১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৯:৪৩
বিক্রমপুরের প্রাচীন গ্রাম হলদিয়া
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, শেখ রাসেল ফখরুদ্দীন (আমার বিক্রমপুর)

বিক্রমপুরের একটি প্রাচীন গ্রাম হলদিয়া। বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় এই গ্রামটির অবস্থান।

বর্তমানে উপজেলার একটি ইউনিয়ন হলদিয়া। গ্রামের নাম হলদিয়া কিভাবে হয়েছে সঠিকভাবে তা বলা দুস্কর। গ্রামের নাম নিয়ে একাধিক মতবাদ আছে।

লোকমুখে শোনা যায় যে, এই গ্রামে এক সময় প্রচুর হলুদ উৎপন্ন হতো। হলুদ থেকে হলদিয়া’র উৎপত্তি।

আরেকটি মতে, এই গ্রামের হাটে বিয়ে বাড়ির গায়ে হলুদের জন্য বিভিন্ন দ্রব্যাদির সহজলভ্য প্রাপ্তিস্থান ছিলো। গায়ে হলুদের বাজার থেকে হলুদিয়ার উৎপত্তি হতে পারে।
এই মতবাতগুণো স্থানীয়দের। এগুলোর কোন ঐতিহাসিক সত্যতা নেই। স্থানীয়রা হলদিয়াকে হলুদিয়া বলে ও লিখে।

আমি বহুবার সুপ্রসিদ্ধ এই গ্রামটি পরিদর্শন করেছি। একদা পদ্মা নদী থেকে একটি খাল হলদিয়ার পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে যেত। এই খালটি হলদিয়া খাল নামে পরিচিত ছিলো।খালটি পদ্মা নদী থেকে ধানকুনিয়া, কনকসার, কোরহাটি, হলদিয়া, গোয়ালিমান্দা, দক্ষিণ পাইকশা, শ্রীনগর, ষোলঘর, হাসাড়া, রাজানগর প্রভৃতি গ্রামের মধ্য দিয়ে ধলেশ্বরীতে মিলিত হয়েছিলো।

কালক্রমে দখল-দূষণে খালটি বিলুপ্তপ্রায়। এই খাল থেকে আরেকটি শাখা খাল হলদিয়া গ্রামের উত্তর দিক দিয়ে নাগেরহাট, দক্ষিণ চারগাঁ, জৈনসার, সিলিমপুরসহ প্রভৃতি গ্রাম দিয়ে মধ্যপাড়া গ্রামের নিকট প্রসিদ্ধ ‘কালীগঙ্গা’ নদীর সাথে মিলিত হয়েছিলো। ‘কালীগঙ্গা’ নদী ‘পোড়াগঙ্গা’ নামেও পরিচিত।

বিক্রমপুরের ইতিহাস লেখক মূলচঁর গ্রামের বাসিন্দা যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত ‘বিক্রমপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থে এই কালীগঙ্গাকে পোড়াগঙ্গা লিখেছেন। যদিও স্থানীয়রা কালীগঙ্গা নদী ও পোড়াগঙ্গা নদীকে পৃথক বলেই জানে। শত বছর পূর্বে এই হলদিয়া গ্রাম বিশেষ বন্দর ও ব্যবসায়ীক ঘাটি ছিলো। এই গ্রামের তাতীদের কাপড়, লুঙ্গি, গামছা ও চাদর ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে ততৎকালীন সময়ে রপ্তানী হতো। হলদিয়া খালের পাড়ে বেদে সম্প্রদায় বসবাস করতো। একশত বিশ পঁচিশ বছর পূর্বে এই গ্রামে হৈতিষি সভা ও দূর্গা পাঠাগার ছিলো। বর্তমানে এগুলো বিলুপ্ত হয়েছে।

ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, এই গ্রামে প্রাপ্ত প্রাচীন দলিল দস্তাবেজ ঘেটে এটাই পরিস্কার হওয়া গেছে যে বিক্রমপুরের এই গ্রামে দাস বিক্রয় প্রমান পাওয়া যায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় হলদিয়ার কালীবাড়ি বেশ প্রসিদ্ধ ছিলো। এই গ্রামে ১২০ বছর পূর্বে একটি রজত মূর্তি পাওয়া গিয়েছিলো।

রজত মূর্তি সমন্ধে অন্য প্রবন্ধে বিশদভাবে আলোচনা করবো। ১০৭ বছর পূর্বে হলদিয়া গ্রামে রিরাট এক মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো। মেলায় ভারতবর্ষের ৪০০ থেকে প্রায় ৫০০ বাউলের আগমন ঘটেছিলো। দুই দিনব্যাপী এই মেলা তৎকালীন বিক্রমপুরের অন্যতম মেলা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো।

১২৫০-১২৫২ বঙ্গাব্দে এই গ্রামে চট্রোপাধ্যায় বংশের জনৈক এক নারী সহমৃতা হয়েছিলেন। ১৩১৩ বঙ্গাব্দে বর্ষার সময় অত্যাধিক পানি হওয়ার কারনে চাল’র দাম বৃদ্ধি পেলে হলদিয়া বন্দরে চাল লুট হয় এবং ১৩১৬ বঙ্গাব্দে বন্দরে রাজনৈতিক ডাকাতি হয়।

হলুদিয়া গ্রামে প্রচুর পরিমানে ধান, আলু,মরিচ, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজির প্রচুর আবাদ হয়। ক্রমাগত পদ্মার ভাংগনের কবলে পড়ে হলদিয়া বা হলুদিয়া গ্রামটি মানটিত্র থেকে হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে।

ছবি: আবদুল হালিম খান সাহেবের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত।

error: দুঃখিত!