মুন্সিগঞ্জ, ২৮ মার্চ, ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জে আলোচিত তুহিন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শওকত দেওয়ানকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তাকে ‘হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে গড়িমসি করছে পুলিশ’। তাই শওকতের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার তথ্য আদালতে গোপন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত অন্য ৩ টি মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়। এসব অভিযোগ মামলার বাদীর।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ টংগিবাড়ী উপজেলার পুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে প্রতিপক্ষের হাতে নৃশংসভাবে পিটুনির শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান সদর উপজেলার বড় মোল্লাকান্দি এলাকার আলমগীর সরকারের ছেলে শাহ কামাল সরকার তুহিন (২২)।
এ ঘটনায় টংগিবাড়ী থানায় ২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তুহিনের পিতা। সেই মামলার এজাহারভুক্ত ২ নং আসামি মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত দেওয়ান (৪৭)।
দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর তাকে গেল ১৬ মার্চ টংগিবাড়ীর পুরা বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে আদালতে উঠালে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।
দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা শওকাত দেওয়ান গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে স্বস্তি পায় তুহিনের পরিবার। কিন্তু দুইদিন পর তারা জানতে পারে, তুহিন হত্যা মামলায় শওকত দেওয়ানকে গ্রেপ্তারই দেখানো হয়নি। এ নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
মামলার বাদী নিহত তুহিনের পিতা আলমগীর সরকার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার ছেলে মারা গেছে এক বছর হয়ে গেছে। ও মেধাবী ছাত্র ছিলো। ঢাকার দনিয়ায় বেসরকারি স্কুলে পড়তো। এসএসসিতে এ প্লাস পেয়েছিলো। আমার ছেলের সাথে কারও শত্রুতা ছিলো না। ৪০-৪৫ জন মিলে ব্যারিকেড দিয়ে ওকে পিটানো হয়। মারতে মারতে ওকে পুকুরে ফেলা দেয়া হয়। আমার ছেলে এসময় ওদের কাছে জীবনভিক্ষা চায়। ওরা কারও কথা শোনেনাই। ওরা আমার ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।’
তিনি বলেন, ‘এ মামলার আসামিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় শুরু থেকেই তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের গড়িমসি ছিলো। সর্বশেষ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শওকত দেওয়ানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে এলাকায় স্বস্তি নেমে আসে। কিন্তু দুই দিন পর আমরা জানতে পারি তাকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হত্যা মামলার আসামি হলেও পুলিশ আদালতের কাছে বিষয়টি লুকিয়েছে। এ নিয়ে তুহিন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুন্সিগঞ্জের দিঘিরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহ আলমের সাথে ১১ দিন ধরে ধরনা দিলেও তিনি বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। ফলে আসামি শওকত দেওয়ান যেকোন কৌশলে জামিনে বের হয়ে পলাতক হওয়ার আশঙ্কা করছি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শওকত দেওয়ান গ্রেপ্তার হওয়ার পরও তুহিন হত্যা মামলার বিষয়ে আদালতকে অবগত না করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এখনো এ বিষয়ে আদালতকে জানানো হয়নি। তবে, শীঘ্রই জেলহাজতে থাকা তুহিন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শওকত দেওয়ানকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতের কাছে আবেদন জানানো হবে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক মো. রফিক জানান, গেল ১৬ মার্চ টংগিবাড়ীর পুরা বাজার থেকে শওকত দেওয়ানকে আমরা গ্রেপ্তার করি। তার বিরুদ্ধে সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাসহ সর্বমোট ৩ টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিলো। সেসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। তবে, তুহিন হত্যা মামলার বিষয়টি ডিবির এই কর্মকর্তা এড়িয়ে যান।
মুন্সিগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন জানান, শওকত দেওয়ানকে তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে এখনো কোন আবেদন করেননি।