১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ১০:৩৪
মুক্তারপুর সেতুর সামনে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি, নিরব সেতু কতৃপক্ষ!
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৩ জুলাই ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জ জেলা সদর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের প্রধান প্রবেশদ্বার মুক্তারপুর সেতুর মুখে সিএনজি স্ট্যান্ডের সামনে সামান্য কয়েক ফুট সড়কের কারণে জনসাধারণের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের।

সামান্য বৃষ্টি হলেই এখানে জমে থাকে পানি। এতে সৃষ্টি হয় যানজট। জমে থাকা পানিতে যানবাহনের চাকার আঘাতে পিচ-ঢালাই উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। প্রায় সময় এসব গর্তে পরে উল্টে যায় যানবাহন, ঘটে দুর্ঘটনা।

প্রতি বর্ষা মৌসুম জুরেই ডুবে থাকে সড়কের এই অংশটি। সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মুখে বললেও সেতু কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি দীর্ঘদিনেও।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মুক্তারপুর সেতুর প্রবেশমুখের গোলচত্বর সড়কটি পানিতে ডুবে আছে। সড়কের মধ্য দিয়ে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিশুক, মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করছে। পানির নিচের গর্তে পড়ে যাত্রী ও মালবাহী ব্যাটারি এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। গর্ত এড়িয়ে চলতে গিয়ে সেতু মুখের চারটি সংযোগ সড়কে গাড়ির জটলা বাঁধে। এসময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের যানবাহনকে গর্ত চিহ্নিত করে নিরাপদ স্থান দিয়ে চলতে সহযোগিতা করতে দেখা যায়।

মুক্তারপুর ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তারপুর সেতু প্রবেশ মুখ ও সংযোগ সড়কগুলো মুন্সিগঞ্জের মানুষের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ পথ দিয়ে সেতু পারাপার হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর ও টংগিবাড়ী উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করে। অথচ সামান্য বৃষ্টি হলে গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গাটিতে জলবদ্ধতা তৈরি হয়। এ জলাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচল করার ফলে চাকার আঘাতে সেতুর প্রবেশ মুখে বড় বড় গর্ত হয়েছে। নিরাপদে চলতে গিয়ে সেতু মুখের চারটি সংযোগ সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি হচ্ছে। যানবাহন চলতে গিয়ে প্রায় গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে। এর ফলে এ পথের চালক, যাত্রী, পথচারী সবাইকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতুর প্রবেশ মুখের গোলচত্বরটি পাশের সড়ক ও নালার তুলনায় নিচু। সড়কের পাশের নালা গুলোও ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। সড়কের পাশের জলাশয় গুলোও ভরাট করে ফেলেছে স্থানীয়রা। যার কারনে গত তিনবছর ধরে এ সেতুর ঢাল, মুক্তারপুর স্ট্যান্ডের এই সড়কটিতে সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা পানি জমে থাকে। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে সেতুর ঢাল থেকে ট্রাফিক পুলিশ বক্স, সিএনজি স্ট্যান্ড হয়ে উত্তর দিকে ২০০ মিটার এবং সেতুর পূর্বপাশে আরও ২০০ মিটার জায়গাজুড়ে জলাবদ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। যার মধ্য দিয়ে পথচারি, যানবাহন চলতে গেলেই দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় শাহরিয়ার শরিফ নামে এক ব্যাক্তি বলেন, জমে থাকা পানির নিচের গর্ত বোঝার উপায় নেই। গত কয়েকদিন ওই গর্তে পড়ে ৪-৫ টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহন উল্টে গেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এর আগে গত দুবছর একই জায়গায় গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা ঘটেছে। কয়েক বছর ধরেই এমন অবস্থা। অথচ এ সড়কের দায়িত্বে থাকা কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।

সেতু এলাকার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি ছাড়াই সড়কের মধ্যে সারা বছর কাদা-পানি থাকে। বৃষ্টি হলে পুরো সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। পানির ওপর দিয়ে যখন গাড়ি চলে, ঢেউয়ের করণে সেই পানি দোকানের মধ্য আছড়ে পড়ে। এতে মালামাল ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়।

দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান অটোরিকশাচালক আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন,সড়কে জলাবদ্ধতার কারনে মুক্তারপুর স্ট্যান্ডের যাত্রীরা গাড়িতে উঠা-নামা করতে পারছেনা। পানির জন্য সড়কের কোথায় গর্ত, কোথায় নেই, তা বোঝা যায় না। গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকবার আমার নিজের গাড়ি যাত্রী নিয়ে কাত হয়ে পড়ে গেছে। ইচ্ছেমতো গাড়ি চালানো যায় না। সবসময় যানজট লেগেই থাকে।

মুন্সিগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো.আল আমিন বলেন, কয়েক বছর ধরে সেতুর প্রবেশ মুখে এ দূরাবস্থা। সেতু বিভাগ সাময়িক কিছু ব্যবস্থা নিলেও সেটি টেকসই হচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। যানবাহন গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং দুর্ঘটনা রোধে আমাদের যতটুকু করণীয় আছে আমরা করছি।

তবে এ সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য একটি ড্রেন নির্মাণ করা দরকার। সেই সঙ্গে সেতু মুখের গোলচত্বরটি উঁচু করা খুবই জরুরী।

বাংলাদে সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সড়কের গর্ত দূর করতে বিভিন্ন জায়গায় ইট বিছানো হয়েছিল। কিছু স্থানে ঢালাই দেওয়া হয়েছিল। বৃষ্টির পানিতে সেগুলো উঠে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তারপুর সেতুর এ অংশে একটি টোলপ্লাজা হবে। টোলপ্লাজার কাজের সময় জলাবদ্ধতার জায়গাটি উঁচু করা হবে। সেই সঙ্গে স্থায়ীভাবে পানি নিস্কাশনের জন্য টোলপ্লাজার এখান থেকে একটি ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’

error: দুঃখিত!