মুন্সিগঞ্জ, ১২ এপ্রিল, ২০২১, মোজাম্মেল হোসেন সজল (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জে নানা অযুহাতে অস্ত্রধারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঘটছে খুন-খারাবি। বাড়ছে চুরি-ডাকাতির ঘটনা। নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ এমনকি ভুক্তভোগী হচ্ছে রাজনৈতিক নেতারাও। নাজুক হয়ে পড়েছে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
সন্ত্রাসীদের হামলার ভয়ে খোদ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন খোদ মুন্সিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান ভুইয়া। তার ও তার আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে প্রকাশ্যে অস্ত্রধারীদের হামলা, গুলি এবং পরবর্তীতে তার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা এবং সেই অস্ত্রধারীদের আটক না করা ও অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান তার ও তার পরিবার। জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন এই নেতা।
গত ২৪ মার্চ রাত সাড়ে ১০ টায় মুন্সিগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকায় সালিশ বৈঠক শেষে সশস্ত্র হামলায় কলেজ ও স্কুল ছাত্র ইমন পাঠান, মাহবুব হোসেন সাকিব ও মুন্সিগঞ্জ পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে পরাজিত প্রার্থী আওলাদ হোসেন মিন্টু প্রধান প্রতিপক্ষের সশস্ত্র হামলায় নিহত হয়। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হলেও হত্যায় ব্যবহ্নত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
গত ৪ মার্চ মুন্সিগঞ্জ সদরের মিরকাদিম পৌরসভায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ফিরোজ মিয়া পরদিন সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত ফিরোজ মিয়া মিরকাদিম পৗরসভার মিরাপাড়া এলাকার প্রয়াত আবদুর রব ফকিরের ছেলে।
এদিকে, গত ২০ মার্চ দিবাগত রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত যে কোন সময়ে মুন্সিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভুইয়ার শহরের খালইস্ট নিজ বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। ডাকাতরা নগদ ৭ লাখ টাকা, ১০ ভরি সোনার গহনা এবং ব্যাংকের চেক নিয়ে যায়। ঘটনার দিন তারা বাসায় ছিলেন না। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও এর কোন কুলকিনারা উদঘাটন হয়নি। ৎ
এর আগে গত বছরের ১৮ মার্চ বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সাইদুর রহমান ও তার স্বজনদের পূর্বশিলমন্দির বাড়িতে পূর্ব বিরোধের জেরে একদল চিহ্নিত অস্ত্রধারী প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে এবং গুলি করে হামলা চালায়। এ সময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয় এবং অস্ত্রধারীরা বাড়িঘর তছনছ করে। এ মামলার প্রধান ৪ আসামি পূর্ব শিলমন্দি গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে নুর মোহাম্মদ, নুর হোসেন ভুইয়ার ছেলে ফিরোজ ভুইয়া, মনির হোসেনের ছেলে রায়হান ও লিটন মৃধার ছেলে তাইজউদ্দিন মৃধাকে পুলিশ আটক করতে পারেনি এবং হামলায় ব্যবহ্নত অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি। তবে, ঘটনার পর গত বছরের ৫ জুলাই পুলিশ রিপন মৃধার ছেলে খোকন ভুইয়াকে আটক করে একটি বন্দুক উদ্ধার করেছিলো। বাকি ৯ আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকা দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে এবং হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর।
হামলা, অস্ত্র, জীবনের নিরাপত্তা এবং সবর্শেষ তার বাড়িতে ডাকাতি সংগঠিত বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভুইয়া বলেন, তিনি ও তার পরিবার এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে আছেন।
তিনি বলছেন, হামলা, গুলি, হুমকি এবং বাড়িতে ডাকাতি হওয়া ঘটনারও কোন সুরাহা পাননি তিনি। মামলার অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে-ফিরছে, হুমকি দিচ্ছে তাকে প্রাণনাশের। প্রায় বছর খানেক আগে পূর্বশীলমন্দি গ্রামে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে তার ও তার স্বজনদের ওপর বিপুল পরিমাণ অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালায় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় একটি বন্দুক উদ্ধারে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান ভুইয়ার চাচাতো ভাই তোবারক হোসেন ভুইয়া বাদী হয়ে ১৩ জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা করেন। সেই মামলার ৪ জন মূল আসামি, যাদের কাছে অস্ত্র ছিলো তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। এরপর তার শহরের খালইস্ট বাড়িতে ডাকাতি হয়। ঘটনার দিন রাত ৯ টার দিকে জরুরি কাগজপত্র নিতে একঘন্টা বাড়িতে অবস্থান করছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান।
তার ধারণা, তাকে হত্যা করতে তার গ্রামের বাড়ি শহরের পূর্বশিলমন্দির সন্ত্রাসীরা এসেছিলো। তাকে না পেয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ চেকবই নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা এবং চেক বইয়ের বিষয়ে একটি জিডি করা হয়েছে। কিন্তু আজোবধি এর কোন তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। সন্ত্রাসীদের হুমকিতে এলাকায় এলেও নিরাপত্তাহীনভাবে চলতে হচ্ছে। তিনি ও তার পরিবারের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওসি মোজাম্মেল হক মামুন বলেন, পূর্বশীলমন্দীর ঘটনার আসামিদের আটক ও অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তাদের আটকের পরই মামলার চার্জশিট প্রদান করা হবে আদালতে।
মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন পিপিএম বলেন, পূর্ব শিলমন্দির ঘটনাটি আমার জানতে হবে। এছাড়া অন্যান্য সংঘর্ষ ও হামলায় ব্যবহ্নত অস্ত্র উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।