(অতীত ও বর্তমান কালের) মুন্সিগঞ্জে ঐতিহ্য আর গৌরবের যে ধারাটি বিক্রমপুর আমল থেকে শুরু হয়েছিল রাদন্ড নিয়তির কাছে পর্যুদস্ত হলেও জ্ঞানী ও গুণী সৃষ্টির যে ব্রাত্য আয়োজনটি মহাযজ্ঞের মতো তৈরি হয়েছিল, হাজার বছরের নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়েও যুগযুগ ধরে সেই ধারাটি আজো অম্লান হয়ে আছে। মোগল ব্রিটিশ পাকিস্তানী শাসন নআমল থেকে জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিকর সকল ক্ষেত্রে মুন্সীগঞ্জের কৃর্তী সন্তানদের ঐশ্বর্য আর প্রতিপত্তি একটি অবিস্মরনীয় সকল ক্ষেত্রে মুন্সীগঞ্জ সারা দেশের মধ্যে অন্যতম রত্ন প্রসবা স্থান। স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারকাসম উজ্জ্বল কিছু ব্যাক্তিত্বকে আমরা দেশ ও জাতির জন্য অনুকরণীয় ও নমস্য হিসেবে তুলে এনেছি। যাদের নামের উল্লেখ আছে ইতিহাসের স্বর্ণ পাতায়।
শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকরঃ বৌদ্ধ ধমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ অতীশ দীপংকর মুন্সীগঞ্জের অহংকার । ৯৮২ সালে মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম কল্যানশ্রী এবং মায়ের নাম প্রভাতী অতীশ দীপংকর নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহন করেন। ২৯ বছর বয়সে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেন। ৩১ বছর বয়সে তিনি শ্রীলংকায় গমন করেনও পরে নলন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাচার্য পদে অসীন হন। ১০৪১ সালে হিমালয় অতিক্রম করে তিনি তিব্বত যান। তার অসাধারন পান্ডিত্যের কারনে তিব্বতীরা তাকে অত্যন্ত সম্মান জনক ‘অতীশ’ উপাধিতে ভূষিত করে। বৌদ্ধ ধর্মে তার প্রয়োজনীয় সংস্কার আজও বৌদ্ধ জগতে মৌলিক বিধিব্যবস্থা হিসেবে অনুসূত হচ্ছে। ১০৫৪ সালে তিনি দেহত্যাগ করেন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সরকার এই মনীষীর দেহভষ্ম রাষ্টীয় মর্যাদায় বাংলদেশে নিয়ে আসে।
জগদীশ চন্দ্র বসুঃ মুন্সিগঞ্জকে আলোকিত করা মনীষীদের আর এক জন শ্রেষ্ঠ মানুষ জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি ১৮৫৮ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম ভগবান চন্দ্র বসু। পৈত’ক নিবাস শ্রীনগড় উপজেলার রাঢ়ীখাল গ্রামে। পিতা ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। বেতার যন্ত্রের আজ বিশ্বজোরা যে পরিব্যাপ্তি তার উন্মেষ মুহূর্তে জগদীশ চন্দ্র বসু ছিলেন প্রধান পথিকৃত। ‘সলিস্টেট ডিটেক্টর’ যন্ত্রের প্রথম আবিষ্কারক তিনি। জগ দীস চন্দ্র বসু প্রমাণ করেছিলেন যে, মানুষের মত গাছের ও প্রান আছে। ১৯১৫ সালে তিনি নাইট বা স্যার উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯১৭ সালে তিনি বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এক জন সুসাহিত্যিক ও বটে। তিনি ছিলেন খাটি দেশ প্রেমিক ও দেশীয় ঐতিহ্যেও প্রতি প্রকৃত দরদী মানুষ।
দেশ বন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসঃ এক জন বঙালি যিনি সর্বভারতীয় নেতা হিসেবেস্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন, তিনি মুন্সিগঞ্জের সোনার ছেলে চিত্তরঞ্জন দাস। ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণ যাকে দেশবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেছে। ১৮৭০ সালে টঙগীবাড়ী উপজেরার তেলির বাগ গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। বাংলার যে‘কজন সুস্থ চিন্তার রাজনীতিবিদ জাতীয় উন্নতি বিধানে ভুমিকা পালন করেন চিত্ত রঞ্জন দাস তাদের অন্যতমঅ তিনি বিশ্বাস করতেন এদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন হিন্দু – মুসলিম সকলের সম্মানিত চেষ্টা । তারই প্রচেষ্টায় ১৯২৩ সালে সমঝোতাপ্রস্তার‘ বেঙ্গল প্যাক্ট’গৃহীত হয়। তার প্রতিষ্ঠিত দলের নাম ছিল স্বরাজ এটি ১৯২৪ সালে তিনি কোলকাতা মিউনিসিপ্যালিটির মেয়র নির্বাচিত হন। উদার মতবাদ ও দেশের প্রতি ভালবাসার কারণেই তিনি দেশেবন্ধু হতে পেয়েছিলেন মুসলিম গীগের বঙ্গীয় নেতৃবৃন্দ যখন শেরে বাংলা ফজলুল হককে দেওলিয়া করার উদ্যোগ নেয় তখন তার প্রতিরোধে চিত্তরঞ্জন দাস অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৫ সালের ১৬জন তিনি মারা যান।
সরোজিনী নাইডুঃ ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী মহিলা নেতা ছিলেন সরোজিনী নাইডু। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে। ১৯৭৯ সালে ১৩ ফেব্র“য়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক সরোজিনী নাইডু। কংগ্রেসের প্রভাবশালী ও এক সময়েম প্রসিডেন্ট ছিলেন তিনি বাগ্মী ও ইংরেজি ভাষার যশস্বী কবি ছিলেন।
স্যার চন্দ্রমাধব ঘোষঃ প্রতিথযশা এই আইনবিদ ১৮৩৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘরের পশ্চিম ঘোষপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন ভারত বিখ্যাত রসায়নবিদ ড. অম্বরনাথ টট্টোপাধ্যায়। সর্ব ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক সরোজিনী নাইডু কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা ও এক সময়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি বাগ্মী ও ইংরেজি ভাষার যশস্বী কবি ছিলেন।
অধ্যাপক রাজকুমার ঘোষঃ প্রখ্যাত এই গনিতশাস্ত্রবিদ পদার্থ বিজ্ঞান গ্রন্থ রচনাসহ জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন জন্ম বিক্রমপুরের গাড়ডুগা গ্রামে ১৮৪৯ সালে।
ক্ষিতি মোহন সেনঃ সোনাররংপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই বিখ্যাত বাঙালি পুরুষ রবীন্দনাথ ঠাকুর শান্তি নিকেতন গড়ে তোলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুন্সিগঞ্জের এই মানুষটিকে। তিনি ছিলেন শান্তি নিকেতনের প্রথম উপচার্য। বিশ্ববিখ্যাত অমর্ত্য সেন তারই নাতি।
সত্যেন সেনঃ জন্ম ১৯০৭, মৃত্যু ১৯৮১ সাল। টংগীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রাম তার পৈতৃক ভিটা। সত্যেন সেন ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। প্রথম জীবনে বটিশ বিরোধী আন্দোলনে অনুশীলন দলের সদস্য ছিলেন। পরে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং আজীব কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর তিনি প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে বহুবার কারাবরণ করেছেন। সুসাহিত্যিক সত্যেন সেন লেখক হিসেবে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পায়েছেন।
রণেশ দাশ গুপ্তঃ বাংলাদেশের অন্যতম বিপ্লবী মানুষ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিকও বটে। মুন্সিগঞ্জবাসী এই কৃতি মানুষের জন্য গর্বিত।
জিতেন ঘোষঃ লৌহজং থানার কুমার ভোগ গ্রামের অধিবাসী জিতেন ঘোষ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন চিরকুমার জিতেন ঘোষ সারা জীবন কৃষক ও মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। জেল খেটেছেন যুগের পর যুগ। তিনি বহু গ্রন্থের প্রণেতা।
সূর্য কুমার বসুঃ ১৮৮০ সালে হতদরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া এই কৃতীপুরুষ পূর্ববঙ্গে সর্বপ্রথম ১৯০০ সালে ঢাকেশ্বরী কটন মিলস নামে বস্ত্রকল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি টংগীবাড়ী উপজেলার রাউথভোগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরীঃ বিশিষ্ট সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ এই মানুষটি ১৩০০ বাংলা সালে মুন্সিগঞ্জের কোর্টগাও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৬ ও ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় পাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। ১৯৩৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত সমাজসেবক ও সুসাহিত্যিক। তার বেশ কয়েকটি প্রকাশিত গ্রন্থ আছে।
সোমেশ চন্দ্র বসুঃ প্রখ্যাত অংকশাস্ত্রবিদ সোমেশ চন্দ্র বসু মুন্সিগঞ্জের শ্রেষ্ট সন্তানদের অন্যতম। মানিক বন্দোপ্যাধ্যায়ঃ ১৮৮৮ সালের ১৯ মে সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মুন্সিগঞ্জ এর মালপদিয়া গ্রামে। বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী এই ঔপন্যাসিক পদ্মানদীর মাঝি পুতুল নাচের ইতিকথা সহ অনেক গুলি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে অমর হয়ে আছেন।
বুদ্ধদেব বসুঃ কবি বুদ্ধদের বসুর পৈতৃক নিবাস মুুন্সিগঞ্জের মালখানগরে। তিরিশের দশকের অন্যতম সেরা কবি বুদ্ধদের রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে দাড়িয়ে কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন।
সমরেশ বসুঃ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক শীর্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস মুন্সিগঞ্জ। অন্যান্য গদশৈলী ও বিষয় বৈচিত্রের কারণে বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে তার অবস্থান অনেক উচুতে। বসুর পৈতৃক নিবাস মুন্সিগঞ্জের রাজানওে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কালক’ট ছদ্মামেও বহু উপন্যাস লিখেছেন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আজকের উভয় বাংলার নন্দিত ঔপন্যাসিক শীষেন্দু মুখোপাধ্যায়েল পৈতৃক নিবাস মুন্সিগঞ্জে। অনন্য গদ্যশৈলী ও বিষয় বৈত্রিচের কারণে বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে তার অবস্থান অনেক উচুতে।
গওহর জামিলঃ ১৯২৭ সালে সিরাজদিখান এক নামী হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী রওশন জামিলের স্বামী। তিনি ঢাকার একটি একটি নামী সংগীত ও নৃত্য স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা।
প্রফেসর মফিজুল ইসলাম চৌধুরীঃ ১৯২০ সালে লৌহজং উপজেলার নওপাড়া গ্রামে এই কৃতীপুরুষ জন্মগ্রণ করে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। বহু গবেষণামূলক মৌলিক প্রবন্ধ লিখেছেন। বাংলাদেশ সরকার উপদেষ্টা হিসাবেও কাজ করেছেন।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ এই যুগের সেরা কৌতুকশিল্পী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় মুন্সিগঞ্জের কৃতি সন্তান। তিনি ১৯২০ সালে ২৬ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
খন্দকার মাহমুদ উল হাসান (কে এম হাসান) ঃ বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি খোন্দকার মাহমুদ উল হাসান এর পিতার নাম খোন্দকার মোহাম্মদ হাসান। পুত্রের মতো পিতাও বাংলাদেশের অন্যতম বিচারপতি ছিলেন। তিনি ১৯৩৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বিক্রমপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। বিচারপতি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনের বাইরেও তার আরো কর্ম পরিধি ছিলো। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮০-৮২ সালে তিনি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ে তিনি ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
আব্দুল জব্বার খানঃ ১৯১৬ সালে লৌহজং উপজেলার শদগাও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেণ। স্বর্ণপদক প্রাপ্ত আব্দুল জব্বার খান বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের পথিকৃৎ। তার নির্মিত মুখ ও মুখোশ এদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র।
মেঘনাথ সাহাঃ ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জের মেওজতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জগৎ বিখ্যাত পদার্থ ও অংক শাস্ত্রবিদ ১৯৩৪ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
রায় বাহাদুর শ্রীনাথ রায়ঃ এই জনপদের বিশিস্ট দানবীর সিরাজদিখান উপজেলার শেখর নগরের জমিদার ছিলেন। তিনি বহু জনহিতকর কাজ করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তার প্রতিষ্ঠিত দাতব্য চিকিৎসালয়টি উদ্ধোধন করেন লর্ড কারমাইকেল।
সিদ্ধার্থ শস্কর রায়ঃ ভারতের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ড. এফ কে এম মুনীমঃ বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তিনি সিরাজদিখান উপজেলার খিলগাও গ্রামে জন্মগহণ করেন।
ডঃ শেখ মুজিবর রহমানঃ দুইবার পিএইডি ডিগ্রিধারী রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের একসময়ের কৃতী অধ্যাপক এখন ইটালীতে বসবাস রত। তিনি শ্রীনগর উপজেলার আরমপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেণ।
আশুতোষ গাঙ্গুলীঃ উপমহাদেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও দাতা আশুতোষ গাঙ্গুলী মুন্সিগঞ্জের মানুষ। টংগীবাড়ী ধীপুর ইউনিয়নের রাউথভোগ গ্রামের তার পৈতৃক নিবাস। বাংলা ১২১৯ সালের ভাদ্র মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুন্সিগঞ্জের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হরগঙ্গা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দানশীল ব্যক্তি হিসেবে আজীবন জেলাবাসীর মনে আসীন হয়ে থাকবে।
মোহাম্মদ নাসির আলীঃ দেশের অন্যতম শিশু সাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী মুন্সিগঞ্জের সন্তান। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হলো- ইতালির জনক, গারিবল্ডি, একটি গোযেন্দা কুকুরের কাহিণী, আলীফ লায়লা গল্প ইত্যাদি। তিনি ছিলেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নওরোজ কিতাবিস্তান এর প্রতিষ্ঠাতা।
ড. আব্দুল মমিন চৌধুরীঃ শ্রীনগর উপজেলার দয়াহাটা মজিদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ইতিহাস সমিতি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের অন্যতম দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।
ড. মীজানুর রহমান শেলীঃ সিরাজদিখান উপজেলার কুসুমপুর গ্রামের কৃতী মানুষের জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করা ছাড়া ও বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাংলা ও ইংরেজি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন।
ড. হুমায়ুন আজাদঃ মুন্সিগঞ্জের রাঢ়ীখাল গ্রামে ১৯৪৭ সালে ২৮ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। প্রতিভাদীপ্ত এই ব্যাক্তিত্ব একাধারে কবি, ঔপনাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, ভাষা বিজ্ঞানী। বাংলা সাহিত্যের মধ্য গগনে তিনি এখন এক জ্বলন্ত নক্ষত্র।
ডা. আনায়ারুর রহমান খানঃ বিশিষ্ট পদার্থবিদ এই কৃতীপুরুষ মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি একজন গবেষক।
আলাউদ্দিন আলীঃ বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ীর বাশবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চলচ্চিত্রজগতের সংগে ও তিনি অবিচ্ছেদ্য ভাব জড়িত।
ব্রজেন দাসঃ উপমহাদের বিখ্যাত সাতারু। তিনি ছয়বার ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছেন। এই কৃতী সাতারু মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বৃটিশ সরকার তাকে চ্যানেল অব দি কিং সম্মান দেন ।
পদ্মলোচন ঘোষঃ পন্ডিত পদ্মলোচন ঘোষ মুন্সিগঞ্জের প্রাতঃস্মরণীয় সন্তান ১৯৩৯ সালের ৩ জুন মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বহু গ্রন্থ প্রণেতা এই পুরুষটি দানবীরও ছিলেন এবং মুন্সিগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
সৈয়দ মইনুল হোসেনঃ ঐতিহ্যবাহী জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর নক্সা প্রণয়ণনকারী এই কৃতী স্থাপতি ১৯৫৩ সালে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর ধামপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত ও বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক প্রাপ্ত এই কৃতী মানুষ অনেক গুলি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যের প্রণেতা।
নূরুল মোমেন খানঃ পুলিশ বিভাগ, বিদেশী দূতাবাস, পোর্ট ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এই কৃতী পুরুষ মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের ষোলঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ডাঃ এ কে এম রফিকুল্লাহঃ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা বিশেষজ্ঞ এই প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ১৯৩১ সালের ১ জানুয়ারি শ্রীনগ থানার সমাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী এই অধ্যাপক বিজ্ঞান জাদুঘরের পরিচালক পদেও অধিষ্টিত ছিলেন।
ডঃ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। দেশের বিশিষ্ট প্রবন্ধকার ও শিক্ষাবিদ বাম চেতনার প্রগতিবাদী এই ক্ষনজন্ম মুন্সিগঞ্জের অন্যতম কৃতী সন্তান। তিনি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এম এ রব মোল্লাঃ ১৯৩৬ সালে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার কালাঞ্চিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএচিডি করে আণবিক শক্তি কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আজাহারুল ইসলামঃ সাবেক সচিব ও সদস্য পরিকল্পনা কমিশন, শিক্ষা।
বশিরুল আলমঃ সাবেক সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
টেলিসামাদঃ চলচ্চিত্রের অন্যতম কমেডিয়ান অভিনেতা টেলিসামাদের জন্মগ্রহণ মুন্সিগঞ্জের সদরে। তিনি একজন গায়ক ও আর্ট কলেজ থেকে ডিগ্রি প্রাপ্ত চিত্রশিল্পী।
ডা. ফিরোজা আক্তারঃ এই গুণী প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী মুন্সিগঞ্জের সাত্রাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম বশির উদ্দিন খান। বশিরউদ্দিন খান বৃটিশ শাসনামলে একজন ডেপুটি ম্যাজিস্টেট ছিলেন। ডঃ ফিরোজা আক্তার বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনের নিউক্লিয়ার ও রেডিয়েশন বিভাগের প্রধান প্রকৌলী। পরমানু শক্তি শান্তি ও কল্যাণ কাজে ব্যবহার করার প্রকল্পে নিয়োজিত এই মহীয়সী সায়েন্টিফিক নানা সেমিনারে পৃথিবীর বহুদেশ সফর করেছেন।
মোঃ আসলাম ভূইয়াঃ মোঃ আসলাম ভূইয়া মুন্সিগঞ্জের কৃতী মানুষদের একজন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব হারুনুর রশীদ ভূইয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নে লেখাপড়া করা এই মানুষটি চট্রগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে তিনি দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ভারপ্রাপ্ত উপার্চায।
ডাঃ রশীদ ই মাহবুবঃ এফসিপি এস অধ্যাপক সার্জারী বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা। তিনি বিএমএ এর সভাপতি ছিলেন।
মরহুম হোসেন আলীঃ তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আলমপুর গ্রামে। তিনি অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থা থেকে নিজ প্রতিভা ও যোগ্যতা গুনে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় স্ট্যান্ড করেন এবং পরবর্তীতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রট হন।
ভারত উপমহাদেধের অন্যতম সেরা সাহিত্যিকদের অনেকে যেমন কবি জয়দেব গোবিন্দ দাস কবি শীধর দাস, দক্ষিনা মিত মজুমদার, কালীপ্রসন্ন ঘোষ, সুনির্মল বসু, চারু বন্দোপধ্যায় প্রমুখ মনিষী রা মুন্সিগঞ্জের অনাদিকালের গৌরব হয়ে আছেন।
এছাড়া বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী কফিল উদ্দিন চৌধুরী, রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী কোরবান আলী, রাজনীতিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক সচিব রুহুল কুদ্দুস, সচিব মাহে আলম, সাবেক রাস্ট্রদূত কমলউদ্দিন আহম্মদ, অতিরিক্ত যুগ্ম সচিব খলিলুর রহমান, প্রয়াত নূরুল ইসলাম সামস, যুগ্ম সচিব নূরুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব কাজী লুৎফর হক, অতিরিক্ত সচিব এ কে এম এ বি সিদ্দিক, ১ম সচিব বোর্ড অব রেভিনিউ জালালুদ্দিন আহমেদ, ভূমি সচিব কাজী হাবিবুল হক, রাষ্ট্রদূত কাজী হারুনর রশিদ, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ডাঃ এম এ রব মোল্লা, রাষ্ট্রদূত কাজী এ কামাল, টিভি প্রযোজক কাজী কাইয়ুম, নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মোহাইমিনূল ইসলাম, পুলিশের আইজি ও রাজনীতিবিদ মন্ত্রী, শামসুদ্দিন আহমেদ, উইং কমান্ডার (অবঃ) হামিদুল্লাহ খান, দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ, চলচ্চিত্রকার সালাউদ্দিন বাদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের মনোবিজ্ঞানি অধ্যাপক ডঃ সিরাজ খান , ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক আঃ রশিদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডাঃ এ কে এম আব্দুল আলীম, ড. এ কেএম ইকবাল হুসেইন, ড. জামাল খান মোহাম্মদ আলী মিয়া, মোহাম্মদ হামিদুর রহমান ড. সুলতান আহম্মদ , আশিকুর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ হারুন অর রশিদ, চলচ্চিত্র শিল্পী প্রয়াত নারায়ণ চক্রবর্তী , খান জয়নুল সিরাজ হায়দার, জিনাত, দোয়েল, সংগীত পরিচালক ধীরে আলী মিয়া, ছটুক আহমেদ, সংগীত শিল্পী শবনম মুশতারী পারভীন মুশতারী, ফেরদৌস ওয়াহিদ, নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান, অভিনেতা আল মনসুর, বাবুল আহমেদ, মোঃ শাহজাহান, চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল হক খান। মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) জয়নুল আবেদীন, সাতারু মোশারফ হোসেন। ব্যাস্কার এ,এম, আমিন আল হাদী, এ,এম জহুরুল হক চৌধূরী, শামসুল হক, চিকিৎাবিদ এ,কে,এন ইসলাম, এ,কে, মজিবুল হক চৌধুরী এ,কে, এম আমিনুল হক, আজহারুল হক চৌধুরী, ডাঃ নুরুল মোমেন খান (মিহির) ড. বদরুদ্দিন আহম্মদ আলহজ্ব হবিবর রহমান, শিল্পপতি, দানশীল ও সমাজসেবী, আসমা সিদ্দিকা, মহিলা সংগঠক ও সামাজকর্মী, হাজী রমান প্রমুখ। এছাড়া অজস্র সোনার ছেলে জন্ম দিয়েছে মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর জনপদ, যাদের কাছে দেশ ও জাতি নানাভাবে ঋণী।