১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | সকাল ৭:০৬
মালয়েশিয়ায় চলছে ব্যক্তিবিরোধী আন্দোলন
খবরটি শেয়ার করুন:

আমাদের সমসাময়িক সময়ে স্বাধীন হওয়া এ দেশটি অনেক আগেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিক থেকে এগিয়ে গেছে। সংগত কারণেই গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকবিরোধী বিক্ষোভ বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে।

অনেকেই এ বিক্ষোভের মূল খুঁজতে শুরু করেছেন। বর্তমানকালে যেসব দেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে, সেসব বিক্ষোভের অন্তরালে অনেকটা থাকে বৈদেশিক ক্রীড়নকদের হাতছানি। কিন্তু অনেক বিষয় খেয়াল করলে দেখা যাবে, মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রীবিরোধী যে বিক্ষোভ হচ্ছে, তা কিন্তু সেগুলো থেকে আলাদা।

প্রথমত, এটি সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন নয়। এটি একজন ব্যক্তিবিরোধী বিক্ষোভ।

দ্বিতীয়ত, নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ৭০ কোটি ডলার অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ উঠেছে, তা কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো নয়। অবশ্য তদন্ত তো হবেই। যেহেতু ‘ওয়ান মালয়েশিয়ান ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ (ওয়ানএমডিবি)’ মালয়েশিয়ার সরকারের একটি কৌশলগত দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। সেহেতু এদিকে সবার নজর তো থাকেই। অবশ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের আগে কেউ এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি; বলার কথাও নয়।

তৃতীয়ত, এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি, যাঁকে আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার বলা হয়। তিনি আর কেউ নন, তিনি মাহাথির বিন মোহাম্মদ। গণতান্ত্রিকভাবে ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত এ লোকটি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। শুধু তাই নয়, এই ব্যক্তি যদি ২০০৩ সালে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় সরে না দাঁড়াতেন, তাহলে তিনি যে এখনো মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী থাকতেন, তা অনেকটাই পরিষ্কার।

চতুর্থত, মাহাথির বিন মোহাম্মদ শুধু বিক্ষোভেই অংশ নেননি। তিনি নাজিবের পদত্যাগ দাবি করে মিডিয়ার সামনে কথাও বলেছেন। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘নাজিব জানেন, সে ক্ষমতায় না থাকলে তাকে আদালতের মুখোমুখি হতে হবে। আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন। তাকে হয়তো কারাগারেও যেতে হতে পারে।’ তিনি এ আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ‘জনতার শক্তি’ প্রদর্শনের কথা বলেছেন। অথচ নাজিবের ক্ষমতায় আসার পেছনে এই মাহাথির মোহাম্মদেরই ভূমিকা ছিল। তিনি এ জন্য মিডিয়ার সামনে অনুশোচনাও জ্ঞাপন করেছিলেন।

এখন নাজিবের উচিত হবে তাঁর অপরাধ স্বীকার করে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া। আর অপরাধ যদি নাই করেন, তা প্রমাণ করা। তবে কোনোমতেই দমন-পীড়নে যাওয়া তাঁর জন্য ঠিক হবে না। কারণ, এতে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হবে। আর এটা মালয়েশিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গেও যাচ্ছে না।

যদি নাজিব কোনোমতে তাঁর দোষ স্বীকার করেন, তবে বিক্ষোভকারীদের উচিত হবে তাঁকে ছাড় দেওয়া। কারণ এমন পদের একজন ব্যক্তির পদত্যাগই সমস্যার সমাধান নয়। এতে নানা ধরনের নতুন সমস্যাও যুক্ত হতে পারে। তবে এ কথাও সত্য, যদি নাজিব তা স্বীকারই করেন, তাহলে তিনিও আর পদত্যাগ না করে পারবেন না।

কোনোমতেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকারের লড়াইয়ে যাওয়া সুখকর হবে না। কারণ, মালয়েশিয়া আদতে একটি সস্তাশ্রম-বিনিয়োগ বাজার। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ না করলে তারা যে সস্তা বিনিয়োগ অন্যান্য দেশ থেকে পাচ্ছেন, তাতে কিন্তু এক ধরনের ভাটা পড়বে, যার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে; জাতীয় কাঠামোতে।

error: দুঃখিত!