৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ১০:১৬
মুন্সিগঞ্জে অালু’র বীজ বপন শেষের পথে, ১৫ লাখ টন পুরনো আলু অবিক্রীত
খবরটি শেয়ার করুন:

আলুর নতুন মৌসুম শুরু হতে আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। বাজারে নতুন আলু এলে পুরনো আলুর কদর থাকে না। দামের পারদও পড়তে থাকে দ্রুত। অথচ এখনও হিমাগারে পড়ে আছে ২০ লাখ টনের বেশি আলু। আগামী ১৫ দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টন আলু বিক্রি হলেও প্রায় ১৫ লাখ টন আলু অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা করছেন হিমাগার মালিকরা। বর্তমান বাজারদরে যার দাম হাজার কোটি টাকা। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি লোকসানে পড়বেন কৃষক।  —

প্রায় ১৫ লাখ টন আলু নিয়ে হিমাগার মালিক, কৃষক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কান্নাকাটির মধ্যেই ভারত থেকে ৬ থেকে ৭ লাখ টন আলু আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ। চলতি সপ্তাহে আলু আমদানির বিষয়ে পরিপত্র জারি হতে পারে বলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। যদিও গত বছরের নভেম্বরে ভারত ও শ্রীলংকা দূতাবাস বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছিল। ভারত সে দেশের আলু রফতানিকারকদের ৫০ শতাংশ আর বাংলাদেশ ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়। বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতি গত বৃহস্পতিবার আলু আমদানির অনুমতি না দিতে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে।

বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মেজর (অব.) জসিমউদ্দীন বলেন, এ বছর প্রায় ৫০ লাখ টন আলু মজুদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাত-আট লাখ টন বীজআলু। বাকিটা খাওয়ার আলু। এখনও দেশের প্রায় ৩০০ হিমাগারে ২০ লাখ টনের বেশি আলু রয়েছে। আগামী ১৫ দিন খাওয়ার পর আরও ১৫ লাখ টন আলু বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার আলু আমদানির অনুমতি দিলে তা দেশের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ‘গজব’ হিসেবে আবির্ভূত হবে। এতে আলু চাষিরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বেন। তিনি সরকারের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, টেস্ট রিলিফসহ অন্যান্য খাতে চাল ও গমের পাশাপাশি আলু সরবরাহের জন্যও অনুরোধ জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে ৯০ লাখ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলে চাষিরা আগামী আলুবীজ রোপণ শেষ করেছেন। রংপুর, বগুড়া ও মুন্সীগঞ্জে আলুবীজ লাগানোও প্রায় শেষের পথে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ৬ লাখ টন আলুবীজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বিএডিসি মাত্র ২৩ হাজার টন আলুবীজ সরবরাহ করছে। বাকি বীজ কয়েকটি কোম্পানির কাছ থেকে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে গত বছর বিক্রি হওয়া সাড়ে তিন হাজার টাকার বীজআলুর বস্তা এবার পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বস্তাপ্রতি বীজআলুর দাম বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। দিনাজপুর ও নীলফামারীর কৃষকরা বলছেন, তারা বিএডিসির আলুবীজ ডিলারের কাছে পাচ্ছেন না। তবে বাড়তি দামে মিলছে বিএডিসির আলুবীজ। দিনাজপুরের কাহারোলের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ডিলারের কাছে পাওয়া

না গেলেও কিছু বীজ ব্যবসায়ীর কাছে বাড়তি দামে বিএডিসির আলুবীজ পাওয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক আনোয়ার ফারুক বলেন, দেশের কোথাও আলুবীজের কোনো সংকট নেই। তবে কয়েকটি কোম্পানি বেশি দামে আলুবীজ বিক্রি করছে বলে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ভালো মানের বীজ ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ায় দেশ আলু উৎপাদনে বিশ্বে সাত নম্বর অবস্থানে উঠে এসেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ভাতের পর এখন দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য ও খাদ্যশক্তির উৎস হচ্ছে আলু। গত পাঁচ যুগে এর উৎপাদন বেড়েছে ২৬ গুণ। আর মাথাপিছু আলু খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ১০ গুণ। দেশের খাদ্যশক্তির এখন দ্বিতীয় প্রধান উৎস হচ্ছে আলু। সেই আলুই কৃষকদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই বলছেন, আলু রফতানি বাড়াতে পারলে কৃষকের এই হাহাকার কমানো সম্ভব।

error: দুঃখিত!