মুন্সিগঞ্জ, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
অত্যন্ত সুস্বাদু ও বিরল মাছ হিসেবে পরিচিত সাগর পোনা মাছ পাওয়া যাচ্ছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের বাজার গুলোতে। প্রবীণ ব্যক্তিরা এ সাগর পোনাকে শুভঙ্ঘরা নামেও চেনেন।
প্রতিবছর এ সময় জেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকূল থেকে লৌহজংয়ের মাওয়া হয়ে টংগিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড় পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাতেই কেবল এ সাগর পোনা পাওয়া যায়। তাই সাগর পোনাকে জেলার ঐতিহ্যের অংশ বলে মনে করেন স্থানীয় জেলে ও বাসিন্দারা।
মাছের নাম সাগর পোনা হলেও এ ছোট মাছ পদ্মা নদীতে বেশি জন্মে। শুধু বছরের মাঘ ও ফাল্গুন মাসে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। তবে ঘন কুয়াশায় সাগর পোনা জেলেদের জালে বেশি ধরা পড়ে বলে জেলেরা জানান।
দুই থেকে তিন ধরনের সাগর পোনা হয়ে থাকে। তাই রকম ভেদে এর দরদাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আসল জাতের পোনা মৌসুমের শুরুতে ২ হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। একই রকম দেখতে অন্য ধরনের পোনার দাম শুরুর দিকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হয়ে থাকে। পরে জেলেদের জালে পোনা মাছ বেশি ধরা পড়তে থাকলে তা ধরণ ভেদে একহাজার থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
স্থানীয় জেলে ও বাসিন্দাদের মতে, অত্যন্ত ছোট জাতের এ সাগর পোনা ডুকরি জাতের বেলে মাছের পোনা। ধূসর রঙের শরীর ও মেরুদণ্ডের দিকে হালকা কালো দাগ ও কালো চোখ বিশিষ্ট এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হয় এ সাগর পোনা।কখনো কখনো বড়জোর আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে ছোট আকারের সাগর পোনাই খেতে সুস্বাদু বলে জানান তারা।
কেউ কেউ সাগর পোনাকে সাধারণ বেলে মাছের বাচ্চা, কেউবা আবার বেলে মাছের আরেক জাত চেউয়া বেলের বাচ্চা বলে থাকেন।
এ সাগর পোনা মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর অঞ্চলের মানুষেরাই মূলত বেশি খেয়ে থাকেন। এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা পূরণ করে ঢাকার মাছ বাজারেও বিক্রি হয়। সেখানেও ঢাকায় বসবাসরত মুন্সিগঞ্জ জেলার উচ্চবিত্ত মানুষজনই তা কিনে থাকেন।
শুক্রবার লৌহজংয়ের কনকসার বাজার থেকে তিনহাজার টাকায় দুইকেজি সাগর পোনা মাছ কেনেন রাকিব হাসান। তিনি বলেন প্রতিবছর এই সময়টায় অপেক্ষায় থাকি কখন বাজারে সাগর পোনা পাওয়া যাবে। তখন নিজেদের জন্য কিনি। পাশাপাশি নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য কিনে পাঠাই। মাছ এতটাই সুস্বাদু একবার যারা খায় দ্বিতীয় বার তারা কিনতে বাধ্য হন।
কনকসার বাজারের জেলে খলিল ঢাপা জানান, এ মাছ অত্যান্ত সুস্বাদু। শীত মৌসুমে অন্য মাছের চেয়ে সাগর পোনার চাহিদা বেশি। দাম থাকায় লাভও বেশি। বাজারে এ মাছ আসার এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যায়।
উপজেলার কনকসার গ্রামের বাসিন্দা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবদুল্লাহ আল মাসুদ কনক বলেন, এটি আসলে সাদা চেউ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Apocryptes bato। বিজ্ঞানী ভেলেনসিয়েননেস ১৮৩৭ সালে এর নামকরণ করেন। এটি মাডস্কিপার দলভুক্ত মাছদের একটি সদস্য। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের নদী, মোহনা ও উপকূলীয় এলাকায় পাওয়া যায়। এটি দৈর্ঘ্যে ১০ ইঞ্চি বা ২৬ সে.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি গোবিফরমিস বর্গের অন্তর্ভুক্ত এবং বাণিজ্যিকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাছ।
সাগর পোনা মূলত ভোজ্যতেল, কাঁচামরিচ, মশলা ও ধনেপাতা দিয়ে চচ্চড়ি করে রান্না করা হয়। এ ছাড়া শিম কুচিকুচি করে কিংবা টমেটো দিয়েও সাগর পোনা রান্না করা যায়। এ অঞ্চলের মানুষ নিজেরা সাগর পোনা খেতে ও মেহমানদের খাওয়াতে ভালোবাসেন।