১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শনিবার | সকাল ৯:৪৭
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
বিজয়কে শেল্টারদাতাদের জনসম্মুখে আনার দাবি জেসির বাবার
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

বহুল আলোচিত মুন্সিগঞ্জের স্কুলছাত্রী জেসি মাহমুদ (১৬) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিজয় রহমানকে গ্রেপ্তারের পর মুন্সিগঞ্জ সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব।

এদিকে মেয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নিহত জেসির বাবা সেলিম মাহমুদ।

তিনি ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, আমার মেয়েকে হারিয়েছি। এখন আমার ছেলে ও স্ত্রী দেশে অভিভাবকহীন রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার কথা আমাকে সবসময়ই ভাবতে হচ্ছে। র‌্যাবকে ধন্যবাদ জানাই তারা কৌশল অবলম্বন করে বিজয়কে ধরেছে। আমি এই হত্যাকান্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

সেলিম মাহমুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আসামি বিজয়কে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। প্রথম থেকেই এই মহলটি আসামি বিজয়কে পালানো থেকে শুরু করে আত্মগোপনে থাকা, এবং তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করাসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করে সক্রিয় রয়েছে। আমার মেয়েকে যারা হত্যা করেছে তাদের গ্রেপ্তারে আমি সন্তুষ্ট। তবে, এই হত্যাকারীদের শেল্টারদাতাদের যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চিহ্নিত করে জনসম্মুখে তুলে ধরে এটাই আমার দাবি।

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টা’র দিকে বিজয়কে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

সদর থানা সূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরে আদালতে প্রেরণ করা হবে।

বিজয়কে শনিবার রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের আগে সে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিলো। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে তার এক বন্ধুর বাড়িতে ৪ দিন, ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন ও সর্বশেষ রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় আরেক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হয় বিজয়।

রোববার দুপুরে ঢাকার কারওয়ানবাজারে র‍্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

এসময় তিনি জানান, শনিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসি হত্যার আসামি বিজয় রহমান (২২) কে গ্রেপ্তার করে। বিজয় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিজয় ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া জেসি হত্যা মামলার অপর আসামি আদিবা আক্তার এর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আদিবা আক্তার এর সাথে সম্পর্ক চলাকালীন সময় বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ভিকটিম জেসিকার সাথেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। বিজয় উভয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আদিবাকে গোপনে বিয়ে করে।

পরে বিজয় ও আদিবার বিয়ের কথা জেসি জানতে পারে এবং বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার কথোপকথনের স্ক্রীনশর্ট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আদিবার মাঝে বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ হলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে বিজয় আদিবার সাথে আলোচনা করে এবং ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি উভয়ে মিলে জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বিকেলে আদিবা জেসির সাথে দেখা করলে বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথোনের স্ক্রীনশর্ট দেখায় এবং এই সমস্যা মীমাংসা করার জন্য আদিবা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে।

পরবর্তীতে আদিবা ফোন করে বিজয়কে ছাদে আসতে বলে। এরপর সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসির গলাটিপে ধরলে শ্বাসরোধ জেসি অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য জেসি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার নাটক সাজানোর উদ্দেশ্যে বিজয় ও আদিবা মিলে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় ছাদ থেকে নামিয়ে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভিতরে চলে আসে। পরবর্তীতে পাশের বাসায় থাকা বিজয়ের চাচা জেসিকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করলে বিজয় এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসে। একপর্যায়ে বিজয় এবং তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জেসিকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এসময় বিজয় জেসির ভাই জিদানকে জেসির অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালে আসতে বলে। জেসির ভাই হাসপাতালে এসে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন। ঢাকায় নেয়ার পথে জেসি পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুনরায় হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত্যুর ঘটনা শুনে বিজয় ও আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। জেসির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে জেসির ভাই জানতে পারে জেসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেসির ভাই মুন্সিগঞ্জ সদর থানায়  বিজয় ও আদিবাসহ আরও ১-২ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা রুজুর পর ৪ জানুয়ারি আদিবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে বর্তমানে জেল-হাজতে রয়েছে।

২২ দিন ছদ্মবেশে মাজারে কাটায় বিজয়

মুন্সিগঞ্জ শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আরিফুর রহমানের ছেলে বিজয় রহমান সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। জেসিকে হত্যার পর সে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে তার এক বন্ধুর বাড়িতে ৪ দিন আত্মগোপনে থাকে। সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তীতে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে।

একপর্যায়ে তার সন্দেহ জাগে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তারের লক্ষে এখানে অভিযান চালাতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে সে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপনে থাকে। শনিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিহত জেসি মাহমুদ (১৭) মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মধ্য কোর্টগাও এলাকার সৌদি আরব প্রবাসী সেলিম মাহমুদের মেয়ে। সে আলবার্ট ভিক্টোরিয়া যতীন্দ্র মোহন গভ. গার্লস হাই স্কুলের এসএসসি বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলো।

error: দুঃখিত!