মুন্সিগঞ্জ, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, মোহাম্মদ নজরুল হাসান ছোটন (আমার বিক্রমপুর)
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি কথা দুটি একই সূত্রে গাঁথা। সহজ ভাষায় এর অর্থ হলো চাওয়া-পাওয়া। নিজ দেশকে স্বাধীনভাবে বিজয় করতে বাঙ্গালীরা কি চেয়েছে- কি পেয়েছে এটাই হলো মূল বিষয়।
আজ ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘আমার বিক্রমপুর’ এর ‘পাঠকের মুখোমুখি’ বিভাগে ‘বিজয় দিবসের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শিরোনামে লিখেছেন মোহাম্মদ নজরুল হাসান ছোটন। চাইলে লিখতে পারেন আপনিও… লেখা ও ছবি পাঠান– bikrampuramar@gmail.com এই ইমেইলে। আপনার ছবি সহ ছাপা হবে ‘আমার বিক্রমপুর’-এ
প্রথমে প্রত্যাশার কথা দিয়েই শুরু করি। প্রত্যাশা অর্থ চাওয়া বা আশা করা, কামনা করা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৭কোটি বাঙ্গালী জনতার একটিই প্রত্যাশা ছিল, একটি স্বাধীন ভূ-খন্ড, একটি স্বাধীন মানচিত্র ও একটি স্বাধীনতার পতাকা।
একটি দেশ স্বাধীন করা কিন্তু ছেলের হাতের মোয়া নয় যে চাইলেই পাওয়া যায়। বাংলাদেশ কিন্তু এমনি এমনি স্বাধীন হয়নি। ৩০ লাখ বাঙ্গালীর রক্তের বিনিময়ে এবং অনেকের ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।
অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ভারতে উত্তর-পূর্ব মুসলিম প্রভাবিত অঞ্চলগুলি নিয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হয়। সেই পাকিস্তান দেশটির জন্য যে লাহোর প্রস্তাব ছিল, সেখানে বহুবচনে দুটি দেশের কথা বলা হয়েছিল। একটি পশ্চিম পাকিস্তান ও অপরটি পূর্ব পাকিস্তান।
“মুদ্রণ প্রমাদ” বলে দুইটি দেশের ধারণাটিকে সরিয়ে একটি পাকিস্তান তৈরি করা হয়েছিল। এই প্রজন্ম চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করে, এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিল? একটি দেশের দুই টুকরো দুই জায়গায়। মাঝখানে হাজার কিলোমিটার এর মতো দূরত্ব। আর সেটাই ছিল আজব স্থান পাকিস্তান!
জনসংখ্যায় পূর্ব বাংলার লোকসংখ্যা ছিল বেশি, অথচ সম্পদের বড় অংশ ভোগ করত পশ্চিম পাকিস্তান। পুরো দেশটিই যে ছিল ষড়যন্ত্রের জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা একটি দেশ, সেটা বুঝতে বাঙ্গালীদের মাত্র বছরখানিক সময় লেগেছিল। কল্পিত পাকিস্তানে যে স্বপ্নের স্বাদ বাঙ্গালীরা দেখতে চেয়েছিল, তার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল পাকিস্তানের পরিচালকগণ নিজেরাই।
কেন্দ্রে বাঙ্গালীদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব, অর্থনৈতিক বিষয়ে তাদের পশ্চাদপদতার জন্য কেন্দ্রের উদাসীনতা এবং এ ধরনের আরও বিভিন্ন কারণে বাঙ্গালীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বাঙ্গালীদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতের উপর আঘাতের দরুণ তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
বাঙ্গালীদের নিকট সবচাইতে দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াল এই যে, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজে ঢাকায় বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার পূর্বে ঘোষণা করেন যে, “ঊর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।“ তার উত্তরে ঘটনাস্থলেই দুজন ছাত্র বলেছিলেন, “না না না।”
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বাঙ্গালীদের মনে পাকিস্তানী শাসকদের সম্পর্কে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। ১৯৫২ সালে এটা চরম আকার ধারণ করে। পূর্ব বাংলায় ভাষা আন্দোলন শুরু হয়।
বাঙ্গালীদের দাবী ছিলো বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনের মিছিলে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ক্ষেপে উঠে মিছিলের ওপর গুলিবর্ষন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রফিক, শফিউল, বরকতসহ সালাম ও জব্বার এর মতো অনেক বাঙ্গালী এতে শহীদ হন। রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হলো।
১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে পূর্ববাংলার বাঙ্গালীদের যুক্তফ্রন্টই বিপুল ভোটে জয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু আর সহ নেতারা সরকার গঠন করলেন। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর প্রতি এটাও ছিল বাঙ্গালীদের ঘৃণার আরেক দফা বহিঃপ্রকাশ। বছর না ঘোরার আগেই সে সরকারকে বাতিল করে দেয়া হলো।
১৯৫৮ সালে আইয়ুবের নেতৃত্বে সামরিক জান্তা পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করেন। তার আমলে অর্থনৈতিক বিষয়ে বাঙ্গালীদের ভাগ্যের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তখন আইয়ুবের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার এবং পশ্চিম পাকিস্তানেও গণ আন্দোলন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু তখন একজন তরুণ রাজনৈতিক নেতা। তার বুঝতে বাকি রইল না যে, পাকিস্তানের এ ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি লাভের একটি মাত্র উপায়; সেটি হচ্ছে
স্বায়ত্বশাসন।
তিনি ছয় দফার আন্দোলন শুরু করেন। একটু ভেবে দেখলে দেখা যাবে যে, ছয় দফায়
আসলে একটি মাত্র দফা, যার আসল অর্থ হলো স্বাধীনতা!
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীরা বেশিরভাগ সময়ই জেলখানায় থাকেন। রাজনৈতিক বড় নেতাদের বলতে গেলে কেউই তখন বাইরে নেই। ছাত্ররাই আন্দোলন করে বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে বের করে আনেন। এ প্রজন্মের ছাত্র-রাজনীতিবিদরা হয়ত কল্পনা করতে পারবেনা যে, তাদের পূর্বসূরিরা অর্থাৎ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা একসময় এত বড় কাজ করেছে!
১৯৬৯ সালের বিশাল গণ আন্দোলনে আইয়ুব খান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা অর্পন করে পদত্যাগ করেন। সর্বকালের নৃশংস দানব ঘাতক জেনারেল ইয়াহিয়া ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা করেন যে, প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের নিকট খুব শীঘ্রই ক্ষমতা অর্পন করা হবে।
১৯৭০ সালের ৭ই ও ১৭ই ডিসেম্বর যথাক্রমে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার প্রতি স্বীকৃতি জানিয়ে বাঙ্গালীদের ভোটে সমগ্র পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে অভূতপূর্ব বিজয় এনে দেয়। বাঙ্গালীরা প্রথমবার এদেশের শাসনভার গ্রহন করবে। এতে পাকিস্তানী মিলিটারিদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল! তাদের বিশাল ষড়যন্ত্রের ঘটনাপ্রবাহের মুখে ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করেন।
এতে পূর্ববাংলায় মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রাস্তায় নেমে আসে। বঙ্গবন্ধু তখন আইন অমান্য করে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। জনগণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাতে অংশ নেয়। এর মাঝে বাংলার জনগণ সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে “স্বাধীন বাংলা” শ্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলেন। এবং পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ঘৃন্য চক্রান্তের সঙ্গে সম্পুর্ণভাবে অসহযোগিতা করার জন্য জোর দাবী উত্থাপন করতে থাকে।
বাংলার জনগণকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে এর মাঝে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসভার ডাক দেন। সেই জনসভার মাঝে তিনি তাঁর ঐতিহাসিক ভাষনটি দিলেন, যেটি শুনলে এখনও এ প্রজন্মের মানুষের শরীরে ও মনে শিহরণ জাগে! আজও সেই ভাষণটি সবাই মন দিয়ে শুনতে চায়! বজ্রকণ্ঠে তাঁর আওয়াজ “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।“
এই সংগ্রামকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য তিনি দেশের আপামর জনগনকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। পরিশেষে “জয় বাংলা” শ্লোগানে রেসকোর্স ময়দান মুখরিত করে তিনি বক্তৃতা শেষ করেন। ২৫শে মার্চ গভীররাতে অতর্কিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এক বর্বর গণহত্যা চালায় বাঙ্গালীদের উপর।
২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হবার পূর্বক্ষনে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ জারী করেন এবং বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই হতে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ! দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তির সংগ্রামের ওই যুদ্ধের ইতিহাস হচ্ছে ৩০ লাখ বাঙ্গালী জনতার আত্মত্যাগের ইতিহাস, বাঙ্গালী জনতার বীরত্বের ইতিহাস আর অর্জনের ইতিহাস। পৃথিবীর কয়টি দেশ এরূপ একটি গৌরবের ইতিহাস দাবি করতে পারবে? তাই বলব, বাঙ্গালীর বিজয়ের প্রত্যাশা সফল হয়েছে।
এবার প্রাপ্তি নিয়ে বলি। প্রাপ্তি হচ্ছে পাওয়া, লাভ, আয়, উপার্জন; এসবই হচ্ছে প্রাপ্তিযোগ্য। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে একটি স্বাধীন দেশ, একটি স্বাধীন পতাকা ও একটি স্বাধীন মানচিত্র পাওয়া।
কিন্তু দেশ স্বাধীনের বছর তিনেক পরই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতক দালাল চক্র। যার ডাকে সারা দিয়ে বাংলার মানুষ দেশ স্বাধীন করল, তাঁর নাম এদেশ থেকে মুছে ফেলতেই এ জঘন্যতম হীন চক্রান্ত ঘটানো হয়েছিল।
পাকিস্তানের দোসর আলবদর, আলসামস এবং রাজাকারচক্রই এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। তারপর হতে ২০টি বছর এদেশের জনগণ একেবারে পাকিস্তানের দোসরদের অধীনেই চলে গিয়েছিল।
কী আশ্চর্য, মুক্তিযুদ্ধের যে শ্লোগানটি সকলকে স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল, সে শ্লোগানটিই এদেশে নির্বাসিত হয়েছিল! এমনকি মুক্তিযুদ্ধের জন্য এ শ্লোগান, সেই মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। দেশের শাসক হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত স্বাধীনতার শত্রুরা।
জয় বাংলা শ্লোগানটি আওয়ামী-লীগ কর্মীদের মাঝেই কোনোমতে বেঁচেছিল! এই শ্লোগানটি উচ্চারণ করলেই তাকে গ্রেফতার করা হতো, ভাবতো নিশ্চয়ই সে আওয়ামী লীগের কর্মী! মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গর্জে ওঠার আগে তাদের কণ্ঠ থেকে প্রকম্পিত এ শ্লোগান দেশের মানুষকে একেবারে ভুলিয়েই দিল। বাংলাদেশের একটি কালো অধ্যায়ের সময় ছিল সেই বছরগুলি।
সেই সময় স্বাধীনতার ইতিহাসকে অস্বীকার করা হতো বা ছোট করে দেখানো হতো। নতুন প্রজন্মকে বোঝানো হতো বঙ্গবন্ধু বলে কেউ নেই, ছিলও না; মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণায় এ দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
রাজাকার শব্দটি উচ্চারণ করা যেতনা; পাকিস্তানী হানাদার নয়, শুধু হানাদার বলতে হতো। মুক্তিযুদ্ধের কথা বললে তাদের শাসন করা হতো, শাস্তি হিসেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলী করা হতো, যুদ্ধাপরাধীদের কথা বললে দেশদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হতো, তার বিরুদ্ধে মামলা হতো। তখন এমনও কিছু ঘটনা ঘটতো যা ছোট বাচ্চাদের পর্যন্ত দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। তারা বলতো, স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের যারা হত্যা করেছে, সেই রাজাকাররা এমপি, মন্ত্রী হয় কিভাবে? তারা গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় কিভাবে? স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালীরা এ দৃশ্য দেখে ঘৃণায় সে দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিত।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বাধীন বাংলার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তখন বাঙ্গালীরা আবার আশার আলো দেখেন। এটা বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল! সেই দুঃসময় পিছনে ফেলে বঙ্গবন্ধু কন্যা এগিয়ে চলেছেন স্বাধীন দেশকে নতুন করে বিনির্মাণ করার লক্ষ্যে।
দেশ স্বাধীন হয়েছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এবার স্বাধীন দেশের কিছু প্রাপ্তি সব জনগণের মাঝেই থাকতে পারে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেই প্রাপ্তি পূরণ করে চলেছেন।
এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রাপ্তির একটি তালিকা প্রণয়ন করা হলো-
১। পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ- প্রধানমন্ত্রী থেকে বাঙ্গালীর একটি বড় প্রাপ্তি পূরণ হচ্ছে পদ্মা সেতু বিনির্মাণের মাধ্যমে। নিজ তহবিল থেকে এই সেতু নির্মাণের ৪২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতু বিনির্মাণ জনগণের একটি বড় প্রাপ্তি পূরণ।
২। সমুদ্র সীমানা জয়- শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগেই সমুদ্র সীমানা হতে বাংলাদেশের সমপরিমান একটি ভূ-খন্ড আমাদের অধীনস্থ হয়েছে। এটা বাঙ্গালীর একটা বড় প্রাপ্তি।
৩। শেখ হাসিনা সরকার শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি করে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলেছে।
৪। ফ্লাইওভার নির্মাণ করে তিনি জনগণের যাতায়াতের সুবিধা করে দিয়েছেন।
৫। জেলেদের যখন ছোট মাছ ধরা থেকে বিরত রাখা হয়, তখন তাদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে এ সরকার।
৬। প্রধানমত্রী শেখ হাসিনা বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতার প্রচলন করেন। এ সকল ভাতা প্রদান তাঁর একটি বড় উদ্যোগ। এ উদ্যোগের জন্য এখন দরিদ্রতার হার প্রায় নিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে।
৭। বঙ্গবন্ধু কন্যার বলিষ্ঠ উদ্যোগেই যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার এই বাংলায় মাটিতেই হয়েছে।
৮। একমাত্র বর্তমান সরকারের আমলেই বছরের প্রথম দিনে এক কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে এই বিতরণ কর্মসূচী শুরু হয়েছে।
৯। প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্বকালীন ভাতার প্রবর্তন করেন, এমনকি মাতৃত্বকালীন ছুটি পর্যন্ত তিনি বৃদ্ধি করে চাকুরীজীবী মহিলাদের অনেক বড় উপকার করেছেন।
১০। হাসপাতালের পাশাপাশি দেশের আনাচে-কানাচে কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি করেন।
১১। দেশের রপ্তানী আয় এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর স্ব-উদ্যোগেরই একটি ফসল।
১২। সরকারীর পাশাপাশি বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পাওয়ার দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা বর্তমান সরকার এর একটি বড় উদ্যোগ।
১৩। গরীব শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি প্রদান প্রধানমন্ত্রী হাসিনাই চালু করেন।
১৪। প্রতি বছরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলার অন্তত একটি করে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করছেন।
১৫। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা তিনি ৫০০ থেকে ১০০০০ টাকায় উত্তীর্ণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।
১৬। প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন প্রধানমন্ত্রীর একটি বড় উদ্যোগ।
১৭। বিভিন্ন জেলায় তিনি বিনোদন কেন্দ্র ও শিল্পপার্ক নির্মাণ করে জনগনকে শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ও আনন্দ-উৎসব করার পরিবেশ তৈরি করেছেন।
১৮। দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি ইকোনোমিক জোন নির্মান করছেন।
১৯। আমাদের দেশের এমন প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে, যেখানে যাতায়াতের অসুবিধার জন্য শিশু-কিশোররা স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারেনা। জনগণ ভালোভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেনা। এ ধরনের প্রত্যন্ত অচলে প্রধানমন্ত্রী রাস্তাঘাট ও কালভার্ট নির্মান করে জনগণের যোগাযোগের ব্যবস্থা সুগম করে দিয়েছেন।
২০। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের উদ্যোগের কারণেই দেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২১। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরীব জনগণকে স্বাবলম্বী করতে সহায়তা করছেন।
২২। বর্তমান সরকারের উদ্যোগের কারণেই দেশ এখন কৃষিতে সফলতা অর্জন করেছে।
২৩। জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে সরকার অনেক সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন।
২৪। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকার্য সম্পন্ন করে একটি বড় সফলতা দেখিয়েছেন।
২৫। বর্তমান সরকারের আমলে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আর নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নাই। চাকরির সর্বক্ষেত্রেই নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
২৬। প্রধানমত্রীর উদ্যোগে এশিয়ান হাইওয়ে রোড প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
২৭। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২৮। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১১ই মে গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন করেন। এর মধ্যে ৫৭ তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট উত্থাপন কারী দেশ হিসেবে যোগ হয় বাংলাদেশ। এই প্রকরল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়। এর মাধ্যমে অন্যদেশের লোকেরাও বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো দেখতে পারবে, ভারতের সহযোগিতার প্রয়োজন হবেনা।
২৯। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বর্তমানে বাঙালির সবচাইতে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের পরিচয় ছেড়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় ওঠার যোগ্যতা অর্জন। এই সাফল্যের স্বীকৃতি দেশ ও মানুষের মর্যাদা সমুন্নত করেছে বিশ্ব দরবারে। শেখ হাসিনার ঐকান্তির প্রচেষ্টার ফলেই বাঙালির এই প্রাপ্তি।
উপরোক্ত উদ্যোগগুলো গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও সফলতা ধরে রেখেছেন।
তাই আমি বলব, বিজয় দিবসের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে দেশ স্বাধীনতার মাধ্যমে আর স্বাধীনতার ৪৯তম বিজয় দিবসে প্রাপ্তি পূরণ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।
সবশেষে আমি বলব, বিজয় দিবসের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সবই বাংলায় জনগণের পূরণ হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে একটি অনুরোধ রইল, তোমরা যেন বিজয়ের এই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিটুকু হারিয়ে না ফেলো।