৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | রাত ২:১৮
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মুন্সিগঞ্জের এই হাটে বিক্রি হয় শত শত নৌকা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে শত বছরের প্রাচীন হাটে নৌকার কদর বেড়েছে। মাছ ধরা, শাপলা তোলা ও নিচু এলাকায় চলাচলের প্রয়োজনীয়তায় এই নৌকার ব্যবহার হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে।

শিবরামপুরের সাপ্তাহিক এই হাটে নৌকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্তত ৫০জন কারিগর। আশপাশের উপজেলাগুলোতে কারিগর ও বেপারীরা নৌকা নিয়ে আসেন হাটে। সপ্তাহে বিক্রি হয় দেড়শো থেকে দুইশো নৌকা। সারাবছরই বসে এই নৌকার হাট, তবে বর্ষায় বাড়ে এর কদর।

শ্রীনগরের শিবরামপুরে শতবছরের প্রাচীন জমজমাট নৌকার হাট। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

এই পেশার সাথে জড়িতরা জানান, আশপাশের জলাশয় বিশেষ করে আড়িয়াল বিলের বেশ কয়েকটি অংশে অবৈধ ভরাটের প্রভাব পড়েছে এই হাটের উপর। এতে গেল কয়েকবছরের ধরেই বিক্রি কমেছে।

নৌকা কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শিবরামপুরে ইছামতী নদী তীরে শতাধিক বছর ধরে বসে কোসা নৌকার হাট। সপ্তাহের প্রতি শনিবার বিভিন্ন সাইজের কোসা নৌকার পসরা সাজিয়ে বসেন নৌকা বিক্রেতারা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠে প্রাচীন এই হাট। ৩০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় নৌকা বিক্রির পেশায় জড়িত দোহারের নিমাই সরকার।

হাটে কথা হলে তিনি জানান, সাপ্তাহিক এই হাটে সিরাজদিখান ও লৌহজং উপজেলা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে এখানকার নৌকার চাহিদা ব্যাপক। এছাড়া স্থানীয় আড়িয়াল বিলকে কেন্দ্র করে বর্ষা মৌসুমে শাপলা তোলা ও মাছ ধরায় এই নৌকার ব্যবহার রয়েছে।

তিনি জানান, আড়িয়াল বিলের জৌলুস হারিয়ে যেতে বসেছে। শাপলার অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত এলাকাগুলোতে দেদারছে বালু-মাটির অবৈধ ব্যবসা চলায় পানি কমে কৃষক বিপাকে পড়েছে। ফলে, তাদের কাছে নৌকার চাহিদা কমেছে।

চাহিদা পূরণে ঐতিহ্যবাহী শিবরামপুরের হাটে বৃটিশ আমল থেকেই সপ্তাহে একদিন বসে নৌকার হাট। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

নৌকার হাটে বেপারির কাজ করেন জুয়েল সরকার। কারিগরদের কাছ থেকে পাইকারী দরে নৌকা কিনে খুঁচরা পর্যায়ে বিক্রি করেন তিনি। হাটের এই বেপারি জানালেন, প্রতি হাটে ৪০-৫০টি নৌকা নিয়ে আসেন তিনি। এর মধ্যে ৩০-৩৫টা বিক্রি হয়। খুঁচরা পর্যায়ে প্রকারভেদে দুই হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দরে নৌকাগুলো বিক্রি হয়ে থাকে।

চান কুমার মন্ডল নামের আরেক কারিগর বলেন, এবছর বর্ষা মৌসুমে পানির উচ্চতা কম হওয়ায় নৌকার বিক্রি কিছুটা কম হয়েছে। তারপরও প্রতি সপ্তাহে দেড়শো-দুইশো নৌকা বিক্রি হয়েছে শিবরামপুরের হাট থেকে।

শিবরামপুর নৌকা হাটের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইছামতী নদী ও আড়িয়ল বিল কেন্দ্রিক জীবনযাত্রায় বর্ষাকালে এক সময় মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা ছিলো কোসা নৌকা। বর্ষা মৌসুমে জমিতে কৃষিকাজ না থাকায় বছরে তিন/চার মাস নৌকা তৈরি করে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন স্থানীয় অন্তত অর্ধশত পরিবার। তবে আগের মতো বহতা নেই ইছামতী নদীর। জৌলুষ হারিয়েছে আড়িয়ল বিল। আশেপাশের জলাশয় ভরাট করে ফেলায় কমেছে নৌকার চাহিদা। এ কারণে ভালো নেই নৌকা তৈরির কারিগররা। নৌকা বিক্রি করে এখন আর লাভের মুখ দেখছেন না তারা। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই অনেকে নৌকা নিয়ে হাটে আসেন।

error: দুঃখিত!