মুন্সিগঞ্জ, ২১ নভেম্বর ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৪৭দিন। এমন অবস্থায় দেশের প্রধান অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় ভোটের দিন ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সারাদেশের মত মুন্সিগঞ্জের ৩টি আসনের জন্য জনপ্রিয় ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ প্রস্তুত রেখেছে আওয়ামী লীগ।
‘প্রয়োজন পড়লে’ তাদের ভোটের মাঠে নামাবে দলটি। বিগত দুই সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে স্মরণ করে যতটা সম্ভব নির্বাচনকে বিতর্কমুক্ত রাখতে এই প্রস্তুতি। দলটির হাইকমান্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইতিমধ্যেই জেলার ৩টি আসনে কারা সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়ে কাজ শেষ করেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রোফাইল তৈরি করে ফেলেছে।
ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ভোটার নিয়ে আসতে পারবেন এমন যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বেশি।
তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় বিচরণ, দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক, প্রচার-প্রচারণা, নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ-যোগ্যতা ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করে সরবরাহ করেছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো।
অন্যদিকে, সংসদ সদস্য পদের জন্য সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ রেখে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সবরকমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। হাইকমান্ডের ‘সবুজ সংকেত’ পেলেই প্রকাশ্যে মাঠে নেমে পড়বেন তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের দুর্বল আসনগুলো চিহ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ। ২০০ আসন টার্গেট ধরে এর মধ্যে ১৫০-১৭০টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করে সরকার গঠন করতে চায় দলটি।
জানা গেছে, সারাদেশের যেসব আসনে যারা দুই-তিন বার সংসদ সদস্য থাকার পরও এলাকায় জনপ্রিয় নন বা ভোটারদের আস্থা তৈরি করতে পারেননি এমন আসনগুলোতে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। কিন্তু সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত বা দলে পদ রয়েছে এমন ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাদের নিরুৎসাহিত করা হবে।
কোন আসনে কারা?
মুন্সিগঞ্জ জেলায় ৩ টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এর মধ্যে দুইটিতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রয়েছেন। বাকি একটিতে বিকল্প ধারার মাহি বি চৌধুরী। তবে, গতবারের মত এবারও আওয়ামী লীগের জোট থেকে মুন্সিগঞ্জ ১ আসনে মাহীকে পুনরায় মনোনয়ন দিলে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী দেখা যেতে পারে মাহীর বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ থেকেই একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন এই তালিকায়।
মুন্সিগঞ্জ ২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। গেল ৩ মেয়াদে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এখানকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। চতুর্থবারের মত দল তাকে মনোনয়ন দিলে এমিলির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দল বা বাইরে এখনো শক্ত কোন প্রার্থী দেখা যাচ্ছে না। তবে, শেষ পর্যন্ত এখানে জাকের পার্টি থেকে প্রার্থী দেখা যেতে পারে। তাছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা) নির্বাচনে আসলে প্রার্থী দিবে তারাও। প্রার্থী আসতে পারে তৃণমূল বিএনপি থেকেও। ফলে এমিলি নৌকা প্রতীক পেলে তাকে এসকল প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হবে।
সবশেষ জেলার গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত ৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তৃতীয়বারের মত তিনি এই আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন একাধিক ব্যক্তি।
মুন্সিগঞ্জ ১ ও ৩ আসনে আওয়ামী লীগের বিকল্প স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমনটা এখন অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। তবে তারা কেউই এখনই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। এর মধ্যে কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন।
প্রথমত, তারা দলের কাছে মনোনয়ন চেয়ে নিজেদের নাম আলোচনায় প্রথম দিকে রাখলেন। যাতে আওয়ামী লীগ থেকে অঘোষিতভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহিত করা হলে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন। দ্বিতীয়ত, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীকে বর্জন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন কয়েকজন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের জানুয়ারির ৭ তারিখে।