ‘আমরা দুর্ভাগা, এখানে মনোনয়ন দেয় একজন মহিলাকে। অপর দুটি আসনে মৃনাল কান্তি দাস ও সুকুমার রঞ্জন ঘোষ নামে দুজন হিন্দুকে। আমরা মরে গেলে যারা আমাদের জানাযায় অংশ নিতে পারবে না।’

গত শনিবার বিকালে টংগিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও বাজারে একাদশ জাতীয় সংসদ র্নিবাচনের মনোনয়ন প্রত্যাাশী অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলমের এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম যিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের মামলা লড়েছেন তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন।

মাহবুব আলমকে মনোনয়নের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা মুন্সিগঞ্জ ও টঙ্গীবাড়ির মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি করি মাহবুব আলম সাহেবকে যেন টঙ্গীবাড়ি-লৌহজং এলাকায় মনোনয়ন দেওয়া হয়।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের পাশে দাঁড়িয়ে তার পক্ষে সমর্থন করতে গিয়েই নারী নেতৃত্ব এবং হিন্দু বিদ্বেষী বক্তব্য রাখেন জগলুল হালদার ভুতু। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেননি।

এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির এই বক্তব্যের পরপরই মুন্সিগঞ্জের সবকয়টি নির্বাচনি এলাকায় এবং বিশেষ করে টংগিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এই ব্যাপারে টংগিবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদ জানিয়েছেন, যারা এই জাতীয় কথা বলে তারা আওয়ামী লীগের অসম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা লালন করে না। তারা অন্য কোনো শক্তির এজেন্ট হিসেবে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে তিনি জানান।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এমিলি পারভীন জানান, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এই বক্তব্য রেখেছেন। সংখ্যালঘু মৃনাল কান্তি দাস ও সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এবং সব ধর্মের লোক নিয়েই আমাদের এই বাংলাদেশ।

এমিলি পারভীন বলেন, ‘নারীর অগ্রযাত্রার কারণেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন উদ্যোগ নিয়েছেন, তখন আওয়ামী লীগেরই এক দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতার এমন বক্তব্য দুঃখজনক।’

‘আমাদের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন একজন নারী হয়েও যখন অনেক বেশি জনপ্রিয় আর গ্রহণযোগ্য, সেই জ্বালা সহ্য করতে না পেরেই এমন বক্তব্য দিয়ে নিজেদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন ওই নেতা।’

লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গণি তালুকদার বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে তার গভীর ভালোবাসা থাকতে হবে। এমন সুরসুরি মার্কা ও নিচু শ্রেণির কথা বলে মানুষের মন জয় করার দিন চলে গেছে। এটা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে কথা, আমাদের ইসলাম ধর্মে এমন বিধিনিষেধ নেই।’

‘বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্পীতির দেশ। যে দেশের মানুষ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করে। পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল আমাদের বাংলাদেশ। সেই অর্জন বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

তবে এই বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের ৩টি আসনের সংসদ সদস্যের কেউই সরাসরি মন্তব্য করেননি।

আর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ভুতুর বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বক্তব্যের ভিডিওঃ

ভুতু হালদারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার অনুসন্ধান করতে গেলে জানা যায়, জেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বানিয়াইল ভুকেলাশ গ্রামে হানাদারদের সহায়তায় তিন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে ভুতু হালদার ও তার সহযোগীরা। তারা হলেন অজু মোল্লা, মহি দেওয়ান ও রুস্তম শিকদার। এ ঘটনার জের ধরে পরবর্তী সময়ে ভুতু হালদারের পিতামহ অর্থাৎ দাদা স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আরফ আলী হালদার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হন। ওই সময় ভুতু পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের পর ভুতু বেশ কয়েক বছর পলাতক ছিলেন।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার কাদের মোল্লাও অভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভুতু হালদার, তার বাবা মনতাজউদ্দীন হালদার এবং দাদা আরফ আলী হালদার তারা সবাই রাজাকার ছিলেন। আমি নিজে টংগিবাড়ী এলাকায় যুদ্ধ করেছি। ওই সময় আমরা রাজাকারির কারণে ভুতুদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই এবং তার দাদাকে পিটিয়ে মেরে ফেলি। ভাগ্যক্রমে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ভুতু। স্বাধীনতার পর, বঙ্গবন্ধু যখন সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, তখন এ সুযোগ নিয়ে সে এলাকায় ফিরে আসে।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অজু মোল্লার নাতি আশরাফ বলেন, আমি বাবা-চাচাদের মুখ থেকে যতটুকু শুনেছি, ভুতু হালদার ও তার পরিবারের লোকজন পাকিস্তানিদের সহায়তায় আমার দাদাসহ তিনজনকে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা করে। শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি ও আমরা এ ধরনের মানুষকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রত্যাশা করি না।

error: দুঃখিত!