১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার | রাত ১০:২৩
বিপ্লবী কৃষক নেতা জীতেন ঘোষ বিক্রমপুরের গর্ব
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

জীতেন ঘোষ। একজন বিপ্লবী কৃষক নেতা। তিনি ১৯০১ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯১৯ সালে আই এ পাশ করেন। ১৯২০ সালে বি এ ভর্তি হন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের কারণে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯২৩ সালে জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯২৪ সালে তিনি বিপ্লবী পার্টিতে যোগদান করেন। বিপ্লবী পার্টিতে যোগদান করে বার্মা চলে যান।

১৯৩০ সালে বার্মায় কৃষক বিদ্রোহ হয়। সেখানে জীতেন ঘোষ যে বিপ্লবী দল করতেন তাদের দল কৃষক বিদ্রোহে সমর্থন করে। কৃষক আন্দোলন করার জন্য তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৩১ সালে মুক্তি পান। মুক্তি পাবার ৪ মাস পর আবার গ্রেফতার হন। এবার জেলে থাকা অবস্থায় তিনি পুরোপুরি কমিউনিস্ট মতাদর্শ গ্রহণ করেন। ৭ বছর বিনাবিচারে আটক থাকার পর ১৯৩৮ সালে জেল থেকে মুক্তি পান।

জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নিজগ্রামে আসেন এবং কৃষকদের সংগঠিত করতে শুরু করেন।

বিক্রমপুরের বিপ্লবী দলের অনেক নেতাকর্মীরা তখন জীতেন ঘোষের সঙ্গে কৃষক আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকেন।

১৯৩৯ সালে পার্টির পূর্ন সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৪০ সালে ১৪৪ ধারা অমান্য করে কর্মী সম্মেলন করায় আবার গ্রেফতার হন। এবার গ্রেফতার হবার সময়ে কমরেড নেপাল নাগ সহ মোট ১৭ জন একসাথে গ্রেফতার হন। ১৯৪১ সালের শেষের দিকে মুক্তি পান। ঐ সময়ে ভারতবর্ষ জুড়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন চলছিল।

তিনি পরবর্তীতে মুন্সিগঞ্জ জেলায় এ আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৪২ সালে আবার গ্রেফতার হন, এক বছর পর মুক্তি পান।

১৯৪৩ সালে দূর্ভিক্ষের হাত থেকে মুন্সিগঞ্জের মানুষকে বাঁচাতে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন।

১৯৪৭ সালে জীতেন ঘোষ কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তানের সরকার ১৯৪৮ তাকে আবার গ্রেফতার করে। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পান। ১৯৫৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত কৃষক সন্মেলনে মৌলানা ভাষানী কৃষক সমিতির সভাপতি ও জীতেন ঘোষ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঐ বছর আবার গ্রেফতার হন ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে বৃহত্তর ঢাকা জেলায় একটি শক্তিশালী কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তাকে আবারো গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পান। মুক্তি পাবার পর পর আবারো গ্রেফতার করে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে মুক্তি পান।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা থেকে দুর্ভেদ্য কৃষক প্রধান অঞ্চলে চলে যান বিপ্লবী সংগঠনের কাজে। কেন্দ্রীয় কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপের কর্মীরা তার পরামর্শ নিতেন নিয়মিত। মুক্তিযুদ্ধের কার্যপ্রণালী ঠিক করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সত্তরোর্ধ বয়সেও। ১৯৭৫ এ তৈরি কৃষক লীগের অন্যতম সদস্য হন প্রবীন বিপ্লবী জিতেন ঘোষ। ১৯৭৫ সালে একটি কৃষক আন্দোলনের আইনি লড়াইয়ে বিজয়ী হন। ১৫ হাজার কৃষক জমিতে পূর্ণ মালিকানা লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুন হলে তিনি গোপনে কলকাতায় চলে আসেন এবং ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতাতে মোটর দুর্ঘটনায় এই আজীবন বিপ্লবীর মৃত্য হয়।

error: দুঃখিত!