১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | সন্ধ্যা ৭:৩৮
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
বিক্রমপুর জমিদার বাড়ির পাশে নাগলিঙ্গম
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৫ অক্টোবর, ২০২২, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

এই গাছটি সারা বাংলাদেশে আছে ৫০টিরও কম আর পুরো বিক্রমপুর অর্থাৎ মুন্সিগঞ্জে আছে মাত্র ১ টি। কি দর্শক বিশ্বাস হচ্ছে না? কিন্তু উইকিপিডিয়া দিচ্ছে এমন চোখধাধানো তথ্য।

এটি বিরল প্রজাতীর সুন্দর, সুগন্ধী ও ঔষধি উদ্ভিদ নাগলিঙ্গম। স্থানীয়দের ধারনা, অন্তত ১০০ বছর আগে প্রাচীন বিক্রমপুর অর্থাৎ বর্তমান মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুলের জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ির পাশে জমিদার সাহেব বাবু ইংল্যান্ড থেকে এই গাছটির বীজ এনে এখানে রোপন করেন।

বর্তমানে গাছটি অযত্নে আর অবহেলায় কোনরকমে টিকে আছে। এর আশপাশের জমিগুলোও দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

নাগলিঙ্গম গাছের শিকর, বাকল, পাতা, ফুল ও ফল থেকে ঔষধ তৈরি করা হয়। নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই গাছের পাতার নির্যাস। এই গাছ থেকে তৈরি ঔষধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজে দেয়। ম্যালেরিয়া, অশ্ব ও বাতব্যাথা নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহৃত হয়।

হিন্দুধর্মাবলম্বী ব্যক্তিরা শিব ও সর্প পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করেন। ভারতে নাগলিঙ্গমকে ‘শিব কামান’ নামে ডাকা হয়। বৌদ্ধদের মন্দিরেও এই ফুলের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারে বৌদ্ধ মন্দিরে এই গাছ বেশি দেখা যায়। আমাজন বনের সামান জনগোষ্ঠির কাছে এটি একটি প্রিয় খাবার। তাদের বিশ্বাস পুরুষত্ব বৃদ্ধিতে এই ফল বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকেই গাছটি ভারতীয় উপমহাদেশে একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

নাগলিঙ্গমের ফুল শরীরে গাঢ় গোলাপি আর হালকা হলুদ রঙের মিশ্রণে ছয়টি পাপড়ি মেলে যেন সাপের ফণার মতো তাকিয়ে থাকে। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

বাংলাদেশে নাগলিঙ্গম বেশ দুর্লভ। গোল জাম্বুরার মতো দেখতে এর ফলগুলো দেখলে অবাক হতে হয়।

এগুলো হাতির খুবই প্রিয় খাবার। এজন্য এর অন্য নাম হাতির জোলাপ গাছ। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

ফলগুলো কামানের গোলার মতো দেখতে বলেই ব্রিটিশরা এর নাম দিয়েছে ‘ক্যাননবল’। 

কথিত আছে, এই ফল খেলে মৃত্যুও হতে পারে। তবে এ কথার সত্যতা পাওয়া যায়না। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

পুরো বাংলাদেশে এই গাছটি ৫০টিরও কম রয়েছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, সারা বাংলাদেশে এই গাছটি আছে ৫০টিরও কম। আর বিক্রমপুর অর্থাৎ মুন্সিগঞ্জে যে এই নাগলিঙ্গম গাছটি আছে সেটি খুব কম মানুষই জানেন। এমনকি উইকিপিডিয়াতেও সেই তথ্য নেই।

বিরল প্রজাতির এই ফুলের সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর রায়সাহেব বাড়ি লোকনাথ বাবা মন্দির, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, টঙ্গী, শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট, গাজীপুরের বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট  বরিশালের বিএম কলেজ, ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, নওগাঁ জেলার হাট নওগাঁ ঈদগা মাঠ, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এণ্ড কলেজ, শাহ্ মখদুম কলেজ, রাজশাহী, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, অযাচক আশ্রম রহিমপুর, চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবন, কুমিল্লা এবং বিক্রমপুর অর্থাৎ মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে জমিদার সাহেব বাবুর দীঘির পাশে এই গাছটি রয়েছে।

ফেইসবুকে আমরা
ইউটিউবে আমরা
error: দুঃখিত!