২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ১০:২৯
মুক্তারপুরে সীমাহীন গতিতে তৈরী হচ্ছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক কারখানায় অসীমাহীন গতিতে নিষিদ্ধ কারেন্টজাল তৈরী করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ কারেন্টজাল তৈরী বন্ধে অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় না রাখায় অসাধু কারখানার মালিকরা বেশী মুনাফার আশায় অনেকটা প্রকাশ্যেই তৈরী করে চলছে নিষিদ্ধ কারেন্টজাল।

প্রশাসন যে পরিমান কারখানায় অভিযান চালিয়েছে তা নিষিদ্ধ কারেন্টজাল উৎপাদন বন্ধে যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সরেজমিনে পঞ্চসার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, মুক্তারপুর, নয়াগাঁও, মিরেশ্বর, বিসিক , ডিঙ্গাভাঙ্গা , দেওয়ান বাজার, মালির পাথর , মস্তান বাজার, মিরকাদিম এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিক কারখানায় প্রকাশ্যে তৈরী হচ্ছে নিষিদ্ধ কারেন্টজাল।

প্রশাসন একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ফিরে আসার পর পর মূহুর্তের মধ্যে জরিমানাকৃত কারখানাসহ অন্যান্য সকল কারখানাগুলো পূনরায় সচল হয়ে যায়। তাছাড়া মুক্তারপুর ফেরিঘাট থেকে শুরু করে ফিরিঙ্গীবাজার পর্যন্ত এলাকায় স্থল ও নদী পথে প্রতিনিয়ত ট্রাক ও ট্রলারসহ বিভিন্ন যানে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে কারেন্টজাল সর্বরাহ করে কারেন্টজাল ব্যবসায়ীরা।

তাছাড়া মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটেও বিভিন্ন লঞ্চে করে নিষিদ্ধ কারেন্টজাল দক্ষিনবঙ্গে পাচার করা হয়। নদীতে নৌ- পুলিশের টিম এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না দেওয়ায় এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ নদীতে থাকা ট্রলার মালিকদের।

পঞ্চসার ইউনিয়নের বাসিন্ধা মাহিদুল হাসান জানান, আমাদের এলাকার সকল কারখানাগুলো সচল রয়েছে। প্রশাসন একটিতে অভিযান চালালে বাকীরা মুহুর্তের মধ্যে কারখানা বন্ধ করে দেয়। প্রশাসন চলে গেলে আবারো শুরু হয় নিষিদ্ধ কারেন্টজাল উৎপাদন। দেশের মৎস্য সম্পদকে বাঁচাতে কঠোর হস্তে নিষিদ্ধ কারেন্টজাল উৎপাদিত কারখানাগুলো সনাক্ত করে এক্ষুনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। অন্যথায় আমরা দেশের মৎস্য সম্পদ হারাবো।

মালিরপাথর এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, প্রশাসন একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে কয়েকদিন অভিযান বন্ধ রাখে। এতে করে কারখানার মালিকরা নিষিদ্ধ কারেন্টজাল তৈরী করার জন্য সময় পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ফিরিঙ্গিবাজার, মুক্তারপুর এলাকার মালবাহী ট্রাক ও ট্রলারে নিয়মিত তল্লাশী চালালে নিষিদ্ধ কারেন্টজাল পাচার বন্ধ হতো।

কারখানার একাধিক শ্রমিকের সাথে একান্ত আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এলাকার সব কারখানাতেই তৈরী হচ্ছে কারেন্টজাল। আমরা কি করবো মালিকের হুকুম পালন করি । বেতনে কাজ করি মালিক যা বলবে তাই আমাদের শুনতে হয়। যা বলার আপনারা কারখানার মালিককে গিয়ে বলুন।

এ বিষয়ে একাধিক কারখানায় গিয়ে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। কোন কোন কারখানায় যাওয়া মাত্র মালিকপক্ষ কোন কথা বলতে রাজি হননি। কাশিপুর এলাকার ইমরান ফিশিং নেট কারখানার মালিক করিম হাজীর এর সাথে আলাপকালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমরা একা কারেন্টজাল তৈরী করিনা সবাই তৈরী করে। সবার কারখানা প্রশাসন বন্ধ করে দিচ্ছে না কেন? সবাই যদি নিষিদ্ধ কারেন্টজাল বন্ধ করে আমরাও বন্ধ করে দিব।

মিরকাদিমের এমএনএফ ফিশিং কারখানার মালিক মহিউল এর সাথে ফোনালাপে বলেন, প্রশাসন গরীবের কারখানায় বার বার অভিযান চালায় । আমাদের তো ছোট ছোট কারখানা যারা এলাকার রাঘব বোয়াল তাদের কারখানায় প্রশাসনের লোক যাচ্ছেনা না কেন?।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাজাদা খসরু বলেন, আমাদের মৎস্য বিভাগের লোকবল সংকট রয়েছে। তাছাড়া র‌্যাব , ম্যাজিস্ট্রেট সংকট তো আছেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের সাধ্যমত আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শওকত আলম মজুমদার বলেন, আমাদের কোন ম্যাজিস্ট্রেট সংকট নেই। নিষিদ্ধ কারেন্টজাল এর ব্যাপারে আমরা সব সময় জির‌্যু টলারেন্স। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
দেশের মৎস্য সম্পদ বাঁচাতে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর।

error: দুঃখিত!