মুন্সিগঞ্জ, ২৭ আগস্ট, ২০২১, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আধারা ইউনিয়নে ড্রেজারে বালু ভরাট নিয়ে দ্বন্দের জেরে প্রকাশ্যে পিস্তল-চাপাতি-ছুড়ি নিয়ে হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হলেও মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দিচ্ছেন বলে সরকারি হরগঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী।
হামলার ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় গত ২৩ আগস্ট ১৩ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জন উল্লেখ করে একটি বিস্ফোরক মামলা দায়ের করেন মনির হোসেন মালত এর পুত্র সুমন মালত (২৫)।
তবে পুলিশ সে মামলায় এক আসামীকে আটক করতে সক্ষম হলেও বাকি আসামীরা এখনো অধরা।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মুন্সিগঞ্জ সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর আল ইমরান বলছেন, বিস্ফোরক মামলায় একজন আটক আছে৷ বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশ ও মামলার বাদী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর পুলিশ ঐ এলাকার আলী বেপারীর ছেলে সরকারি হরগঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বেপারী (৩২) থানায় আসলে তাকে থানার একটি কক্ষে বসিয়ে রাখে পুলিশ। দিনভর থানায় রেখে রাতে মামলা থেকে তার নাম বাদ দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ ঘটনার দিন মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় রেখেছিলো পুলিশ।
মামলার বাদী সুমন মালত বলছেন, জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের চাপে মামলা থেকে ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর এর নাম বাদ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে ছাড় পেয়ে এখন বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে আমাকে অব্যাহতভাবে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলেছেন। এ ঘটনায় আমি পরে ২৪ আগস্ট আলমগীর হোসেন বেপারী’র নাম উল্লেখ করে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১২৯৯) করেছি। কিন্তু পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আধারা ইউনিয়নের সৈয়দপুরের দক্ষিণকান্দি এলাকায় গত শনিবার, ২১ আগস্ট সকাল ১০ টা’র দিকে আসামী আনিছ মৃধা (৩৮), মীর হোসেন মৃধা (৩০), বাবুল মৃধা (৫০), আবুল মৃধা (৫৫), সর্বপিতা: মৃত আকবর মৃধা, অন্তর মৃধা (২০), পিতা: আবুল মৃধা, সফি খান (৪৫), জসিম খান (৫০), উভয় পিতা: মৃত লোকমান খান, মহাসিন ভূইয়া (৪০), পিতা: মীরু ভূইয়া, ফরিদ দেওয়ান (২৭), পিতা: জান শরিফ দেওয়ান, আল আমিন আখন্দ (৩৫), পিতা: মেহের আখন্দ, রাজন বেপারী (২৫), পিতা: রহিম বেপারী, কাউসার সরদার (৪০), পিতা: রহমান সরদার, গাজী বেপারী (২৫), পিতা: আলী বেপারী, সর্বসাং- সৈয়দপুর দক্ষিণকান্দি সহ অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জন সোহরাব চেয়ারম্যানের বাড়ির ঘাটলায় ড্রেজারে বালু আনার ৬ ইঞ্চি ১৭ টি প্লাস্টিকের পাইপ ভেঙে ফেলে। যার আনুমানিক মুল্য ৫০ হাজার টাকা। এরপর আসামীদের বাঁধা দিলে তারা হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যায়। পরে তারা বিকাল ৫:৩০ মিনিটের দিকে আবার বিদেশী পিস্তল, ককটেল, কাঠের ডাসা, রড-হকিস্টিক, চাপাতি ইত্যাদি সহ জাজিরা মিনাবাজারে ত্রাস সৃষ্টি করে। এসময় মামলার বাদী সুমন মালত সহ মোর্শেদ বকাউল, নোয়াব আলী বকাউল, রুবেল বকাউল সহ অন্যারা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যান। এরপর আসামীরা সৈয়দপুর দক্ষিণকান্দি এলাকায় বাদীর ফুফাতো ভাই মোর্শেদ বকাউল এর বাসায় ভাঙচুর চালায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ উল ইসলাম ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর নিজে থানায় এসেছিলো। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে তিনি যে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন এবং থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। আর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে, একজন আটক আছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।