মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার রিকাবীবাজার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির কোন সীমানা দেয়াল না থাকার কারণে এখন সেটি গবাদি পশুর বিচরণ ও মাদক সেবীদের আখড়া হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সেবার লক্ষ্যে সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, রিকাবী বাজারের গরু ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে গরু এনে বেঁধে রাখছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাঠে গাছের সাথে। তাছাড়া বিভিন্ন দখলদাররা ছোট ছোট টং দোকান তুলে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। মাঠের মধ্যে বিভিন্ন গ্যারেজের গাড়ী এনে মেরামত করছেন একটি চক্র। আশপাশের দোকান, বাড়ী ঘরের যাবতীয় ময়লা আবর্জনা এনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বারান্দার পাশে ফেলে রেখে ময়লার ভাগাড়ে পরিনত করেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির পশ্চিম পাশ ও সামনের অংশে বৃষ্টির পানি জমে পুকুর হয়ে আছে।
স্থানীয় ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫১ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে তার সবগুলোতে প্রায় ৬ মাস ধরে কোন ঔষধ সরবরাহ নেই। আছে কেবল কিছু জন্মবিরতিকরন সামগ্রী। এর বাইরে গর্ভবতী বা প্রসূতি মায়ের সেবার জন্য কোন ঔষধ নেই। এতে করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি অনেকটা রোগী শূন্য হয়ে যাচ্ছে। দিনের বেলায় প্রসূতি মায়েরা সেবা নেওয়ার জন্য এখানে আসে। আসলেও তেমন একটা ভাল সেবা পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ একাধিক রোগীর।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বিকাল ৩ টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় মাদক সেবীদের আনাগোনা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদক সেবীদের আড্ডা। সকালে ডাক্তার ও আয়ারা এসে দেখে নেশা করার নানা সামগ্রী পড়ে আছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির চারপাশে। এ ব্যাপারে পৌর মেয়রকে জানানো হলেও তিনি কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। তাছাড়া জেলার ৫১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ৪১টি কেন্দ্রের একই অবস্থা বলে জানান ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র দায়িত্ব প্রাপ্ত ডাক্তার ও কর্মচারীরা।
মিরকাদিম পূর্বপাড়া এলাকার বারেক মিয়া বলেন, এটাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বলা ঠিক হবেনা। এখানে পশু পালন করা হয়। মাঠের মধ্যে বিভিন্ন স্থাপনা ও বিকাল থেকে বসে মাদক সেবীদের আড্ডা। চারদিকে ময়লা আবর্জনা ফেলে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে রোগী আসলে রোগীরা আরো অসুস্থ্য হয়ে যাবে। আয়া পিয়ারা বেগম বলেন, এখানে কোন ধরনের নিরাপত্তা নেই। চারদিকে ময়লা-আবর্জনা ফেলে নোংরা করে রাখে। আমরা বাঁধা দিলে কোন কথা শোনেনা। বিভিন্ন লোক এখানে গরু এনে বেঁধে রাখে আমার চাকুরী জীবনে এমন নোংরা পরিবেশ কখনও দেখি নাই।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটির ডা: ফহিমা খানম (সাথী) সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যে যেভাবে পারছে গাড়ি এনে ভিতরে রাখছে, রিক্সাগুলো দিনে রাতে রাখে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে। ময়লা আবর্জনা ফেলাচ্ছে প্রতিনিয়ত সর্বপরি এখানে নিরাপত্তার ব্যাপক অভাব রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখানে ডেলিভারী রোগী রাখতে পারিনা। রোগী যতক্ষণ থাকে যতক্ষণ নিরাপদ মনে করি। পরে একা একা থাকতে হয় এর মধ্যে মাদকাসক্তরা এসে ঘুর ঘুর করে। দীর্ঘদিন ধরে সরবরাহে ঔষধ নেই রোগী এলে প্রেসক্রিপশনে লিখে দেই কিনে খাওয়ার জন্য।
এ ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা মুন্সিগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এ কে মজিবুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বাউন্ডারি না থাকার কারনে এমনটা হচ্ছে। আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি এবং ঔষধের ডিউ পেলে রোগীদের সরবরাহ করবো। অতি দ্রুত এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।